Wednesday, July 23, 2014

বিএনপির নেতাকর্মীদের নজর এখন সৌদি আরবের দিকে:যুগান্তর

বিএনপি নেতাকর্মীদের নজর এখন সৌদি আরবের দিকে। দলের সব স্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন প্রধান আলোচনা সৌদি আরব প্রসঙ্গ। কারণ ওই দেশে বসেই চূড়ান্ত হচ্ছে বিএনপির ভবিষ্যৎ সরকারবিরোধী আন্দোলনের রোডম্যাপ, দল পুনর্গঠনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। শুধু বিএনপি নয়, ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপিদের বক্তব্যেও ঘুরেফিরে আসছে সৌদি আরবের নাম। ওখানে বসে কাসিম বাজার কুঠির ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। বলতে গেলে
গত কয়েকদিনে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সৌদি আরব গুরুত্বের সঙ্গে স্থান করে নিয়েছে। এর কারণ ওমরাহ পালনের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তার বড় ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্তমানে সৌদি আরব অবস্থান করছেন। দীর্ঘদিন পর মা-ছেলের সাক্ষাতের বিষয়টি ধর্মীয় গণ্ডি পেরিয়ে রাজনৈতিক গুরুত্বই পেয়েছে বেশি। বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, দলের চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সৌদি সফরকে তারা বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। মা-ছেলের ঐকমত্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তারা। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ঈদের পর সরকারবিরোধী আন্দোলনের কৌশল, দল পুনর্গঠনসহ ভবিষ্যৎ করণীয়। সৌদিতেই চূড়ান্ত হতে পারে যুবদল ও ছাত্রদলের নতুন কমিটি। ঈদের পরপরই ঘোষণা করা হতে পারে এসব কমিটি। এছাড়া বিগত আন্দোলনে যেসব নেতা নিষ্ক্রিয় ছিল তাদের ব্যাপারেও সতর্কবার্তা আসতে পারে বলে মনে করছেন তারা। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গেছেন। দীর্ঘদিন পর তাদের সাক্ষাৎ হয়েছে। পারিবারিক আলোচনার মধ্যে রাজনৈতিক নানা বিষয় নিয়েও তাদের মধ্যে আলোচনা হতে পারে। এতে দোষের কিছু নেই। তিনি বলেন, তারেক রহমান দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। ভবিষ্যতে তিনিই দলের হাল ধরবেন। তার (তারেক) সুচিন্তিত মতামত বা দিকনির্দেশনা দলের কৌশল প্রণয়নে সহায়তা করবে। বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রত্যাশাও সে রকম। সৌদিতে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার খালেদা জিয়া ঢাকা থেকে ও তারেক রহমান লন্ডন থেকে যাত্রা করে দুবাইতে মিলিত হন এবং ভোররাতে মদিনায় পৌঁছান। দুজনই মদিনার দারুল ঈমান হোটেলে ওঠেন। গত দুদিন বেশ কয়েকবার তারা দুজনে একান্তে বৈঠক করেন। ওই সব বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি দল পুনর্গঠন এবং আন্দোলনের নতুন রোডম্যাপ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। আগামী কয়েকদিনে তাদের আরও কয়েকবার বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, তিনি (তারেক) লন্ডনে থাকলেও বাংলাদেশের রাজনীতির সব খবরই তার কাছে রয়েছে। বিশেষ করে দলের সাংগঠনিক অবস্থা, কোন নেতা কি করছেন তা আপ টু ডেট তার জানা আছে। লন্ডনে বসেই আগামী দিনের আন্দোলন, দল পুনর্গঠনসহ সার্বিক বিষয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছেন তারেক রহমান। বিগত আন্দোলনে কোন নেতার ভূমিকা কি ছিল তাও রয়েছে ওই খসড়ায়। আগামী দিনের আন্দোলনে কোন কোন নেতাকে স্ট্রাইকিং পজিশনে রাখা হবে সে পরামর্শও রয়েছে। যুবদল ও ছাত্রদলের নতুন কমিটির একটি সম্ভাব্য নেতৃত্বের তালিকাও রয়েছে ওই খসড়ায়। দলের চেয়ারপারসনের হাতে লিখিত ওই খসড়াটি তুলে দেয়া হবে। সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারির আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কৌশল ও করণীয় নিয়ে মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে পুরোপুরি শেয়ার করতে পারেননি তারেক রহমান। বিভিন্ন মাধ্যমে তার মতামতগুলো খালেদা জিয়াকে অবহিত করতেন। সরাসরি ফোনে মায়ের সঙ্গে রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করতেন না। কারণ খালেদা জিয়া এমনকি তার ঘনিষ্ঠজনের ফোনও সব সময় ‘ট্র্যাকিং’ হয়। তাই গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় ফোনে এড়িয়ে যেতেন। বিশেষ করে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিনের সঙ্গে তারেক রহমানের কথোপকথন প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে বেশ সতর্ক ছিলেন তারেক রহমান। তাই সরাসরি তারেকের পরামর্শ নিতে গত বছর লন্ডন যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন খালেদা জিয়া। পরে তা বাতিল করা হয়। সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর তারেক রহমান সরাসরি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সিদ্ধান্ত নেন। এরই অংশ হিসেবে গত মাসে মালয়েশিয়া সফরে আসেন তিনি। সেখান থেকে সিঙ্গাপুরেও যান তারেক। বাংলাদেশ থেকে ওই সময় খালেদা জিয়ার সিঙ্গাপুরে যাওয়ার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত সিঙ্গাপুর সফল বাতিল করেন খালেদা জিয়া। ওই সময় তারেক রহমানকে ওমরাহ পালনে সৌদি আরব আসতে বলেন তিনি। এদিকে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ওমরাহ পালনের বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছে সরকার। ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি এই সফর নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন। ওমরার নামে মা-ছেলে সৌদি বসে ষড়যন্ত্র করছেন বলেও অভিযোগ তাদের। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সোমবার এক আলোচনায় বলেন, ‘এখন আল্লাহর ঘরে ইবাদত করতে নয়, বরং চক্রান্ত করতে উনারা (খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান) জড়ো হন। এটি কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।’ সরকারের আরেক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘হুমকি শুনতে পাচ্ছি। মা-বেটা সৌদি আরব বসে কি করছেন? ওমরার নামে কাসিম বাজার কুঠির ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’  

No comments:

Post a Comment