Wednesday, July 16, 2014

ঈদ সামনে রেখে ভাঙাচোরা লঞ্চে চলছে জোড়াতালি:প্রথম অালো

পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে প্রতিবছরের মতো এবারও ঢাকার কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন ডকইয়ার্ডে পুরোনো ও ভাঙাচোরা লঞ্চ রং করার কাজ চলছে। চলছে দায়সারা ও জোড়াতালির মেরামত। এরই মধ্যে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও লঞ্চমালিকেরা। অভিযোগ উঠেছে, ঈদে ঘরমুখী মানুষের চাপ সামাল দিতে কোনো কোনো অসাধু লঞ্চমালিক চলাচ
লের অনুপযোগী বেশ কিছু লঞ্চ সংস্কার করছেন। কেরানীগঞ্জের তেলঘাট থেকে মীরেরবাগ পর্যন্ত প্রায় ৩০টি ডকইয়ার্ড রয়েছে। এর মধ্যে গত রোববার প্রায় নয়টি ডকইয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ সামনে রেখে অনেক মালিক দুই মাস আগে লঞ্চ ডকইয়ার্ডে ওঠানোর বায়না দিয়ে রেখেছেন। প্রতিটি ডকইয়ার্ডেই বিভিন্ন নৌযান তৈরি, সংস্কার ও রঙের কাজ চলছে। এর মধ্যে অধিকাংশ ডকইয়ার্ডেই চলছে পুরোনো লঞ্চে রং ও মেরামতের কাজ। তেলঘাট এলাকার শরিফুল্লাহ ডকইয়ার্ডে ‘দীপরাজ-৪’, সাত্তার খান ডকইয়ার্ডে ‘নিউসান’, চর খেজুরবাগ এলাকার রহমত উল্লা ডকইয়ার্ডে ‘রাজদূত-৭’, রহমান মিয়ার ডকইয়ার্ডে ‘এমভি প্রিন্স আওলাদ’ ও ‘বোগদাদিয়া-১’ এবং চর কালীগঞ্জ অগ্রগতি ডকইয়ার্ড অ্যান্ড শিপবিল্ডার্সে ‘পারাবত-১০’, ‘সেনার তরী-২’ ও ‘ময়ূর-২’ নামের তিনটি লঞ্চের মেরামতকাজ চলছে। ওই লঞ্চগুলো তিনতলা। এ ছাড়া একতলার অনেক লঞ্চেও চলছে মেরামতকাজ। নিউসান লঞ্চের সংস্কারকর্মী মো. শাহিন বলেন, ‘১৫ দিন ধইরা ঘষামাজার কাজ করতাছি। মালিক কইছে, আগামী ২২ রমজান রাইতে লঞ্চে টিপ (যাত্রী) লইবে। কিন্তু সব কাজ শেষ করতে আরও বেশি সময় লাগবে।’ পারাবত-১১ লঞ্চের ক্লার্ক বাবুল মিয়া জানান, ঈদ মৌসুমে সাধারণত লঞ্চগুলোকে রং-চুনাসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং সংস্কারের কাজ করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদরঘাট থেকে লঞ্চযোগে প্রতিদিন দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ১৫ থেকে ২০ হাজার লোক যাতায়াত করে। আর ঈদ মৌসুমে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় অর্ধলাখে। এ সময় অতিরিক্ত যাত্রীর লোভে কিছু অসাধু লঞ্চমালিক লক্কড়- ঝক্কড়, চলাচলে অনুপযোগী লঞ্চ সংস্কার ও রং করে চাকচিক্য করে তোলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডকইয়ার্ডের মালিক বলেন, ঈদ এলেই এলাকার সব ডকইয়ার্ডে মেরামত ও রং করার চাপ বাড়ে। অনেকে কয়েক বছর ধরে বসা লঞ্চও নিয়ে আসেন। অবশ্য এ অভিযোগ স্বীকার করেছেন ডকইয়ার্ডে ওঠানো একটি লঞ্চের মালিক। তিনি বলেন, দোতলার একটি লঞ্চ সংস্কার ও রং করতে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়। ঈদের আগে ওই লঞ্চটি নামাতে পারলে এক মৌসুমে পুরো খরচই উঠে আসে। কিন্তু অন্য সময় ওই টাকা ওঠানো অনেক কঠিন। তাই ঈদের মৌসুমেই সংস্কার করার সঠিক সময়। ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচলের সুযোগ দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের জাহাজ জরিপকারক প্রকৌশলী মির্জা সাইফুর রহমান। তিনি বলেন, লঞ্চ ও জাহাজের ফিটনেস পরীক্ষা করতে বিআইডব্লিউটিএ, কোস্টগার্ড, নৌ-নিরাপত্তা পুলিশের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের কাজ চলছে। কমিটি গঠনের পর এসব লঞ্চ ও জাহাজে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঈদে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে সেবা দিতে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে প্রস্তুত রয়েছে শতাধিক লঞ্চ ও জাহাজ। এ ছাড়া যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

No comments:

Post a Comment