Saturday, July 26, 2014

গাজায় অস্ত্রবিরতির তোড়জোড়:প্রথম অালো

গাজা উপত্যকায় পড়ছে বোমার পর বোমা। ঝরছে একের পর এক প্রাণ। ১৮ দিন ধরে চলছে এই অবস্থা। এই মানবিক বিপর্যয়ের রাশ টেনে ধরতে এত দিন কার্যকর তেমন কোনো তৎপরতা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু গাজায় জাতিসংঘের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরায়েলি গোলা আঘাত হানায় সবার কিছুটা হলেও হুঁশ ফিরেছে বলে মনে হচ্ছে; গতি পেয়েছে একটি কার্যকর অস্ত্রবিরতির প্রচেষ্টা। খবর এএফপির। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, জাতিসংঘের মহাসচিব বান
কি মুন ও ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড এক সপ্তাহের একটি মানবিক অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন। গতকালই বিষয়টি ইসরায়েলের নিরাপত্তাসংক্রান্ত গোপন মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওঠানোর কথা ছিল। এদিকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেত দাভুতোগলু পূর্বনির্ধারিত ফ্রান্স সফর বাতিল করে উড়ে গেছেন কাতারে। লক্ষ্য, ইসরায়েল ও গাজাশাসনকারী ইসলামপন্থী সংগঠন হামাসের মধ্যে একটি অস্ত্রবিরতির প্রচেষ্টায় সহায়তা করা। গাজা থেকে ইসরায়েলের ভেতরে রকেট নিক্ষেপ বন্ধ করার ধুয়া তুলে গত ৮ জুলাই ‘অপারেশন প্রটেক্টিভ এজ’ নামে অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী (আইডিএফ)। এই অভিযান প্রথম দিকে আকাশ ও নৌপথ থেকে বোমা নিক্ষেপ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও গত ১৭ জুলাই স্থল অভিযান শুরু হয়। গত ১৮ দিনের টানা সংঘাতে গাজায় এরই মধ্যে প্রাণহানির সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়েছে। উদ্বাস্তু হয়েছে এক লাখের বেশি ফিলিস্তিনি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার গাজায় জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে ইসরায়েলি গোলার আঘাতে অন্তত ১৬ জনের প্রাণহানি ও দেড় শতাধিক লোক আহত হয়। চলমান সংঘাতে বাড়িঘর ছাড়া হওয়া কিছু গাজাবাসী ওই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনিরা যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন জাতিসংঘের একজন কর্মীও। জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, তিনি এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ‘হতভম্ব’। এ ঘটনা সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছে, ‘এখনই হত্যাকাণ্ড থামাতে হবে’। আরব ও পশ্চিমা কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, মিসরের কায়রোতে অবস্থানরত বান কি মুন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরি এবং ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হ্যামন্ড গত বৃহস্পতিবার গাজায় অস্ত্রবিরতির প্রচেষ্টা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটান। মার্কিন নেতৃত্বাধীন এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এক সপ্তাহের জন্য একটি মানবিক অস্ত্রবিরতি শুরু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাব গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসকে মুখ রক্ষার একটা সুযোগ করে দেবে। এর আগে গাজায় ইসরায়েলি স্থল হামলা শুরুর আগে মিসরের মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল তারা। পরে তারা জানিয়েছিল, ইসরায়েল গাজার অবরোধ তুলে নিলে তারা অস্ত্রবিরতির বিষয়টি বিবেচনা করবে। আপাতত একটি মানবিক অস্ত্রবিরতির ব্যাপারে হামাসকে রাজি করাতে কাজ করে যাচ্ছে তুরস্ক ও কাতার। এই দেশ দুটিই মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে হামাসের বড় সমর্থক। তুরস্কের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাভুতোগলু বৃহস্পতিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন। পরে তিনি পৃথকভাবে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। পশ্চিমা ও ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মানবিক অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব গৃহীত হলে তারপর ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিরা কায়রোতে যাবেন। এরপর শুরু হবে সরাসরি আলোচনা। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত যেভাবে কাজ চলছে, সে অনুযায়ী সাত দিনের জন্য একটি মানবিক অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করা হতে পারে। আর অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে ইসরায়েলি বেতারকেন্দ্রের খবরে বলা হয়, ‘আমেরিকান প্রস্তাবটি হামাস মানলে, সেটাকে ইসরায়েলও মানতে পারে।’

No comments:

Post a Comment