Wednesday, July 23, 2014

বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিও মিলবে:প্রথম অালো

বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ কিন্তু ক্যাডার পদ পাননি এমন প্রার্থীদের প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার পদের পাশাপাশি দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা পদেও নিয়োগের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এ জন্য নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালাও সংশোধন করা হয়েছে। সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) মনে করছে, এই সংশোধনের ফলে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে চাকরি পাওয়ার সংখ্যা এখন বাড়বে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি কর
্মকর্তা পদে নিয়োগের কাজটি করে সাংবিধানিক সংস্থা পিএসসি। এর মধ্যে ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য নিয়মিত বিসিএস পরীক্ষা নেওয়া হয়। আর নন-ক্যাডার পদগুলোর জন্য নেওয়া হয় আলাদা পরীক্ষা। কিন্তু প্রতিটি বিসিএস পরীক্ষায় আট থেকে ১০ হাজার প্রার্থী চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হলেও পদ শূন্যতার কারণে বেশির ভাগ প্রার্থীকেই ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করতে পারত না পিএসসি। এ কারণেই ২০১০ সালে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা করা হয়। ওই বিধিমালায় বলা হয়, চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে যাঁরা ক্যাডার পদ পাবেন না, পদ শূন্য থাকলে আবেদন এবং মেধাক্রমের ভিত্তিতে তাঁরা প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ পাবেন। ২৮তম বিসিএস থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য এবার বিধিমালা সংশোধন করা হলো। গত মাসেই এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর ফলে বিসিএস উত্তীর্ণরা এখন থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাও হতে পারবেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিসিএস পরীক্ষায় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে সাত থেকে আট হাজার প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। পদ কম থাকায় একটি বড় অংশকেই আমরা ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করতে পারি না। এ কারণেই প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের বিধিমালা করা হয়েছিল। এর ফলে প্রতিটি নিয়োগের জন্য আলাদা পরীক্ষা নিতে হতো না। সময় ও খরচ বাঁচত। অনেক প্রার্থী এই নিয়মে চাকরি পাচ্ছিলেন। সে কারণেই এবার দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা পদেও নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ তবে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা পদে নিয়োগে সবাই আগ্রহী হবেন কি না, তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় আছে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘কাউকে জোর করে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা বানানো হবে না। যাঁরা স্বেচ্ছায় আবেদন করবেন, তাঁদের মধ্য থেকেই নিয়োগ দেওয়া হবে।’ পিএসসির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা বলেন, নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালা জারি অত্যন্ত ইতিবাচক একটি কাজ ছিল। প্রত্যাশা ছিল, এটি করার পর মন্ত্রণালয়গুলো শূন্য পদে মেধাবী লোক নিয়োগে আগ্রহী হবে এবং পিএসসিতে চাহিদাপত্র পাঠাবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। বরং মন্ত্রণালয়গুলো বেশি চাহিদাপত্র না পাঠানোয় অধিকাংশ বিসিএস উত্তীর্ণ প্রার্থীকেই নিয়োগের সুপারিশ করা যায়নি। ওই বিধিমালা জারির উদ্দেশ্য খুব বেশি সফল হয়নি। পিএসসির ২০১০ থেকে ২০১৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২৮তম বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হলেও ক্যাডার না পাওয়া তিন হাজার প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ২৯৯ জন প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার পদে চাকরি পেয়েছেন। একইভাবে ২৯তম বিসিএস থেকে ১৯৩ জন, ৩০তম বিসিএস থেকে ৩৬৩ জন, ৩১তম বিসিএস থেকে ১২০ জন এবং ৩২তম বিসিএস থেকে মাত্র ৬৬ জন চাকরি পেয়েছেন। মূলত মন্ত্রণালয়গুলো লোক নিতে কম আগ্রহী হওয়ার কারণেই এটি ঘটেছে। পিএসসি মনে করছে, এবার দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার পদটিও বিধিমালায় যুক্ত করায় অনেক বেশি প্রার্থী চাকরি পাবেন। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান সা’দত হুসাইন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাবনায় ওই বিধিমালা করা হয়েছিল। কারণ, যাঁরা বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হন তাঁরা অনেক যোগ্য। কিন্তু শূন্য পদ নেই বলে তাঁরা চাকরি পান না। সে কারণেই আমরা ওই বিধিমালা করেছিলাম। তবে আমরা শুধু প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার মধ্যেই থেকেছিলাম।’ সা’দত হুসাইন জানান, তাঁর সময়েও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগের বিষয়টি আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কাউকে দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরির দিকে ঠেলে দেওয়াটা তখন তাঁদের কাছে নৈতিক বা মর্যাদাকর মনে হয়নি। তাই তখন দ্বিতীয় শ্রেণির পদটা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পিএসসির সাবেক এই চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘কেউ যদি স্বেচ্ছায় যেতে রাজি হন, করতে পারেন। তবে আমার পরামর্শ হলো, বিসিএস উত্তীর্ণদের দিয়ে প্রথম শ্রেণির শূন্য পদগুলো পূরণ করা হোক। মন্ত্রণালয়গুলোর উচিত আরও বেশি করে চাহিদা পাঠানো।’

No comments:

Post a Comment