শেষ নাটকীয়তায় মারিও গোটশের গোলে স্বপ্নের সমাধী হয়েছে আর্জেন্টিনার। শিরোপা হারালেও লিওনেল মেসিদের এই হারকে সম্মানের চোখে দেখছেন আর্জেন্টিনার জনগণ। ফাইনালের প্রথমার্ধে মেসিদের পারফরম্যান্স দেখে উল্লাসেই মেতে ছিল পুরো আর্জেন্টিনা। তবে কট্টর সমর্থকগোষ্ঠী ‘বারা ব্রাভাস’ ফাইনালের হারকে সহজে মেনে নিতে পারেনি। বুয়েন্স আয়ার্সে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। এতে প্রায় ৭০ জন আহত হয়। এর মধ্যে ১৫জন পুলিশ সদস্য। ঘটনায়
গ্রেফতার হয়েছে ৪০ জন। সোমবার এএফপির খবরে এ কথা জানানো হয়। অন্যদিকে ২৪ বছর পর শিরোপা জেতায় আনন্দের বন্যায় ভাসছে জার্মানি। জার্মানিজুড়ে রাতভর চলেছে আনন্দ-উল্লাস। আর আমেরিকা থেকে ইউরোপে প্রথমবারের মতো শিরোপা গেলেও জার্মানির সঙ্গে আনন্দে যোগ দিয়েছে ব্রাজিলও। আর্জেন্টিনার হারে সাম্বা নাচ নেচেছে ব্রাজিলীয়রা। হয়তো ফুটবলের চিরশত্র“ বলেই। আর্জেন্টিনা ফাইনালে হারের পর বুয়েন্স আয়ার্সে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। ম্যাচের আগেই হাজার হাজার আর্জেন্টাইন জড়ো হয়েছিলেন বুয়েন্স আয়ার্সের ঐতিহাসিক চত্বর ওবেলিস্কেয়। অতিরিক্ত সময়ে সব স্বপ্ন-খুন হল জার্মানির মারিও গোটশের গোলে! দলের এ হার মেনে নিতে পারেননি আর্জেন্টিনার অনেক সমর্থক। শুরু হয় সংঘর্ষ, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা। সংঘর্ষের মূল হোতা হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে আর্জেন্টিনার কট্টর সমর্থকগোষ্ঠী ‘বারা ব্রাভাস’কে। ম্যাচের পর মানুষের ভিড়ের মধ্যে দাঙ্গা পুলিশের উদ্দেশে ইট-পাথর নিক্ষেপ করতে থাকেন বারা ব্রাভাসের সদস্যরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে অনেক পরিবার, নারী, শিশু আতংকিত ছোটাছুটি শুরু করেন। কেউ কেউ দৌড়ে রেস্তোরাঁ, হোটেল লবিতে আশ্রয় নেন। এ সময় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। টিভির ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, ব্যাপক লুটপাটও হয়েছে এ সময়। হারের পর আর্জেন্টিনা সমর্থক, বিশেষ করে তরুণ সমর্থকরা ভেঙে পড়েছেন বেশি। প্রায় সবার চোখে জল টলমল। ২৭ বছর বয়সী নির্মাণকর্মী লিয়োন্দ্রো পারেদেস বললেন, ‘এখন পর্যন্ত বলা যায়, এটি অসাধারণ এক বিশ্বকাপ ছিল। ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে দাপটের সঙ্গে খেলেছি। চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। দলের জন্য আমরা গর্বিত। হয়তো প্রতিশোধ নিতে পারিনি। তবে মাঠে ১১ যোদ্ধা লড়েছে।’ এদিকে বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে মেতেছে জার্মানি। স্থানীয় সময় রাত নয়টা বাজার আগে থেকেই গোটা জার্মানি থমকে ছিল। বড় পর্দায় খেলা দেখতে রাস্তার ধার, পাবলিক ভিউ চত্বর শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত ভিড়ে ঠাসা ছিল। জার্মানিতে ঋতুর খাতায় গ্রীষ্মকাল। তবু আকাশে ছিল মেঘ, বৃষ্টি। আবহাওয়ায় ঠাণ্ডার আমেজ। এসবের মধ্যেই হ্যানোভারের ফাউস্ট সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের খোলা সমর্থন চত্বরে হাজির হয়েছি। বদলি খেলোয়াড় মারিও গোটশে বুক থেকে বল নামিয়ে অসাধারণ গোল করার সঙ্গে সঙ্গে পুরো জার্মানি যেন কাঁপছে। ফাউস্ট সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কয়েক হাজার মানুষ সবাই সবাইকে জড়িয়ে ধরে, উল্লাসে ফেটে পড়ছে। চিৎকার, বাঁশি আর ভুভুজেলার আওয়াজে কান পাতা দায়। তুমুল উল্লাসে হঠাৎ করেই সবাই কেমন যেন আÍহারা হয়ে অন্য রকম আচরণ করছে। কেউ বেঞ্চের উপরে ওঠে নাচছে। কেউ অবিরাম বাঁশি বাজাচ্ছে। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। অনন্য রাত। গভীর রাতে রাস্তা বন্ধ করে রাস্তাজুড়ে নাচছে অসংখ্য মানুষ। দুই পাশ দিয়ে অসংখ্য গাড়ি কালো, লাল, সোনালি পতাকা দুলিয়ে আর ভেঁপু বাজিয়ে ছুটছে। জার্মানিজুড়ে সোমবার ছিল কেবল আনন্দ আর আনন্দ। এদিকে নেইমার আর্জেন্টিনা ও মেসিকে সমর্থন দিলেও সেটা মেনে নিতে পারেনি ব্রাজিল। ফাইনালে তাই আর্জেন্টিনার হারের পর সাম্বা নাচ নেচেছে ব্রাজিলীয়রা।
No comments:
Post a Comment