Thursday, July 24, 2014

অটোমেশনের নামে ডিএসইতে হরিলুট:যুগান্তর

অটোমেশনের নামে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) টাকা হরিলুটের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৩ ধাপে প্রায় ১শ’ কোটি টাকার প্রকল্পে ইতিমধ্যে বেশকিছু অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোনো তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ছাড়াই পছন্দের লোক দিয়ে সাজানো হয়েছে কন্ট্রোল প্যানেল। এছাড়া ডিএসইর বর্তমান চাকরিজীবীরাই প্রজেক্ট রিসোর্সের নামে ৭৫ লাখ টাকা নিচ্ছে। এর মধ্যে ঈদের আগে প্রথম ধাপে কর্মকর্তাদের মধ্যে ২০ লাখ টাকা ভাগভাটোয়ারা হয়েছে। দ্
বিতীয় দফায় আরও ৫৫ লাখ হাতিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ডিএসই সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. স্বপন কুমার বালা যুগান্তরকে বলেন, কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত পরিশ্রমের জন্য এ টাকা দেয়া হচ্ছে। প্রকল্প : অটোমেটেড ট্রেডিং সিস্টেম রিনিউয়াল প্রজেক্ট নামে ডিএসইর এ প্রকল্পে তিন ধাপে ব্যয় হবে ১০০ কোটি টাকারও বেশি। এক্ষেত্রে ট্রেডিংয়ের প্রতিটি সদস্য হাউস থেকে টাকা নেয়া হবে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান নাসডাক এবং ফ্লাক্স ট্রেড এর সফটওয়্যার দেবে। প্রথম ধাপের ব্যয় : ৩০ কোটি টাকার বাজেট রয়েছে প্রকল্পের প্রথম ধাপে। এর মধ্যে সার্ভার নেটওয়ার্কের জন্য ১৩ কোটি ৩৭ লাখ, নেটওয়ার্ক ইক্যুপমেন্ট ৫ কোটি ৪২ লাখ, এএমসি নেটওয়ার্ক ৫৫ লাখ ৫০ হাজার, ডাটা সেন্টার ইক্যুপমেন্ট ১ কোটি ৬৮ লাখ, টেস্ট অ্যান্ড সাপোর্ট ৭৬ লাখ ৬০ হাজার, প্রশিক্ষণ ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, রিক্যুরিং ইস্যু ৯ লাখ ৯৮ হাজার, লিগ্যাল ইস্যু ১৫ লাখ এবং অন্যান্য খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এই টাকার বড় অংশই ডিএসইর কর্মকর্তাদের পকেটে যাচ্ছে। ভাগবাটোয়ারা : ৩০ কোটি টাকার প্রাথমিক বাজেটে প্রজেক্ট রিসোর্সে ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রথম কিস্তিতে ডিএসইর বর্তমান কর্মকর্তারা ২০ লাখ টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে। এর মধ্যে নিজাম উদ্দিন ৬ লাখ, আসাদুর রহমান ২ লাখ, তারেকুজ্জামান ২ লাখ, আশরাফ, ইমাম, হাসান ও রুহুল ১ লাখ করে, মোহাম্মদ উল্লাহ ৪০ হাজার এবং বাকি সবাই ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন। অবৈধ শেয়ার ব্যবসায় অভিযুক্ত খোন্দকার আসাদ ১০ লাখ টাকা এবং নিজাম উদ্দিন আরও ১০ লাখ টাকা নেয়ার তালিকায় রয়েছে দ্বিতীয় ধাপে। কন্ট্রোল : স্বাভাবিকভাবে অটোমেশনের কন্ট্রোল প্যানেলে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ রাখতে হয়। এক্ষেত্রে পদাধিকার বলেই কন্ট্রোল প্যানেলে ডিএসইর প্রধান আইটি কর্মকর্তাকে (সিটিও) রাখার কথা। কিন্তু নাসডাকের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে চুক্তিতে সিটিওকে কন্ট্রোল প্যানেলেই রাখা হয়নি। সম্প্রতি তিনি পদত্যাগ করেছেন। এক্ষেত্রে খালেদ ইব্রাহিম নামে একজনকে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হিসেবে ৬০ লাখ টাকা সম্মানী দিয়ে রাখা হয়েছে। অথচ তিনি তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট নন। এ বিষয়ে তার অভিজ্ঞতাও নেই। এ প্যানেলে এছাড়াও রয়েছেন খোন্দকার আসাদুল্লাহ, নিজাম উদ্দিন, আসাদুর রহমান এবং জীবন চন্দ্র দাসের নাম। এদের কারোরই তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। এ ব্যাপারে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. স্বপন কুমার বালা যুগান্তরকে বলেন, সবকিছুতে দোষ ধরলে হবে না। তিনি বলেন, আপনারা দেখবেন কাজটি নির্ধারিত সময়ে হল কিনা। কিভাবে হল এটি বড় কথা নয়। তবে যে সব কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত, তারা অফিস টাইমের পরেও কাজ করছেন। ফলে তাদের পারিশ্রমিক হিসেবে এ টাকা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বিষয়টি বোর্ডে পাস হয়েছে। কন্ট্রোল প্যানেলের ব্যাপারে তিনি বলেন, যোগ্য লোক দিয়েই প্যানেল সাজানো হয়েছে। এ ব্যাপারে ডিএসই বোর্ডের একজন সদস্য যুগান্তরকে বলেন, হিউম্যান রিসোর্সের নামে ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু ডিএসইর চাকরিজীবীদের এ টাকা নেয়ার কথা নয়। কারণ তারা বেতন পাচ্ছেন। এছাড়া আইটি কর্মকর্তারা আরও ২০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাতা পাচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণসহ আরও কিছু তহবিলে লুটপাটের আশংকা রয়েছে। বিষয়টি আমরা বোর্ডে আলোচনা করব।  

No comments:

Post a Comment