Tuesday, July 22, 2014

রাতের বৃষ্টিতে দিনের মেরামত উধাও:প্রথম অালো

মাঝখানে একটি মাত্র রাত। ভারী বর্ষণও নয়, স্বাভাবিক বৃষ্টি। তাতেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আগের দিনের চেহারা পাল্টে গেল। জোড়াতালির মেরামত ভেসে গিয়ে বেরিয়ে এল বসন্তের দাগের মতো গর্তগুলো। ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে শুরু হওয়া রোববারের যাত্রা কারওয়ান বাজারে এসে শেষ হলো গতকাল সোমবার ইফতারের পর। ফিরতি যাত্রা শুরু হয়েছিল চট্টগ্রামের জুবিলি রোড থেকে, গতকাল সকাল ১০টায়। চট্টগ্রাম নগরের ভাঙাচোরা রাস্তার
ধকল কাটিয়ে কুমিরার গুল আহমদ জুট মিল এলাকায় এসে থমকে যেতে হলো। রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে যখন এই পথ দিয়ে চট্টগ্রামে গিয়েছিলাম, তখন রাস্তায় গর্ত দেখা যায়নি। তালি দেওয়া ছিল পাথর আর পিচ দিয়ে। রাত পেরোতেই সেখানে অনেকগুলো গর্ত। মাঝারি বৃষ্টির হামলাই এর কারণ। ভারী যানবাহনগুলো এসব গর্তের ওপর পড়ে চারদিকে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছিল। বেলা সাড়ে ১১টা। মাদামবিবির হাটে এসে দেখা যায়, চার লেনের সড়কের তিন লেনে ঢালাই করা। এক লেন পুরোনো পিচের পথ আছে, তারও ছাল-বাকল উঠে গেছে। পুরোনো ও নতুন ঢালাইয়ের পথের মাঝে আনুমানিক দুই ফুট চওড়া ও তিন ফুট গভীর নালা। প্রায় ১০০ মিটার লম্বা এই নালার মধ্যে বৃষ্টির পানি জমে আছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, রাতে সেখানে পাঁচটি যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়েছিল। বার আউলিয়া হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট মো. মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মাদামবিবির হাটে শিউলি পেট্রলপাম্পের সামনে পাঁচটি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে। তিনটি গাড়িকে হাইওয়ে পুলিশ ক্রেন দিয়ে টেনে উদ্ধার করে। সীতাকুণ্ডের ছোট দারোগার হাট, মাদামবিবির হাট, জলিল গেট ও বিএমএ গেট—এই চার স্থানের কিছু অংশ নতুন সড়ক ও পুরোনো দুই অংশই পিচের বদলে ঢালাই করা হচ্ছে। এই চারটি স্থানের তিনটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। কারণ ছোট দারোগার হাটে, মাদামবিবির হাট ও জলিল গেটে চার লেনের তিন লেন ঢালাই হয়ে গেছে। বাকি এক লেনের মাঝখানে নালার সৃষ্টি হয়েছে। এই নালার মধ্যে রাতে যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়ছে। বিএমএ গেটে চার লেনেরই ঢালাই শেষ। তবে দুই লেন এখনো খুলে দেওয়া হয়নি। ২৮ দিন পার হলে খোলা হবে বলে সওজের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় সীতাকুণ্ডের সদর এলাকায় এসে দেখা যায়, সড়কের বেহাল অংশের যেখানে রোববার আস্ত ইট ও বালু দিয়ে সংস্কার করা হয়েছিল, সেখান দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ। বৃষ্টি পড়ছিল আর শ্রমিকেরা রোববার বিছানো ইট তুলে নতুন করে বিছাচ্ছেন। সড়কের মাঝখানে ইট ও বালুর স্তূপ। প্রায় ১০০ মিটার এলাকার এই হাল। রোববার রাতের বৃষ্টিতে দিনের মেরামত ভেস্তে গেছে। ফলে যানবাহনগুলো বিকল্প পথ অর্থাৎ চার লেন প্রকল্পের অধীনে করা নতুন দুই লেন দিয়ে চলছিল। এত দিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এর ওপর দিয়ে গাড়ি চলতে দেয়নি। গতকাল অনন্যোপায় হয়ে সওজ এটি চালু করেছে। সীতাকুণ্ডের ধুমঘাট থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত ৬৬ কিলোমিটার পথ রয়েছে। ৪৩ কিলোমিটার চার লেনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করেছে ১৯ কিলোমিটার। বাকিটা দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাহের ব্রাদার্সের অধীনে। সড়কের দুরবস্থা শুরু হলে তাহের ব্রাদার্স তাদের করা নতুন সড়কের অনেক স্থান যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। কিন্তু সিনোহাইড্রো তা করতে রাজি হয়নি। কারণ, এখন ব্যবহারের পর তা ভেঙে গেলে মেরামতের দায় নিতে হবে। অবশ্য গতকাল সীতাকুণ্ড সদর এলাকার সবচেয়ে বেহাল অংশের পাশের দুই কিলোমিটার দিয়ে সিনোহাইড্রো যান চলাচল করতে দিচ্ছে। তবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অংশটুকু ভেঙে গেলে সরকার মেরামত করবে—এমন অনানুষ্ঠানিক শর্তে তারা রাজি হয়েছে। জানতে চাইলে চার লেন প্রকল্পের ওই অংশের ব্যবস্থাপক মাসুদ করিম প্রথম আলোকে বলেন, বেহাল অংশের মেরামত চলছে। ঠিক হয়ে যাবে। সিনোহাইড্রোর নতুন সড়ক ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই অংশটা অনেকটা বুঝে নেওয়ার মতো করেই নিতে বাধ্য হয়েছি। তা না হলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।’ বেলা দুইটার দিকে বারইয়ারহাট এলাকার ওজন স্টেশন পার হয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে স্থানে স্থানে ছোট ছোট গর্ত চোখে পড়ল। রোববার এই গর্তগুলো ভরাট ছিল। ফেনী থেকে চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজারের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সড়ক ঢেউ খেলানো। চার স্থানে লম্বালম্বি উঁচু, মাঝখানে নিচু। গাড়ির চালক রাজু বলেছিলেন, এর জন্য গাড়ি একদিকে টানে, স্টিয়ারিংয়ে নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন। বিকেল তিনটার দিকে চৌদ্দগ্রামের আমজাদা বাজার এলাকায় এমন ঢেউ খেলানো সড়কের পাশে একটি মালবাহী ট্রাককে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে দেখা গেল। চালক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, চট্টগ্রাম থেকে টেক্সটাইলের মালামাল নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। ভোরে অন্য গাড়িকে জায়গা করে দিতে ঢেউ খেলানো রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এই ঢেউ খেলানো পথে প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়তে হয় বলে তিনি জানান। এর সত্যতা পাওয়া মুখ থুবড়ে পড়া ট্রাকটি থেকে ১০০ গজ পশ্চিমে সড়কের পাশে গাড়ির ভাঙা কাচ দেখে। স্থানীয় অটোরিকশাচালক রফিকুল ইসলাম বললেন, এখানে সম্প্রতি দুর্ঘটনায় পড়েছিল একটি বাস। চৌদ্দগ্রাম থেকে দাউদকান্দি হয়ে ঢাকার পথে আর তেমন নতুন গর্ত দেখা যায়নি। যোগাযোগমন্ত্রী যা বলেছিলেন... ১১ জুলাই ২০১৪ মহাসড়কের সবকিছু ঠিক, এটা সত্য না। ইট–সুরকি খোয়ার মেরামত বৃষ্টি হলে উঠে যাচ্ছে। বাস আটকে যাচ্ছে। নারী–শিশুর কান্না আমাকে শুনতে হচ্ছে ২০ জুলাই ২০১৪ সারা দেশের সব রাস্তা যান চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। এ মুহূর্তে রাস্তা কোনো চিন্তার বিষয় নয়। যেটুকু সমস্যা রয়েছে, রাতের মধ্যেই তা শেষ হবে ২১ জুলাই ২০১৪ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সড়ক মেরামতের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ দুই-তিন দিনের মধ্যে শেষ হবে আমি প্রতিবাদ করব না: ওবায়দুল কাদের কিছু গণমাধ্যম সড়ক ও মহাসড়কের পুরোনো ছবি প্রকাশ করছে—এমন অভিযোগ করে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তিন বছর আগের রাস্তাঘাটের ছবি দিয়ে নিউজ করছে। সড়কের খানাখন্দ ও বেহাল অবস্থার পুরোনো ছবি প্রকাশ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আমি এর প্রতিবাদও করব না, বিচারও চাইব না, আল্লাহ তাদের হেদায়েত করবে।’ খবর বাসসের। যোগাযোগমন্ত্রী গতকাল রাজধানীর মগবাজার চৌরাস্তা এলাকায় সড়ক মেরামত ও উড়াল-সড়কের নির্মাণকাজ পরিদর্শনকালে এসব কথা বলেন। আমাদের ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সংস্কারকাজ পরিদর্শনকালে মন্ত্রী বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সড়ক মেরামতের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ দুই-তিন দিনের মধ্যে শেষ হবে।

No comments:

Post a Comment