শর্তসাপেক্ষে আবারো দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। সম্ভাব্য এই শর্তের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে সম্পাদিত ‘এমওইউ’ (সমঝোতা স্মারক) প্রতিপালন, ব্যাংকগুলোর অটোমেশন, শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপি হতে নগদ আদায়, স্ট্রেস টেস্টিং, তারল্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইউনিট গঠনসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের কোর রিস্ক ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন পরি
পালন, পেন্ডিং মামলা ও অডিট আপত্তি নিষ্পত্তিকরণ, এনপিএলের (নন-পারফর্মিং লোন) পরিমাণ হ্রাস, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, ঋণ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা যথাযথভাবে পরিপালন এবং ডকুমেন্টেশন প্রভৃতি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন বা সম্ভাব্য করণীয় ও সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি সন্নিবেশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে প্রেরণ করতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাংক দু’টি বিজনেস পিলিসির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে লোন রিভিউ পলিসি, লিকুইডিটি, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ও ইন্টারন্যারনাল পলিসিসহ মোট ছয়টি নীতি তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে মতামতও পাওয়া গেছে। এখানে বলা হয়েছে, ইতঃপূর্বে প্রণীত বিজনেস প্লান ও নিজ নিজ ব্যাংক কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ব্যবসায়নীতির বাস্তবায়ন অগ্রগতি মাঠপর্যায়ে সরেজমিন পরিদর্শনের মাধ্যমে জানাতে হবে। এ ছাড়া চলমান ‘এমোটাইজেশন’ শিডিউল অুণœ রাখতে হবে। ব্যাংকিং বিভাগ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কর্তৃক স্ব স্ব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণকল্পে প্রস্তুতকৃত বিজনেস নীতির ও ইতঃপূর্বে প্রণীয়ত বিজনেজ প্লানের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জানা গেছে, শর্তসাপেক্ষে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংককে চার হাজার কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি পূরণে দেয়া হবে। গত বছরও এই চার ব্যাংককে একই খাতে দেয়া হয়েছিল চার হাজার ১০০ কোটি টাকা। পুনর্মূলধন খাতে সবচেয়ে বেশি অর্থ দেয়া হয়েছিল সোনালী ব্যাংককে। দেশে সবচেয়ে বড় এই ব্যাংকটি পেয়েছে এক হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। এর পরেই রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। এই ব্যাংকে দেয়া হয়েছিল এক হাজার ৮১ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংক পেয়েছে ৮১৪ কোটি টাকা এবং রূপালী পেয়েছে ২১০ কোটি টাকা। টাকা দেয়ার সময় বলা হয়েছিল, এ অর্থ ব্যয়ে প্রচলিত সব আর্থিক বিধিবিধান এবং অনুশাসনাবলি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চার ব্যাংকের পুনঃমূলধনীকরণ ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্য এ অর্থ ব্যয় করা যাবে না। পুনঃমূলধনীকরণ বাবদ সরকার কর্তৃক ছাড়কৃত অর্থ রাজস্ব ব্যয় হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। প্রাপ্ত অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতিক্রমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মূলধনী ব্যয় খাতে (অটোমেশন কার্যক্রম) ব্যবহার করতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারি চার ব্যাংক গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত রয়েছে তা অস্বীকার করা যাবে না। বিশেষ করে হলমার্ক কেলেঙ্কারির জন্য সোনালী ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে। এই একটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংকটির সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে। বিসমিল্লাহ গ্রুপ জনতা ব্যাংক থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসবের পেছনে ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা ছাড়া রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও জড়িত ছিলেন। কিন্তু এখন ব্যাংকগুলো অবস্থা ভালো নয়। বিশেষ করে সোনালী ব্যাংক তো সঙ্কটজনক অবস্থায় রয়েছে। সরকার অনেকটা বাধ্য হয়েই এ অর্থ প্রদান করতে হচ্ছে। উল্লেখ্য, হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর এই কোম্পানির কাছ থেকে কোনো অর্থ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
No comments:
Post a Comment