Tuesday, July 22, 2014

পরিশ্রমী তথ্যপ্রযুক্তিকর্মী:প্রথম অালো

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার সেন্টারভিল। বাড়ির ভূগর্ভস্থ অংশে ছোট্ট পরিসরের একটি কক্ষ। সেখানে পাঁচ বন্ধু মিলে চালু করলেন তথ্যপ্রযুক্তির সেবাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের নাম ডিজিটাল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম। সংক্ষেপে ডাইসিস। সেটা ১৯৯৪ সালের কথা। এখন সেই ডাইসিস আটটি দেশে খুলেছে ২৬টি কার্যালয়। বছরে আয় ৪০০ মিলিয়ন (৪০ কোটি) ডলারের বেশি। বাড়ির নিচের ছোট্ট পরিসর থেকে এমন বিশ্বময় হয়ে ওঠার নায়ক প্রকৌশলী মাহফুজ আহম
েদ। ডাইসিসের কাজ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যারের রক্ষণাবেক্ষণ ও হালনাগাদ করা, তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো দেখভাল করা এবং দরকার হলে সেখানে কর্মীও সরবরাহ করা। বর্তমানে মাহফুজ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ও ৮০ শতাংশের মালিক। তথ্যপ্রযুক্তি মানুষের জীবনে এনেছে স্বাচ্ছন্দ্য। একই সঙ্গে দিনে দিনে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও তথ্যপ্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। বিশ্বের সব বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানি তাদের পণ্য, সেবা এবং কর্মীদের খোঁজ রাখার জন্য ব্যবহার করেন নতুন নতুন হার্ডওয়্যার, নেটওয়ার্ক সিস্টেমস ও জটিল সফটওয়্যার। এসব অবকাঠামো এবং সফটওয়্যারের রক্ষণাবেক্ষণ ও হালনাগাদ করার কাজটি প্রতিষ্ঠানের নিজেদের লোক দিয়ে অনেক সময়ই কার্যকর রাখা সম্ভব হয় না। আর এখানেই কাজ করে মাহফুজের ডাইসিস। ডাইসিসের কর্মীরা অন্য প্রতিষ্ঠানের জটিল সফটওয়্যার দেখাশোনা, তাতে নতুন নতুন ফিচার যোগ করেন। বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান এক্সন মোবিল, মার্কিন গণমাধ্যম সংস্থা টার্নার ব্রডকাস্টিং, বহুজাতিক বিমান সংস্থা ডেল্টা এয়ারলাইনস ও ইউপিএসের মতো প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করে ডাইসিস। এগুলোর বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রের ফরচুন সাময়িকী প্রকাশিত বিশ্বের প্রথম ৫০০টি ধনী প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে। সম্প্রতি ডাইসিস ক্লাউড কম্পিউটিং সেবাও চালু করেছে। সরকারি কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ এবং শিক্ষিকা শামিম মনসুরের দুই সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় মাহফুজ। তাঁর বয়স যখন ছয় তখনই বাবা মারা যান। নানা সাদিক আহমেদ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে মাহফুজ সেন্ট যোসেফ স্কুল থেকে এসএসসি ও নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরশাদের স্বৈরশাসনের সময় টানা বন্ধ ও সেশনজটের কারণে নানা মাহফুজকে পাঠিয়ে দেন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয়ে। টেলিফোনে মাহফুজ প্রথম আলোকে জানান, বাংলাদেশের তুলনায় এখানকার শিক্ষাপদ্ধতি সহজ। কাজেই আমি খুবই ভালো করতে শুরু করলাম এবং তড়িৎ প্রকৌশলে সম্মানসহ স্নাতক হলাম। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী কর্মী (স্টুডেন্ট ওয়ার্কার) হিসেবে কাজ করার সুযোগে উপলব্ধি করি শৃঙ্খলা এবং কঠিন পরিশ্রমই যেকোনো কাজের সফল হওয়ার মূল মন্ত্র। ১৯৯৩ সালে স্নাতক পাস করার পরপরই মাহফুজ এক্সন মোবিল কোম্পানিতে সফটওয়্যারের মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগে যোগ দেন। সেখানে তিনি স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম লিখে ‘পাঁচজনের কাজ একজন দিয়ে করানোর’ সুযোগ তৈরি করেন। এর পরের বছরই মাহফুজ গড়ে তোলেন ডাইসিস। সকাল সাতটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত মবিলে চাকরি। তারপর গ্রাহকের কোম্পানিতে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ। ‘১৮ মাস ধরে, আমার স্ত্রীকে দেখেছি কেবল ঘুমিয়ে থাকার সময়’ বললেন মাহফুজ। যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা, ডালাস, বোস্টন ও ক্যালিফোর্নিয়া শহরে কার্যালয় চালুর পর থেকে তাঁর কোম্পানির আয়-উন্নতি বাড়তে থাকে, সঙ্গে গ্রাহকের সংখ্যাও। ছড়িয়ে পড়েন ব্রাজিল, হাঙ্গেরি, নেদারল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভারতে। ২০১০ সালে মাহফুজ সঙ্গীদের কাছ থেকে তাদের যাবতীয় শেয়ার কিনে একাই কোম্পানির মালিক হন। পরে তিনি একটি বিনিয়োগ কোম্পানির কাছে ২০ শতাংশ মালিকানা ছেড়ে দেন। গড়ে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কারণে বিশ্বখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং মাহফুজ আহমেদকে ২০১৩ সালের ‘এন্ট্রাপ্রেনিউর অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কারে ভূষিত করে। ২০১০ সালে ওয়াশিংটনের ৪০ বছরের কম বয়সী ৪০ জন সফল উদ্যোক্তার তালিকা ‘ফর্টি আন্ডার ফর্টি’তে স্থান পান তিনি। ওয়াশিংটন পোস্টসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর সাফল্যের কাহিনি প্রকাশিত হয়েছে। গত বছর মাহফুজ জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই ট্রাস্টি বোর্ডের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন। স্ত্রী সায়মা আহমেদ, দুই কন্যা সানজি ও আনুসকা এবং পুত্র আরেজকে নিয়ে মাহফুজ আহমেদের সংসার। মাহফুজের সাফল্যে খুশি তার মা শামিম মনসুর। প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ‘ছোটবেলা থেকে মাহফুজ খুব কর্তব্যনিষ্ঠ, পরিশ্রমী এবং উদ্যমী ছিল। ও নিজের কাজ নিজেই করতে ভালোবাসত, যা এখনো সে করে’ বললেন গরবিনী মা। বাংলাদেশে ডাইসিসের কার্যালয় চালুর ব্যাপারে আগ্রহ আছে মাহফুজের। এ জন্য একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র খোলার চেষ্টা করছেন তিনি। আমিই বাংলাদেশ নিয়ে পরামর্শ ও তথ্য যোগাযোগ: ab@prothom-alo.info

No comments:

Post a Comment