বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা এখনো জুন মাসের বেতন পাননি। কবে জুনের বেতন পেতে পারেন তারও কোনো আভাস নেই। প্রতি বছরই ঈদের আগে ও পরে এ ধরনের ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষকেরা। এ অবস্থার অবসানে কোনো পদক্ষেপ নেই এমপিও-র নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশির)। মাউশির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, নতুন অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দ না পাওয়া পর্যন্ত এ অনিশ্চয়তা কাটবে না।
নতুন অর্থবছরের বরাদ্দ পাওয়া না গেলে বেতন ও ঈদ বোনাসের ছাড় করানো যাচ্ছে না। কবে নাগাদ বরাদ্দ পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। ঈদের আগে বেতন ও বোনাসের অনিশ্চয়তায় শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বণ্টনকারী ব্যাংকের শাখাগুলোতে প্রায় প্রতিদিনই ধরনা দিতে হচ্ছে। শিক্ষকদের কেউ কেউ দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে বেতনের চেক বন্ধন রেখে চড়া সুদে বেতনের সমপরিমাণ টাকা ঋণ হিসেবে নিচ্ছেন। কোথাও কোথাও শিক্ষকেরা বেতনভাতার খোঁজ জানতে চাইলে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় হয়রানি ও বিরূপ আচরণের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা। সিরাজগঞ্জের শিক্ষক নেতা হাশিম তালুকদার গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রতি বছরই শিক্ষকেরা ঈদের আগে নানা হয়রানির মুখে পড়েন। এ অবস্থায় নিয়মিত ও চাহিদামতো বেতনও যদি সরকার না দেয় তা হলে তাদের কাছ থেকে কিভাবে পাঠদান ও ভালো ফলের প্রত্যাশা করা যাবে। মাউশির উপপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের জুনের বেতনের বিল অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। নতুন অর্থবছরের বরাদ্দ পাওয়া মাত্রই তা ব্যাংকের বণ্টনকারী শাখায় নির্দেশনা ও চেক হস্তান্তর করা হবে। অন্য দিকে বেতনের সরকারি অংশ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠন। সংগঠনগুলো ঈদের আগেই ২৫ শতাংশের পরিবর্তে সরকারি নিয়মে পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা প্রদানের দাবি জানিয়েছে। শিক্ষক নেতারা বলেন, শিক্ষকদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে সামাজিকভাবে হেয় করা হচ্ছে। পৃথক পৃথক বিবৃতিতে শিক্ষক সংগঠনগুলো এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুরূপ প্রবৃদ্ধিসহ বেতন, চিকিৎসা ও উৎসব ভাতা দাবি করেছে। শিক্ষক নেতারা বাসা ভাড়া ও নিয়মিত পদোন্নতি এবং সরকার নির্ধারিত যোগ্যতার শর্ত পূরণকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও প্রদানের দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বেসরকারি শিক্ষকদের একক বৃহৎ সংগঠন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো: সেলিম ভূঁইয়া গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, স্বল্প বেতনে চাকরি করা বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের রমজান মাস বিবেচনা করেও জুনের বেতন দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এটি শিক্ষকদের প্রতি সরকারের অবহেলারই প্রমাণ। শিক্ষকেরা সরকারের এমন আচরণের জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষক হয়রানি ও নির্যাতন করা হয়েছে। অন্য দিকে তিনি গতকাল শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের পক্ষে এক বিবৃতিতে, ঈদের আগেই শিক্ষকদের জুন ও জুলাই মাসের বেতন ও পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা প্রদানের জন্য আহ্বান জানান। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো: নজরুল ইসলাম রনি ও মহাসচিব মো: রিয়াজ উদ্দিন অন্য এক বিবৃতিতে বলেন, বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। সামান্য বেতনভুক শিক্ষক কর্মচারীরা সঠিক সময়ে বেতনভাতা না পেয়ে সীমাহীন দুর্দশায় আছেন। পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাসসহ চলতি জুলাই মাসের বেতনভাতা প্রদানের জোর দাবি জানান। ঈদ বোনাসও সংশয়ে : সরকারের নীতি-আদর্শের সমর্থক শিক্ষক সংগঠনগুলোর জোট জাতীয় শিক কর্মচারী ফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্য কাজী ফারুক আহমেদ গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, মাসের ১৩ তারিখ অতিবাহিত হওয়ার পরও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাতে হচ্ছে, এটি দুঃখজনক। ঈদের অন্তত এক সপ্তাহ আগে স্কুল-কলেজ, কারিগরি শিাপ্রতিষ্ঠান ও মাদরাসার শিক-কর্মচারীরা যাতে জুন-জুলাই মাসের বেতন ও উৎসব ভাতা হাতে পান তা নিশ্চিত করতে এবং এমপিওর জন্য যোগ্য নির্বাচিত, অপেমাণদের প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা প্রদানে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সরকার সমর্থক শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক এবং বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ মো: শাহজাহান আলম সাজু গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, শিক্ষকেরা যাতে নির্বিঘেœ ও আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে আসন্ন ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে পারেন তার জন্য কালবিলম্ব না করে বেতনভাতার চেক ব্যাংকগুলোতে হস্তান্তর করবেন এটাই দাবি শিক্ষকসমাজের।
No comments:
Post a Comment