কয়েক দিন ধরেই প্রচণ্ড গোলাগুলি চলছে। সার্বক্ষণিক আতঙ্কে গ্রাস করেছে সবাইকে। তার মধ্যেও শিশুরা খেলতে বেরিয়েছে। কারণ তারা শিশু। কতক্ষণ অন্ধকার ঘুপচিতে থাকতে পারে। তাই মায়ের বারণ না শুনে তারা বেরিয়েছিল। আর যায় কোথায়! শুরু হলো ইসরাইলের গোলাবর্ষণ। প্রথম গোলাটি যখন তাদের আশপাশে আঘাত হানল, তারা সবাই দৌড়াতে শুরু করেছিল। কিন্তু ইসরাইলের হাতে আছে অব্যর্থ অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র। নির্ভুল নিশানায় মাসুম শিশুগুলোর
ওপর আঘাত হানা হলো। চার চারটি শিশু নিহত হলো। আহত হলো আরো কয়েকজন। লাশ নিয়ে আহাজারি করছিলেন এক মা। ‘এই শিশুরাও কি রকেট নিক্ষেপ বা কালাশনিকভ দিয়ে গুলি করছিল? সারা বিশ্বে কেবল আমাদের শিশুরাই মৃত্যুর বিপদ মাথায় না নিয়ে খেলতেও যেতে পারে না। এর ফলে যা হচ্ছে তা হলো হামাসের সাথে আমাদের একাত্মতার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে।’ নিহত চার শিশুই পরস্পরের কাজিন। আহাদ ও জাকারিয়া বাকের বয়স ১০ বছর করে। আর অপর দুইজনেরই নাম মোহাম্মদ। তাদের একজনের বয়স ১১, অপরজনের ৯। বৃহস্পতিবারই তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ফিলিস্তিনির এক কর্মকর্তা জানান, নিহত চার শিশুই জেলে পরিবারের। শিশুগুলোকে কিভাবে গোলা আঘাত করল, তার বর্ণনা বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী দিয়েছেন। নিকটস্থ এক হোটেলে অবস্থানকারী সাংবাদিকরা আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন। আহমদ আবু হাসেরা নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ইসরাইলি গানবোট থেকে এই হামলাটি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘শিশুরা বিচে খেলছিল। তাদের সবার বয়স ছিল ১৫-র নিচে।’ তিনি বলেন, ‘প্রথম গোলাটি আঘাত হানার পর তারা সবাই দৌড়ে পালাচ্ছিল। কিন্তু আরেকটি গোলা এসে সবাইকে আঘাত করে। মনে হচ্ছিল, গোলাগুলো তাদের দিকে ধেয়ে আসছে।’ তিনি বলেন, এটা ঠাণ্ডা মাথায় গণহত্যা। তারা যদি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে এই শিশুদের চিহ্নিত করতে না পারে, সেটা লজ্জার কথা। মালয়েশিয়ান একটি সাহায্য সংস্থা থেকে আসা ত্রাণকর্মী আহমদ সাবেতও (২৪) জানান, পরিকল্পিতভাবে শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। তিনি জানান, ‘পুরো ঘটনাটি মর্মান্তিক। জেলে পরিবারের কয়েকটি ছেলে বিচে খেলছিল। তারা যে কনটেইনারটি নিয়ে খেলছিল, সেটিকে লক্ষ্য করে প্রথম গোলাটি নিক্ষেপ করা হয়েছিল। শিশুরা সাথে সাথে দৌড়াতে শুরু করে। তারা দৌড়ে ২০০ মিটার দূরে সরে গিয়েছিল। তখন দ্বিতীয় গোলাটি তাদের লক্ষ্য করেই ছোড়া হয়। সরাসরি তাদের ওপর আঘাত হানে সেটি। আমি নিশ্চিত, তাদের লক্ষ্য করেই গোলাটি ছোড়া হয়েছিল।’ ওই হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া হামাদ বাকের (১৩) ও তার কাজিন মোতায়েম (১১) মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। হামাদের বুকে বুলেট ঢুকে পড়েছে। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল সে। তার সাত বছরের ভাই ইউনুস এই বীভৎস দৃশ্যে উচ্চৈঃস্বরে কাঁদতেও যেন ভয় পাচ্ছিল। মোতায়েমের পেট আর মাথা দিয়ে রক্ত ঝরছিল। সূত্র : ডেইলি মেইল ও টেলিগ্রাফ।
No comments:
Post a Comment