ইসরাইল ও হামাস গাজায় ১২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। মানবিক কারণে উভয়পক্ষ শনিবার স্থানীয় সকাল ৮টা থেকে সাময়িক এই যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে যুদ্ধবিরতি শুরুর আগে গাজার দণিাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরে শনিবার ইসরাইলি বিমান হামলায় আট ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারটি শিশু রয়েছে। যুদ্ধবিরতি চলাকালে দিনের প্রথম কয়েক ঘণ্টায়ই গাজা সিটি ও আশপাশের বিভিন্ন শহরে ধ্বংসস্তূপ থেকে ৭৬টি লাশ উদ্ধ
ার করা হয় বলে গাজার জরুরি সেবা বিভাগের মুখপাত্র আশরাফ আল কাদরা গতকাল জানান। ফলে ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা নয় শ’ ছাড়িয়ে গেছে। সারা দিনে এই সংখ্যা আরো বাড়বে বলে উদ্ধারকারীরা আশঙ্কা করছেন। জাতিসঙ্ঘের হিসাবে নিহতদের ৮০ শতাংশই বেসামরিক লোক। এর মধ্যে ২০০ জনেরও বেশি শিশু। এ দিকে গাজায় হামাসের হামলায় আরো দুই ইসরাইলি সৈন্য নিহত হয়েছে। এ নিয়ে ইসরাইলের সরকারি হিসাবে ৩৭ সৈন্য নিহত হলো। খবর আল জাজিরা, বিবিসি, এএফপি ও প্রেসটিভির। স্থায়ী অস্ত্রবিরতির চেষ্টা জোরদার : মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি গতকাল ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি, ইতালি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তুরস্ক ও কাতারের কূটনীতিকদের সাথে গাজায় একটি স্থায়ী অস্ত্রবিরতির প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন। এর আগে মানবিক দিক বিবেচনায় জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব বান কি মুন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন। কারো প্রস্তাবেই সাড়া দেননি ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। শুক্রবার ইসরাইলি মন্ত্রিসভা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির দীর্ঘমেয়াদি একটি প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। প্রতিরা দফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কিন্তু পরে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ১২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার বিষয়টি শনিবার জন কেরিকে অবহিত করেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন। যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজা থেকে যাদের সরে যেতে বলা হয়েছে তাদের আবার ফিরে আসা উচিত হবে না। আর হামাস আঘাত করলেই পাল্টা আঘাত করা হবে। জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, ৪৭ বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ এবার চিরতরে বন্ধ করার সময় এসেছে। তিনি বলেন, আলোচনায় বসার জন্য একটি পথ খুঁজে বের করতেই হবে। আগে আরো দুইবার গাজা নিয়ে সংঘর্ষ চলার সময় যেভাবে শান্তি আলোচনা চলেছে এবারে আর সে রকম হলে চলবে না। চলমান এই যুদ্ধই আমাদের বলে দিচ্ছে যে, যুদ্ধ একেবারেই সমাপ্ত করে অবরুদ্ধ গাজাকে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে মুক্তি দেবার সময় এসেছে। তিনি বলেন, চলমান লড়াইয়ে এটা স্পষ্ট যে এর কোনো সামরিক সমাধান নেই। তবে গাজায় যা চলছে তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। ওই দিকে গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনের প্রতিবাদে পশ্চিমতীরে বিােভকালে ইসরাইলি নিরাপত্তা কর্মীদের সাথে ফিলিস্তিনিদের সংঘর্ষ হয়েছে। বেইত ফাজর এলাকায় এক কিশোর গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পাশের বেথেলহোমে নিরাপত্তারীদের ল্য করে পাথর ও পেট্রলবোমা নিপে করা হলে জবাবে রাবার বুলেট ছোড়ে ইসরাইলি নিরাপত্তারীরা। রামাল্লা, নাবলুস ও হেবরনের কাছে গ্রামেও বিােভ হয়েছে। গত কয়েক দিনের বিক্ষোভকালে ইসরাইলি সেনা ও ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের গুলিতে অন্তত ৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উল্লেখ্য, গাজা থেকে ইসরাইলে রকেট নিপে বন্ধের ধুয়া তুলে গত ৮ জুলাই ‘অপারেশন প্রটেক্টিভ এজ’ নামে অভিযান শুরু করে ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী (আইডিএফ)। এই অভিযান প্রথম দিকে আকাশ ও নৌপথ থেকে বোমা নিেেপর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও গত ১৭ জুলাই স্থল অভিযান শুরু হয়। গত ১৮ দিনের টানা সঙ্ঘাতে গাজায় এরই মধ্যে প্রাণহানির সংখ্যা ৯০০ ছাড়িয়েছে। উদ্বাস্তু হয়েছে এক লাখের বেশি ফিলিস্তিনি। আরো ২ ইসরাইলি সেনা নিহত : ইসরাইলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় হামাসের হাতে তাদের আরো দুই সৈন্য নিহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে। শনিবার ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, গাজায় নিহত দুই সৈন্যের একজনের নাম গাই বয়ল্যান্ড (২১) এবং অপর জনের নাম জানা যায়নি। তবে হামাস যোদ্ধারা বলেছে, তারা ৯০ জন ইসরাইলি সৈন্যকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে গত শুক্রবার এক দিনেই নিহত হয় ১০ সৈন্য। ইসরাইল স্থল হামলা জোরদার করার পর সৈন্য হতাহতের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে শুরু করে। হামাস বলেছে, গাজায় ইসরাইলি দখলদারিত্বের অবসান না হওয়া পর্যন্ত তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে । গাজার ফিলিস্তিনিদের সমর্থনের অঙ্গীকার নাসরুল্লাহর : লেবাননের শিয়া গেরিলা ও রাজনৈতিক সংগঠন হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ বলেছেন, তিনি ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গাজার ফিলিস্তিনিদের সমর্থন দিয়ে যাবেন। গত শুক্রবার আল কুদস দিবস পালন উপলক্ষে বৈরুতে এক সমাবেশে ইসরাইলকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, গাজায় হামলা অব্যাহত রাখা ইসরাইলের জন্য আত্মঘাতী কাজ হবে। তিনি অবিলম্বে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধের আহবান জানান।
No comments:
Post a Comment