হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান পরিচালিত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের বরাদ্দ এবং ইকুইপমেন্ট কেনা ও এর ব্যবহারের আয় থেকে গত ৫ বছরে ৭৮০ কোটি টাকার বেশি লোপাট হয়েছে। এর মধ্যে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং খাতে বরাদ্দ থেকে সাড়ে ৩০০ কোটিরও বেশি অর্থ সরানো হয়েছে। বাকি টাকা যন্ত্রপাতি কেনা এবং এগুলো ব্যবহারের আয় থেকে দফায় দফায় লোপাট হয়েছে। বিমানের প্রাথমিক তদন্তে বিপুল অংকের টাকা সরানোর আভাস পাওয়া গেছে
। তদন্ত শেষে লোপাট টাকার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মহাজোট সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রীর জামাই ও বিমানের সংশ্লিষ্ট শাখার সাবেক জেনারেল ম্যানেজার আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে লোপাটে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। মন্ত্রীর জামাতা বিমান শ্রমিক লীগ সমর্থিত সিবিএ’র ৫০ দুর্নীতিবাজ নেতাকর্মী যোগসাজশে লুটপাট চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় গত মাসে সাবেক মন্ত্রীর জামাতা আমিনুলকে তার পদ থেকে সরিয়ে এমটি (মোটর ট্রান্সপোর্ট) বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বিমান কর্তৃপক্ষ জিইসি (গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট) বিভাগের সব বিষয়ে তদন্ত করে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক পরিচালক (গ্রাহক সেবা) জর্জ-রি-লিভার্সকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুরো বিভাগের লুটপাটের লোমহর্ষক চিত্র এবং এর সঙ্গে জড়িতদের নাম উঠে এসেছে। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, আমিনুল ও তার সহযোগী সিবিএ সিন্ডিকেট এতটাই প্রভাবশালী ছিল যে সাবেক বিমানমন্ত্রী জিএম কাদের একাধিকবার লিখিত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেও কিছুই করতে পারেননি। জিএম কাদের বিমান ম্যানেজমেন্টকে দেয়া এক চিঠিতে বলেছিলেন, সিবিএসহ কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতির কারণে শাহজালালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিমানের স্বার্থে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। দুর্নীতিবাজদের নাম উল্লেখ করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি ৩ মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েও পিছু হটেন। এ প্রসঙ্গে বিমান পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিন যুগান্তরকে জানান, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং খাতে গত ৬ বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দেয়া হলেও সিবিএ মিথ্যাচার করছে। বলছে মাসে ৬-৭ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, বরাদ্দের অধিকাংশ টাকাই লুটপাট হয়েছে। সে অনুযায়ী কাক্সিক্ষত মাত্রায় লাভ হয়নি। তিনি বলেন, কিছু বিষয়ে ইতিমধ্যে প্রাথমিক তদন্ত হয়েছে। আরও তদন্ত হবে। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেনারেল ম্যানেজার আমিনুল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তদন্তে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবে ম্যানেজমেন্ট। জানা গেছে, মন্ত্রী থাকার সময়ে শ্বশুরের প্রভাব খাটিয়ে আমিনুল শ্রমিক লীগ সমর্থিত সিবিএ নেতাদের নিয়ে বিমানের গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট (জিইসি) শাখায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। নামে-বেনামে কেনাকাটা, ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা আয় করে আমিনুল। তার বিরুদ্ধে টু শব্দ করারও সাহস ছিল না কারও। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও শ্বশুর ও সিবিএ নেতাদের প্রভাবে তাকে চাকরিচ্যুত করতে পারেনি বিমান ম্যানেজমেন্ট। উল্টো মোটর ট্রান্সপোর্ট (এমটি) শাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ শাখায় বদলি করতে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর জামাতা এবং জিইসি শাখার সাবেক জিএম আমিনুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বিদেশী যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ কেনা এবং বিদেশে প্রশিক্ষণের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা জর্জের সঙ্গে জিইসি শাখার কর্মকর্তাদের মতবিরোধ ছিল। মিথ্যা তদন্তের সুযোগে জর্জ আমাদের ওপর প্রতিশোধ নিয়েছে। তিনি বলেন, আমি অনেকদিন ধরে এই শাখায় কাজ করছি। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে গেলে কর্তৃপক্ষ আমাকে এখান থেকে অনেক আগেই সরিয়ে দিত। তিনি বলেন, আমি শ্বশুরের বা শ্রমিক সমর্থিত সিবিএ’র প্রভাব খাটিয়ে এখানে কিছুই করিনি। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি ব্যবহারের নামে লুটপাট : বিমানবন্দরে দেশী-বিদেশী সব ফ্লাইট ট্যাক্সিওয়েতে আসার পরপরই এয়ারক্র্যাফটের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর গ্রাউন্ড সাপোর্ট যন্ত্রপাতির মাধ্যমে চলে এয়ারক্র্যাফটের সব কার্যক্রম। বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় গ্রাউন্ড পাওয়ার ইউনিট (জিপিইউ) দিয়ে। এয়ারকন্ডিশন চলে এসি ভ্যানের মাধ্যমে। পানি সরবরাহ হয় ‘ওয়াটার কার্ড’, বাথরুমগুলোর মলমূত্র পরিষ্কার করতে ‘প্লাশ কার্ড’, উড়োজাহাজকে সরাতে ‘পুশ কার্ড’ এবং বন্ধ ইঞ্জিন পুনরায় চালুর জন্য ‘স্ট্রার্ট কার্ড’ ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া যাত্রী সেবার জন্য কন্ট্রোলার প্যালেস ট্রান্সপোর্টার (সিপিটি), সেফটি প্যাসেঞ্জার প্যালেস (সিপিএল), মালামাল পরিবহনের জন্য টো -ট্রাকটর, ফর্কলিফট, প্যাসেঞ্জার স্টেইপ (যাত্রী সিঁড়ি) ও বেল্ট লোডার যন্ত্র ব্যবহৃত হয়। জাহাজে জ্বালানি তেল সরবরাহ, ফ্লাইট ছাড়ার আগে প্রতিটি যন্ত্রপাতি চেক করা, জাহাজের মেরামত ও মেইনটেন্যান্স, বোর্ডিং কার্ড ইস্যু, লাগেজ আনা-নেয়া, ওজন করাসহ আনুষঙ্গিক সবকিছু গ্রাউন্ডহ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে করতে হয়। তদন্ত রিপোর্ট সূত্রে জানা গেছে, শাহজালালে প্রতিদিন গড়ে ৯৬ থেকে ১০০টি ফ্লাইট অবতরণ করে। এর মধ্যে ৮টি বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট। বাকি ৯২টি দেশী-বিদেশী এয়ারলাইন্সের। এছাড়া সপ্তাহে ১৫ থেকে ২০টি কার্গো ফ্লাইট নামে শাহজালালে। বিমানের হিসাব অনুযায়ী- একটি বিদেশী উজোড়াহাজে এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ সার্ভিস দিলে বিমানকে গ্রাউন্ড পাওয়ার ইউনিট (জিপিইউ) বাবদ ভাড়া দিতে হয় ১৪ হাজার ৭০০ টাকা। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজে গড়ে ৫-৬ ঘণ্টা ও কার্গো ফ্লাইটে গড়ে ৩-৪ ঘণ্টা জিপিইউ প্রয়োজন হয়। সে হিসাবে প্রতিদিন ৩৩০ ঘণ্টা হিসাবে এই জিপিইউ থেকে বিমানের আয় হওয়ার কথা মাসে ১৫ কোটি টাকা। কিন্তু বিমানের খাতাপত্রে এই যন্ত্র গড়ে ১০০ ঘণ্টার ওপরে ব্যবহারের নজির নেই। এতে শুধু এই একটি যন্ত্র থেকে বিমানের মাসে লোপাট হচ্ছে গড়ে ১০ কোটি টাকার ওপরে। এইভাবে এয়ারকন্ডিশন ইউনিট থেকে মাসে গড়ে আয় হওয়ার কথা দৈনিক ৫০০ ঘণ্টা হিসাবে ২৫ কোটি টাকা। কিন্তু আয় দেখানো হচ্ছে ১০ কোটি টাকা। প্যাসেঞ্জার বাস প্রতিটি ফ্লিটে একবার চললে মাসে বিমানের গড়ে আয় হওয়ার কথা ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা। কিন্তু এ খাতে আয় দেখানো হচ্ছে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা। এয়ারক্র্যাফট পুস টো-ট্রাকটর থেকে মাসে গড়ে আয় হয় ৫ কোটি টাকা। বাস্তবে হচ্ছে ১ থেকে দেড় কোটি টাকা। এয়ারক্র্যাফট টো-বার থেকে প্রতি মাসে হয় হওয়ার কথা ৬০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা। বাস্তবে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি আয় দেখানো হচ্ছে না। কার্গো লোডার থেকে মাসে আয় হওয়ার কথা দেড় থেকে ২ কোটি টাকা। দেখানো হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা। মেইন ডেক কার্গো লোডার থেকে মাসে আয় হওয়ার কথা ৫ কোটি থেকে সাড়ে ৫ কোটি টাকা। হচ্ছে ২ থেকে ৩ কোটি টাকা। প্রতি ঘণ্টায় ৯০ ডলার হিসাবে ওয়াটার সার্ভিস ট্রাক থেকে আয় হওয়ার কথা ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা। বাস্তবে হচ্ছে ২ থেকে ৩ কোটি টাকা। ঘণ্টায় একই দরে ট্রলি সার্ভিস ট্রাক থেকে মাসে ৭ থেকে সাড়ে ৭ কোটি আয় হওয়ার কথা থাকলেও দেখানো হচ্ছে ২-৩ কোটি টাকা। ঘণ্টায় ১০০ ডলার দরে কনভেয়র বেল্ট থেকে মাসে আয় হওয়ার কথা ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা। মাত্র ৫০ লাখ টাকা আয় দেখানো হচ্ছে। ঘণ্টায় ২০ ডলার হিসাবে কার্গো ব্যাগেজ কার্ট ট্রলি থেকে মাসে আয় হওয়ার কথা ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এই খাতে আয় দেখানো হয় গড়ে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। ঘণ্টায় ৯০ ডলার হিসাবে ফর্কলিফট থেকে মাসে আয় হওয়ার কথা ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা। কিন্তু গড়ে আয় দেখানো হচ্ছে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা। ৩ টনের ফর্কলিফট থেকেও মাসে ৩-৪ কোটি টাকা লুটপাট করা হচ্ছে। প্রতি ফ্লিটে ৭৫ ডলার হিসাবে ক্রু টান্সপোর্ট কোচ থেকে মাসে আয় হওয়ার কথা ২ কোটি টাকা। কিন্তু এই খাতেও মাসে ১ কোটি টাকার ওপর লুটপাট হচ্ছে। প্রতি ঘণ্টায় ২২০ ডলার হিসাবে ৪ টনি মোবাইল ক্রেন থেকে মাসে আয় হওয়ার কথা ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা। দেখানো হচ্ছে কম। এই খাত থেকে মাসে ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে। প্রতিবারে ২৬৪ ডলার হিসাবে প্রতি মাসে ইন্টেরিয়র এয়ারকন্ডিশনার ক্লিনিং থেকে আয় হওয়ার কথা ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা। কিন্তু এই খাত থেকেও প্রতি মাসে ২-৩ কোটি টাকার ওপরে লোপাট হচ্ছে। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারে যে বিল করা হচ্ছে তা মনিটরিং করার কেউ নেই। শীর্ষ কর্মকর্তা বলতে ছিলেন মন্ত্রীর জামাতা আমিনুল ইসলাম আর সিবিএ নেতারা। এর আগে একজন কর্মকর্তা এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। যন্ত্রপাতি ক্রয়ে লুটপাট : বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেক্টরের যন্ত্রপাতি কেনার নামেও বিপুল অংকের টাকা লোপাট হয়েছে। ক্রয় করা এসব যন্ত্রপাতি এতটাই নিুমানের ছিল যে দেশে আনার অল্প কিছুদিনের মধ্যে সেগুলো ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। ২০০৬ সাল থেকে মূলত বিমানের এই শাখার কেনাকাটার নামে পুকুর চুরি শুরু হয়। এর আগে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং শাখার জন্য যেসব যন্ত্রপাতি কেনা হতো সেগুলোর মান ছিল ভালো। ২০০৬ সাল থেকে কেনা কিছু মেশিনে কোটি টাকার পার্টস লাগিয়েও চালানো যাচ্ছে না। কিছু যন্ত্রপাতি আনার পর থেকেই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, জিইসি শাখার জন্য ৪টি এসি-ভ্যান, ৩টি মিনি ফর্কলিফট, ৬টি জিপিইউ ইউনিট (গ্রাউন্ড পাওয়ার ইউনিট), ৩টি স্ট্রার্ট কার্ড, ৬০টি ১০ ফুট বাই ১০ ফুটের এয়ার ট্রলি, ১০টি ২০ ফুট বাই ২০ ফুটের ট্রলিসহ বিপুল পরিমাণ যন্ত্রপাতি কেনা হলেও নিুমানের কারণে এগুলো দিয়ে কোনো কাজ করা যায়নি। ইকুইপমেন্টগুলোর অধিকাংশ ২-৩ মাস চলার পর নষ্ট হয়ে গেছে। পরবর্তীতে মেরামতের নামে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি এনেও সচল করা সম্ভব হয়নি। যন্ত্রপাতি মেরামতের নামে বিদেশ থেকে ইঞ্জিনিয়ার এনেও কোটি টাকার ভুয়া বিল-ভাউচার করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এমন কিছু মেশিন আনা হয়েছে যেগুলোর প্রস্ততকারী কোম্পানিই মার্কেট থেকে হাওয়া হয়ে গেছে। জানা গেছে, বিমানের অধিকাংশ নিুমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানটিন নাম এনজিজিএল। ২০০৬ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি বিমানের জিইসি ও বিএফসিসিতে (ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টার) যন্ত্রপাতি সরবরাহে মনোপলি ব্যবসা করে আসছে। শুরুতে প্রতিটি ৯৫ লাখ টাকা দামের দুটি এসিভ্যান সরবরাহের ২ মাস পর ভ্যান দুটি অচল হয়ে যায়। পরবর্তীতে দুটি এসিভ্যানের মেরামতে আরও ৫০-৬০ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি এনেও মেশিন দুটি চালু করা যায়নি। একটি এসিভ্যান চালু থাকলে বিমানের প্রতি ঘণ্টায় আয় হয় ১৬০ ডলার। বাজার মূল্য ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা হলেও এসিভ্যান দুটি কেনা হয়েছে দ্বিগুণ মূল্যে। দুটি এসিভ্যান নষ্ট হওয়ার পরও পরবর্তীতে ওই কোম্পানির কাছ থেকে ২টি মিনি ফর্কলিফট কেনা হয়। প্রতিটি ফর্কলিফট কেনায় খরচ হয়েছিল ৫০ লাখ টাকার ওপরে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে এসব ফর্কলিফটের বাজার দর আরও অনেক কম। এত বেশি টাকা দিয়ে কেনার পরও ব্যাটারিচালিত ফর্কলিফট দুটি ২ মাস পর বসে যায়। এরপর প্রস্তুতকারক চাইনিজ কোম্পানিকে মেশিন দুটি মেরামত করে দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হলেও মেরামত করেনি। প্রতিটি কোটি টাকা ব্যায়ে ৬টি গ্রাউন্ড পাওয়ার ইউনিট (জিপিইউ) কেনার দেড় মাসের মধ্যে দুটি জিপিইউ নষ্ট হয়ে গেছে। ৬ মাস নষ্ট থাকার পর চায়না থেকে ওই কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার এসে মেরামত করে দেয়। ওই খাতেও বিমানকে লাখ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। কিন্তু মেরামত করে দেয়ার ২-৩ মাস পর আবারও নষ্ট হয়ে যায় পাওয়ার ইউনিট দুটি। প্রতিটি আড়াই কোটি টাকা দামের উড়োজাহাজ ধাক্কা দেয়ার ৪টি পুশকার্ড কেনা হলেও মাত্র ৩ মাস পর থেকে মেশিনগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া স্ট্রার্ট কার্ড কেনা হয়েছিল ৩টি। জানা গেছে, প্রথম দফায় একটি স্ট্রার্ট কার্ড কেনা হয়েছিল ১ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার দিয়ে। কিন্তু ১৫-২০ দিনের ব্যবধানে পরবর্তীতে আরও দুটি স্ট্রার্ট কার্ড কেনা হয় ৩ লাখ ১৫ হাজার মার্কিন ডলার দিয়ে। অভিযোগ রয়েছে কেনার পর থেকে ওই ৩টি স্ট্রার্ট কার্ডে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ১০ ফুট বাই ১০ ফুট মাপের ৬০টি ট্রলি আনার ৬ মাসের মধ্যে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। যদিও ১০ বছর আগের ট্রলি এখনও বিমানে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০ ফুট বাই ২০ ফুট মাপের ১০টি ট্রলি কেনা হলেও ৪-৫টি ২ দিন পর নষ্ট হয়ে যায়। প্রতিটি ৭ লাখ টাকা দিয়ে ক্রয় করা হয়েছিল। প্রতিটি ৯ কোটি টাকা দিয়ে ৪টি সিপিএল মেশিন ক্রয় করা হলেও বেশিরভাগ সময় নষ্ট থাকে। গত ৫ বছরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে বরাদ্দ : তদন্ত রিপোর্টে বলা হয় ২০১০ সাল থেকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিভাগের মানোন্নয়নে যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তার বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি কেনাকাটার নামে লুটপাট হয়েছে। কিন্তু সে অর্থে আয় বাড়েনি বরং কমেছে। ২০১০-১১ অর্থ বছর জিএসই শাখায় বরাদ্দ দেয়া হয় ৯৩ কোটি টাকা। সে বছর আয় ছিল ২৫৫ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে আবারও বরাদ্দ দেয়া হয় ৮০ কোটি টাকা। ওই বছর আয় দাঁড়ায় ৩৩৯ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দের অনুকূলে আয় করে ৪৬২ কোটি টাকা। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া হয় ৯০ কোটি টাকা। ওই বছর আয় হয় ৪৮০ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়। এর পরিমাণ ছিল ১০০ কোটি টাকা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সিবিএ নেতারা প্রায়শ বিভিন্ন দাবি আদায়ের আন্দোলনে বলছে, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং শাখা থেকে বিমান বছরে ৬০০ কোটি টাকার বেশি আয় করলেও এই শাখার জন্য বছরে ৬ কোটি টাকাও বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না। সিবিএর এই অভিযোগ সঠিক নয়।
No comments:
Post a Comment