Saturday, July 12, 2014

ডিজিটাল পাসপোর্ট পেতেও পদে পদে ভোগান্তি:যুগান্তর

ঢাকার নয়াপল্টনের বাসিন্দা শাহিন কবীর (ছদ্মনাম)। ৯ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নতুন পাসপোর্ট করতে ঢাকার আগারগাঁও আঞ্চলিক অফিসের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আগারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে পাসপোর্ট অফিসের দিকে হাঁটা শুরু করতেই পথ আটকায় একজন যুবক। তিনি বলেন, পাসপোর্টের কাজে গেলে বলেন, এখানেই সব কাজ করে দেব। শাহিন কবির না বলে সামনে আগান। এরপর দেখতে পান পাশাপাশি বেশ কয়েকটি দোকান। সব কটির সামনে
সাইনবোর্ড টানানো পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার দরকার নেই। এখানেই করুন পাসপোর্ট। আর একটু সামনে যেতেই একটি দোকান থেকে একজন তাকে বলে, ওই দিকে হয়রানি। এখানে করেন। এবার কৌতূহলবশত পাসপোর্ট অফিসে না গিয়ে এখানে পাসপোর্ট করলে কত টাকা লাগবে জানতে চান শাহিন কবীর। জবাবে ওই লোকটি বলে, জরুরি ৯ হাজার, এক সপ্তাহের মধ্যে পাবেন। সাধারণ পাসপোর্ট ৭ হাজার, ১৫ দিনের মধ্যে পাবেন। লোকটি আরও বলে, অতি আর্জেন্ট ১২ হাজার টাকা। তিন দিনের মধ্যে পাবেন। কোনো ভেরিফিকেশন (পুলিশের তদন্ত) হবে না। এরপর পাসপোর্ট অফিসের সামনে যান শাহিন কবীর। অফিসের প্রধান ফটক ঘেঁষে দাঁড়ানো আছেন কয়েকজন মহিলাসহ ১৫-১৬ জন লোক। আরও অর্ধশতাধিক লোক চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে গেলে বা ফরম নিয়ে বাইরে এলেই অপেক্ষমাণ লোকগুলোর কেউ কেউ এগিয়ে আসেন, জিজ্ঞাসা করেন হেল্প লাগব নাকি, ফরম লাগলে বলেন, পূরণ না করতে পারলে দেন করে দেই ইত্যাদি কথাবার্তা। দালালদের খপ্পর পেরিয়ে পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে প্রবেশ করেন তিনি। সেখানে গিয়ে তথ্যকেন্দ্র খুঁজে বের করেন। তবে মানুষের চাপে একমাত্র তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে ব্যর্থ হোন। এবার এক আনসার সদস্যের কাছে নতুন পাসপোর্ট করার ব্যাপারে সহযোগিতা চান শাহিন কবীর। ওই আনসার সদস্য তাকে দালাল দেখিয়ে দেন। ৩১ জুন ওপরের কথাগুলো যুগান্তরের কাছে বলছিলেন শাহিন কবীর। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট পেতে পদে পদে ভোগান্তির বিশদ বর্ণনা দেন তিনি। পরবর্তীকালে যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানেও মিলেছে শাহিন কবীরের ভোগান্তির বর্ণনার সত্যতা। রাজধানীর তিনটি পাসপোর্ট অফিসসহ বিভিন্ন জেলার পাসপোর্ট অফিসে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে এসে শাহিন কবীরের মতো চরম দুর্ভোগ আর হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আবেদনের প্রক্রিয়া এনালগ থেকে ডিজিটাল (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) হলেও দুর্ভোগ রয়ে গেছে আগের মতোই। পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়াটি অনেক জটিল ও দীর্ঘ হওয়ায় অনেককে বাধ্য হয়ে দালালদের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। আর আবেদন সম্পন্ন করার পর ভেরিফিকেশনের নামে পুলিশের বিশেষ শাখা এসবির ঘুষ বাণিজ্যের শিকার হচ্ছে প্রায় সবাই। আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে সরেজমিন দেখা যায়, দালালদের একটি চক্র পাসপোর্ট অফিসের সামনে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের অভিযোগ- পাসপোর্ট অফিসে দায়িত্ব পালনরত আনসার সদস্য, পুলিশ ও একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশে দালালরা কাজ করছেন। ফলে দালালদের মাধ্যমে আবেদন না করলে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে গ্রাহকদের। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে টাকা জমা দেয়ার পদ্ধতি চালু হয়েছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগ অনেকটা কমে আসবে। তাদের মতে, পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া খুবই সহজ। তবে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে পরিমাণে গ্রাহক অনেক বেশি হওয়ায় আবেদন করতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আগারগাঁও আঞ্চলিক অফিসে পাসপোর্ট করতে আসা মোঃ সাদ্দাম নামের এমনই একজনের সঙ্গে। সাভারের আশুলিয়া থেকে আসা সাদ্দাম জানান, সাধারণ পাসপোর্টের জন্য এক দালালকে তিনি সাত হাজার টাকা দিয়েছেন। এরপর দালালই সব কাজ করে দিয়েছে। দালালই পাসপোর্ট তার বাসায় পৌঁছে দেবে বলে জানান তিনি। অথচ সরকারি নিয়মে সাধারণ পাসপোর্ট করতে লাগে তিন হাজার টাকা। আর জরুরি পাসপোর্ট করতে ছয় হাজার টাকা। জানতে চাইলে ব্যাটালিয়ন আনসার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের ইনচার্জ লেন্স নায়েক তায়েজ উদ্দিন বলেন, দালালদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। শেরেবাংলা নগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মুমিন বলেন, দালালদের ধরে কোর্টে চালান করার একদিনের মধ্যেই আবার বের হয়ে চলে আসে। ফলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। দালালদের সঙ্গে পুলিশের কোনো সম্পর্ক থাকার প্রশ্নই ওঠে না বলে দাবি করেন তিনি। বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের আগারগাঁও জোনের পরিচালক মুনশী মুঈদ ইকরাম বলেন, বাইরের দালালদের ধরতে পুলিশ-র‌্যাব মাঝে মধ্যে অভিযান চালায়। এদের খপ্পরে খোদ পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও পড়তে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন করে ৩৩টি পাসপোর্ট অফিসের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এগুলো চালু হলে জেলা শহরগুলো থেকে মানুষ আর রাজধানীতে আসবে না। এতে করে মানুষের দুর্ভোগ অনেকটা কমে আসবে। দুর্ভোগ চরমে : পাসপোর্ট করতে এসে ভোগান্তির শিকার উল্লিখিত ঢাকার নয়াপল্টনের শাহিন কবীর যুগান্তরকে আরও জানান, আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের তথ্যকেন্দ্রের সাহায্য পেতে ব্যর্থ হয়ে পাসপোর্ট নিতে এসেছেন এমন একজনের সাহায্য নেন তিনি। এরপর ফরম সংগ্রহ করে বাসায় ফিরে আসেন। ফরম পূরণ ও তা সত্যায়িত করে পরদিন সকালে আবার পাসপোর্ট অফিসে যান। আগারগাঁও সোনালী ব্যাংক শাখায় টাকা জমা দিতে গিয়ে দাঁড়ান প্রায় ১শ মানুষের দীর্ঘ লাইনে। লাইন পেরিয়ে টাকা জমা দিতে দিতেই দুপুর হয়ে যায়। টাকা জমা হয়ে গেলে তিনি ছুটেন সেনাবাহিনীর একটি টিমের কাছে যারা আবেদন জমা দেয়ার আগে একটি সিরিয়াল দেন। সিরিয়াল পাওয়ার পর ১০৩ নম্বর কক্ষে গিয়ে আবেদন ফরমটি জমা দিতে হয় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে। এরপর ফরমটি আবেদিত করার জন্য তাকে পাঠানো হয় ৩০২ নম্বর কক্ষে। ৩০২ নম্বর কক্ষ থেকে আবেদিত করে দেয়া হয়। এবার ছবি তোলার পালা। এর প্রক্রিয়া সবচেয়ে জটিল ও দীর্ঘ বলে মন্তব্য করে শাহিন কবীর বলেন, প্রথমে তাকে পাসপোর্ট অফিসের ১০২ নম্বর কক্ষে লাইনে দাঁড়াতে হয় প্রাথমিক নাম এন্ট্রির জন্য। এখানে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই পার হয়ে যায় অফিস টাইম। ফলে পরদিন সকালে আবার এসে ১০২ নম্বর কক্ষে নাম এন্ট্রির জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়। প্রায় ঘন্টাখানেক অপেক্ষার পর নাম এন্ট্রি সম্পন্ন হলে এবার তাকে ৪০২ নম্বর কক্ষে যেতে বলা হয়। সেখানে গিয়ে কক্ষে প্রবেশের জন্য প্রথমে নাম এন্ট্রি করতে হয়। এজন্য লাইনে দাঁড়ান শাহিন কবীর। প্রায় ঘণ্টাদুয়েক অপেক্ষার পর তিনি নাম এন্ট্রি করে ৪০২ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করেন। সেখানে গিয়ে তাকে আবার লাইনে দাঁড়াতে হয় পাসপোর্টের পূর্ণাঙ্গ তথ্য এন্ট্রির জন্য। প্রায় ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য এন্ট্রি করেন তিনি। এরপর আবার লাইনে দাঁড়াতে হয় ছবি তোলার জন্য। এজন্য আরও দুই ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করতে হয় তাকে। আসে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ছবি তোলার সুযোগ। এভাবেই ঢাকায় অস্থায়ী ঠিকানা ও কুমিল্লায় স্থায়ী ঠিকানা দিয়ে পাসপোর্টের জন্য আবেদন সম্পন্ন করেন শাহিন কবীর। পাসপোর্ট আনতে গিয়েও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয় শাহিন কবীরকে। সকাল নয়টায় পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখেন বিশাল এক লাইন। লাইনে দাঁড়িয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে যায়। আগারগাঁও অফিসে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে আসা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহানের ভাই সুজন এই প্রতিবেদককে জানান, আমার বোনের আগেই এনালগ পাসপোর্ট করা ছিল। এখন ডিজিটাল (মেশিন রিডেবল) করতে এসেছি। প্রথমে আমরা যাত্রাবাড়ী শাখায় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করি। তবে ছবি তুলতে যাওয়ার পর বলে আপনার পাসপোর্ট আগারগাঁও শাখার অধীনে। এরপর এখানে এসে নতুন করে আবার সব করি। সরেজমিন দেখা গেছে, দালালের কাছে ধরনা না দিয়ে যারা নিজেই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন, তাদের এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন করতে হয়। তার ওপর কোন কক্ষ থেকে কোন কক্ষে যেতে হবে, কীভাবে কী করতে হবে প্রভৃতি বিষয়ে কোনো গাইডলাইন না থাকায় অহেতুক বাড়ছে হয়রানির মাত্রা। জানতে চাইলে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের এখানে মানুষের ধারণ ক্ষমতা সর্বোচ্চ দুই হাজার। কিন্তু প্রতিদিন আসে অন্তত পাঁচ হাজার। ফলে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। পাসপোর্ট করার প্রক্রিয়াটা কেন সহজ করা হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সরকারি সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আগারগাঁও জোনের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা ডিজিটাল পাসপোর্ট (এমআরপি) প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাসুদ রেজওয়ান বলেন, ১ জুলাই থেকে পাঁচটি ব্যাংকের মাধ্যমে অনলাইনে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবে আগ্রহীরা। এতে দুর্ভোগ অনেকটা কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। আবেদনের পর হয়রানি : উল্লিখিত শাহিন কবীর যুগান্তরকে আরও জানান, পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার পর ১৬ মার্চ বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তাকে ফোন দেয় পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) এসআই নাজিম উদ্দিন। চারটার মধ্যে নয়াপল্টন মডেল থানায় বেশকিছু কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলা হয়। শাহিন এই অল্প সময়ে কাগজপত্রসহ আসা সম্ভব না জানিয়ে সময় চান। উত্তরে পরদিন সকালে মালিবাগের এসবি অফিসে আসতে বলেন এসআই নাজিম। সময়মতো এসবি অফিসে যান শাহিন কবীর। তাকে একটি কক্ষে নিয়ে কাগজপত্র দেখা শুরু করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। কাগজপত্র ঠিক নেই জানিয়ে একপর্যায়ে চাওয়া হয় খরচপাতি। ওই পুলিশ সদস্যকে টাকা দিলে তিনি সবকিছু ঠিক আছে জানান। এরপর ২২ মার্চ সন্ধ্যার দিকে শাহিনকে ফোন দেয় কুমিল্লা জেলা এসবির কনস্টেবল রফিকুল ইসলাম। রফিকুল ভেরিফিকেশনের (তথ্য যাচাই) জন্য গ্রামের বাড়িতে যাবে না জানিয়ে খরচপাতি চান। ওই কনস্টেবল জানান, খরচাপাতির সবটাই নিয়ে নেবে ভেরিফিকেশনের দায়িত্বে থাকা এসআই আবদুর রহমান। তিনি কিছু পাবেন। টাকা না দিলে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ভেরিফিকেশনের পর রিপোর্ট পাঠানো হবে। এতে অনেক সময় লেগে যাবে। আর টাকা দিলে এখান থেকেই রিপোর্ট পাঠিয়ে দেয়া হবে। তিনি টাকা পাঠানোর জন্য শাহিনকে একটি বিকাশ নম্বর দেন। টাকা পাঠানোর পর সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় পরবর্তী সবকিছু। ঢাকার এসবি অফিস সরেজমিন ঘুরে পাওয়া গেছে শাহিনের মতো হয়রানির শিকার বিপুলসংখ্যক ভুক্তভোগী। ভেরিফিকশনের নামে সবার কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন এসবির সদস্যরা। মালিবাগ এসবি অফিসের সামনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসান আহমেদ এই প্রতিবেদককে বলেন, টাকা দিলে সহজে কাজ হয় তাই মানুষ টাকা দেয়। আমিও দিয়েছি। জানতে চাইলে এসবির পুলিশ সুপার (এসএস পাসপোর্ট অ্যান্ড ভেরিফিকেশন) নজরুল ইসলাম বলেন, একজন এসবি কর্মকর্তার আইনের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। যাত্রাবাড়ী অফিসে জানালা দিয়ে আবেদন জমা! : রাজধানীর তিনটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের মধ্যে কদমতলী থানাধীন রায়েরবাগে অবস্থিত যাত্রাবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। সরেজমিন নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা লক্ষ্য করেন এই প্রতিবেদক। সকাল ১০টার দিকে পাসপোর্ট অফিসের সামনে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে পাসপোর্টের জন্য আবেদন ফরম জমা দিতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে একদল মানুষ। আর ছোট্ট ভবনটির ভেতরে আরও একটি লম্বা লাইন। পাসপোর্ট জমা নেয়া হচ্ছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। তবে পাশের বিল্ডিংয়ের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকজনকে দেখা গেল খুব দ্রুত জানালা দিয়ে পাসপোর্টের জন্য আবেদন ফরম জমা দিতে। পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে আসা বেশ কয়েকজন এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, দালালরা এভাবেই প্রতিদিন জানালা দিয়ে আবেদন জমা দেন। দালালদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পাসপোর্ট অফিসের লোকদের যোগসাজশ রয়েছে। কেউ দালাল না ধরে আবেদন করতে এলে তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। ৬ জুলাই পাসপোর্ট অফিসের সামনে কথা হয় মোঃ ফারুক হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, ৭ মে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন তিনি। ২৮ মে তাকে পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়ার কথা। তবে এখন পর্যন্ত পাসপোর্ট পাননি। একই ধরনের অভিযোগ করেন পাসপোর্ট নিতে আসা মোঃ সালমান হায়দার রাজিব, মোঃ নাজিম উদ্দিন আহমেদ, আল জুবায়ের শাওন, মোঃ শামসুল হক, নূরুন নাহার, মোঃ নাসির উদ্দিন ভূঁইয়া প্রমুখ। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে যাত্রাবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক একেএম আজহারুল ইসলাম বলেন, বিশেষ ঝামেলা ছাড়া আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট ডেলিভারি দিই। তিনি বলেন, পাসপোর্ট অফিসের পাশের বাড়িটি ব্যক্তিমালিকানাধীন। ফলে ওই বাড়ির জানালা দিয়ে কেউ কেউ পাসপোর্ট জমা দেয়ার চেষ্টা করলেও আমরা কিছু করতে পারছি না। দালালদের পুলিশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকায় তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে যাত্রাবাড়ী অঞ্চলের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট প্রকল্পের উপপরিচালক লে. কর্নেল মোঃ মাকসুদুল হক বলেন, এখানে কোনো অনিয়ম-ঘুষ নেই। বরং দেশের অন্যান্য অফিসের তুলনায় যাত্রাবাড়ী পাসপোর্ট অফিস একটা বেহেশত। আর কিছু কমু না। বাকিটা বুঝে নেবেন।

No comments:

Post a Comment