Wednesday, August 13, 2014

বর্ষার ফল পেয়ারা:প্রথম অালো

আম-কাঁঠালের মৌসুম আমাদের দেশে অনেকটা টেস্ট ক্রিকেটের মতোই লম্বা। গ্রীষ্মের ফল হলেও বর্ষা পেরিয়ে শরৎ পর্যন্ত তার বিস্তারণ। সে তুলনায় অন্যান্য মৌসুমি ফলের অবস্থা স্বল্পদৈর্ঘ্য টি-টোয়েন্টির মতোই। এখন চলছে স্বল্পমেয়াদি পেয়ারার মৌসুম। দেশে বর্ষার ফলের মধ্যে পেয়ারা জনপ্রিয়তা ও উৎপাদনের দিক থেকে শীর্ষে। রাজধানীর ফলের দোকানগুলোতে তো বটেই, ঝুড়িভরা ডাঁসা পেয়ারা নিয়ে বিক্রেতারা বসে গেছেন স্কুল-কলেজে
র সামনে, অফিসপাড়ার ফুটপাতে, পাড়া-মহল্লার গলির মোড়ে। বিকোচ্ছেও প্রচুর। পেয়ারার এখন ভরা মৌসুম। দামও বেশ কমে এসেছে। মোটামুটি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় এখন পাওয়া যায় এক কেজি। আরও মাস খানেক থাকবে পর্যাপ্ত সরবরাহ। গ্রামে-মফস্বলে বাড়ির উঠানে বা আশপাশে পেয়ারাগাছ খুব সাধারণ দৃশ্য। এখন তো আরও সুবিধা। শহরেও বাড়ির ছাদে বড় আকারের টবে বা ড্রামে দিব্যি পেয়ারাগাছ লাগানো যায়। হাইব্রিড জাতের ছোটখাটো এসব গাছে ফলনও কম নয়। অথচ শুনতে বেশ অবাকই মনে হবে যে দেশের সর্বত্রই সহজলভ্য অতিচেনা এই গাছটি আমাদের দেশে বহিরাগত। এটি আমাদের নিজস্ব উদ্ভিদ নয়। উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের ধারণা, আমেরিকার উষ্ণমণ্ডলীয় দেশগুলো পেয়ারার আদি জন্মস্থান। কৃষিবিদ মৃত্যুঞ্জয় রায় তাঁর বাংলার বিচিত্র ফল বইতে উল্লেখ করেছেন, মোক্সিকো, পেরু হয়ে বিভিন্ন দেশ ঘুরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এসেছে পেয়ারা। এখন উৎপাদনকারী প্রধান দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশসহ রয়েছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, কিউবা, মেক্সিকো ও ব্রাজিল। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুসারে, দেশে এখন ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পেয়ারা চাষ হচ্ছে। বার্ষিক উৎপাদন ছাড়িয়ে গেছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি পেয়ারা উৎপন্ন হয় স্বরূপকাঠি, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও চট্টগ্রাম এলাকায়। চাষ লাভজনক হওয়ায় ক্রমেই এর চাষের বিস্তার ঘটছে। নরসিংদী, গাজীপুর, খুলনা, কুমিল্লা ও পাবনার ঈশ্বরদী এলাকায় অনেক বাণিজ্যিক বাগান গড়ে উঠেছে। পেয়ারার গুণকীর্তন নতুন করে আর কী করার আছে। একদা পেয়ারা ভক্ষণে উৎসাহ দিতে তার তুলনা করা হতো আপেলের সঙ্গে। দামে সস্তা অথচ আপেলের চেয়েও পেয়ারার পুষ্টিমান অধিক—এমন বলা হতো। অবস্থা এখন উভয় দিক থেকেই পাল্টেছে। গুণে তো বটেই, পেয়ারা দামেও কখনো কখনো আপেলকে ছাড়িয়ে যায়। উৎসাহিত করার দরকার পড়ে না, ভালোলাগার টানেই চলতি পথে পেয়ারার পসরা থেকে ফলটি কিনে চিবুতে চিবুতে পথচলার পথিক এখন অনেকেই। এই ভালোলাগা অবশ্য পেয়ারার স্বাদের জন্যই, পুষ্টিতথ্যে নয়। তবু জেনে রাখার জন্য এই পরিসংখ্যানটি উল্লেখ করা গেল—প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারায় রয়েছে ২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন, ৭৬ কিলোক্যালরি শক্তি। আর ভিটামিন সি ২১০ মিলিগ্রাম। আমলকী আর বরই ছাড়া পেয়ারাতেই ভিটামিন সি সবচেয়ে বেশি। দেশে পেয়ারার জাত আছে বেশ কিছু। কাজী, বারী-২, স্বরূপকাঠি, কাঞ্চননগর, মাধুরী, থাই, পলি, আঙ্গুর, মুকুন্দপুরী ইত্যাদি। ফলটি পাকার চেয়ে কচকচে, মচমচে ডাঁসা অবস্থাতেই খেতে সুস্বাদু। ক্রেতারা সেটাই খোঁজেন, স্বাদটিই হলো আসল কথা। মনে ধরলে জাতপাততের তোয়াক্কা আর কে করতে যায়।

No comments:

Post a Comment