Thursday, July 24, 2014

তোবা গ্রুপের শ্রমিকেরা বেতন–ভাতা পাচ্ছেন না:প্রথম অালো

ঈদের আগে তোবা গ্রুপের তিন হাজার শ্রমিকের বেতন-বোনাস পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তোবার ব্যবস্থাপনা পরিচালক কারাগারে থাকায় তিন মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। এই টাকা পরিশোধে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানসহ অন্য কর্মকর্তাদের কোনো উদ্যোগ নেই। এ অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানের ভবনের দুটি ফ্লোর বিক্রি করে হলেও শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নইলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে
শ্রম আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকেনতারা বলছেন, বেতন-ভাতা পরিশোধে প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য আছে। কিন্তু ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেনকে মুক্ত করতে বেতন-ভাতা বন্ধ করে একধরনের কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে মালিকপক্ষ। শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার দেলোয়ার হোসেনের সাময়িক জামিন হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তা হয়নি। এর পর থেকে শ্রমিকেরা ফুঁসে ওঠে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কারওয়ান বাজারের বিজিএমইএ ভবন ঘেরাও করে রাখেন তোবার এক হাজার ২০০ শ্রমিক। তোবা ফ্যাশনস, তোবা টেক্সটাইল, বুকশান গার্মেন্টস, তায়েব ডিজাইন ও মিতা ডিজাইন—এই পাঁচ কারখানায় কাজ করেন তাঁরা। পরিস্থিতি শান্ত করতে বিজিএমইএর নেতারা তাঁদের আগামী শনিবার দুই মাসের বেতন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বিকেলে তোবা গ্রুপের কয়েকজন কর্মকর্তা শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুর সঙ্গে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেন। জানতে চাইলে শ্রম প্রতিমন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত। তোবা গ্রুপের কর্মকর্তারা বলেছেন, দেলোয়ার হোসেনের জামিন না হলে তাঁরা টাকা দিতে পারবেন না। আমি বলেছি, এটা আদালতের বিষয়। শ্রমিকদের প্রাপ্য দিতেই হবে, যে করেই হোক। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানের ভবন বিক্রি করতে বলেছি। তাঁরা দুই দিন সময় চেয়েছেন। এ ব্যাপারে বিজিএমইকে তদারক করার কথা বলেছি।’ বিজিএমইএর নেতা আহাদ আনসারী বলেন, তোবা গ্রুপের একটি প্রিন্টিং প্রেস ও বুকশান গার্মেন্টসের ফ্লোরটি বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মে ও জুন মাসের বেতন বাবদ শ্রমিকেরা এক কোটি ৮০ লাখ টাকা পাবেন। তবে প্রতিমন্ত্রী জানান, এ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে শ্রমিকদের পাওয়া প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। কয়েকজন শ্রমিকনেতা বলেন, বিজিএমইএ শনিবার বেতন পাওয়ার কথা বললেও তাঁরা আশ্বস্ত হতে পারছেন না। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তোবা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ১১১ জন শ্রমিক নিহত ও দুই শতাধিক আহত হন। এ ঘটনায় করা মামলায় জামিন নিতে গেলে আদালত গত ৯ ফেব্রুয়ারি দেলোয়ার হোসেনকে কারগারে পাঠান। তাঁর স্ত্রী তোবার চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তারকে কারাগারে পাঠালেও পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। কষ্টে আছেন শ্রমিকেরা: গতকাল সকাল থেকেই বিজিএমইএ ভবনের সামনে অবস্থান নেন তোবা গ্রুপের শ্রমিকেরা। কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। এঁদের দুজন রহিমা বেগম ও রুহুল আমিন। স্বামী-স্ত্রী। দুজনেই কাজ করেন বুকশান গার্মেন্টেসে। দুজনের মাসিক আয় ১৫ হাজার টাকার মতো। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁদের চারজনের সংসার। কারখানার পাশে উত্তর বাড্ডাতেই থাকেন একটি ঘর ভাড়া নিয়ে। ঘর ভাড়া সব মিলিয়ে পাঁচ হাজার টাকা। তিন মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় কীভাবে চলছেন, জানতে চাইলে রুহুল বলেন, ‘দুই মাসের ঘর ভাড়া বাকি পড়েছে। এই মাসে চলার জন্য গ্রামের বাড়ি থেকে দুই হাজার টাকা ধার করে এনেছি।’ এই কারখানায় সুইং অপারেটর হিসেবে কাজ করেন রেশমা আক্তার। মাসে মজুরি পান ছয় হাজার ৩০০ টাকা। তিনি জানান, তাঁর স্বামী পিকআপ ভ্যান চালান। তাঁর আয় দিয়ে কোনো রকমে দিন চলছে। শ্রমিক রেশমা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মে, জুন ও চলতি জুলাই মাসের বেতন পাইনি। বোনাসের কোনো খবর নেই। মালিক জেল থেকে বের না হলে বেতন-ভাতা দেওয়া হবে না বলে কারখানার কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন।’

No comments:

Post a Comment