Saturday, August 30, 2014

বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের উন্নয়নকাজ বাধাগ্রস্ত:প্রথম অালো

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বিবিয়ানা ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ভুঁইফোড় সংগঠনের চাঁদাবাজি ও ঠিকাদারদের বাধা দেওয়ায় কাজ পিছিয়ে পড়েছে। অথচ সরকার চায় আগামী নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্ধিত গ্যাস সরবরাহ উদ্বোধন করবেন।  এ অবস্থায় গ্যাসক্ষেত্রটির পরিচালক, আমেরিকান কোম্পানি শেভরন স্থানীয় প্রশাসনের শরণাপন্ন হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্
পতিবার হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে দুই দফা সভা হয়েছে। সেখানে পরিস্থিতি মোকাবিলায় বহুপক্ষীয় সমন্বয় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। বিবিয়ানা থেকে এই বছরের মধ্যে ৩০ কোটি (৩০০ মিলিয়ন) ঘনফুট বেশি গ্যাস তোলা সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়া ও জ্বালানি ঘাটতি পূরণের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত। এ কাজের জন্য শেভরন প্রায় চার হাজার কোটি টাকা (৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বিনিয়োগ করে ক্ষেত্রটিতে ১১টি নতুন কূপ খনন ও নতুন গ্যাস প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্ট তৈরি করছে। ওই ১১টির মধ্যে চারটি কূপ খননের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে আগের ১২টিসহ মোট ১৬টি কূপ থেকে দৈনিক প্রায় ৮৫ কোটি (৮৫০ মিলিয়ন) ঘনফুট গ্যাস তোলা হচ্ছে। এটা জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা গ্যাসের প্রায় ৩৬ শতাংশ। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ক্ষেত্রটি থেকে দৈনিক ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে বলেছে পেট্রোবাংলা। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তা সম্ভব নাও হতে পারে। বিবিয়ানায় সভা: গত বৃহস্পতিবার সকালে বিবিয়ানা ক্ষেত্রের দক্ষিণ প্যাডের আবাসিক ভবনের কুশিয়ারা হলে জেলা প্রশাসক মো. জয়নাল আবেদিন, পুলিশ সুপার জয়দেব ভদ্র, নবীগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আলমগীর চৌধুরী, ইউএনও মো. মাহমুদুল হক, ওসি লিয়াকত আলী এবং উপজেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে এ সভা হয়। সভায় শেভরনের পরিচালক (এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স) নাসের আহমেদের উপস্থাপনায় বলা হয়, নবীগঞ্জের তিনটি ইউনিয়নজুড়ে গ্যাসক্ষেত্রটির অবস্থান। ২০১২ সালে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর কাজ শুরু করার সময় ওই তিন ইউনিয়নে সংগঠন ছিল দুটি। এখন তার সংখ্যা ২৫টি। প্রতিটি সংগঠনের প্রথম দাবি থাকে তাদের সদস্যদের চাকরি দেওয়া। গ্যাসক্ষেত্রে অদক্ষ লোকের স্থায়ী চাকরির সুযোগ খুব কম। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় এ রকম কিছু লোক দরকার হয়। এখন প্রায় দুই হাজার অদক্ষ লোক কাজ করছেন। এর মধ্যে এক হাজার ১৬৫ জন স্থানীয়। এর পরও তাঁরা চাকরির দাবি করেন, না দেওয়া গেলে শুরু হয় জবরদস্তি। এলাকার হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবিকার উন্নয়নে শেভরন যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে সেগুলো তাঁরা বিবেচনায় নিতে চান না। যেসব উন্নয়নকাজ স্থানীয় ঠিকাদারদের মাধ্যমে করানো সম্ভব, সেগুলো স্থানীয় লোকজনই করে থাকেন। অস্থায়ী কাজে লোক নিয়োগও করেন ঠিকাদারেরা। ভুঁইফোড় সংগঠনগুলো ঠিকাদারদের মালপত্র আনা-নেওয়া, তাদের লোক চলাচল প্রভৃতিতে বাধা দিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য করে। প্রসেসিং প্ল্যান্ট তৈরির কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পাইপলাইনার্স লিমিটেডের পরিচালক ওবায়েদ হোসেন, কূপ খননের কাজে সহযোগী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শ্যামলিমা লিমিটেডের এন ইউ লস্কর এবং আরও কয়েকজন ঠিকাদার সভায় সংগঠনগুলোর জবরদস্তি ও চাঁদাবাজির বর্ণনা করে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, চাঁদাবাজেরা রাজনৈতিক সমর্থনপুষ্ট। উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, চাঁদাবাজির সঙ্গে সরকারবিরোধীরা জড়িত কি না, তা যাচাই করে দেখা দরকার। তা ছাড়া তিনটি ইউনিয়নে ২৫টি সংগঠন সরকারি নিবন্ধন পেল কীভাবে, তিনি সেই প্রশ্ন তোলেন। তখন সভায় উপস্থিত উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা হাসনা হেনা বলেন, যে ২৫টির নাম এসেছে, তার মধ্যে ১৩টি নিবন্ধিত। সভায় পুলিশ সুপার সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে পুলিশি তদন্তের আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে সমবায় বিভাগকেও দেখতে বলেন, সেগুলো কোনো অবৈধ কাজ করছে কি না। এ ছাড়া জবরদস্তি মোকাবিলায় তিনি একটি বহুপক্ষীয় সমন্বয় কমিটি করার প্রস্তাব দেন। জেলা প্রশাসক ওই প্রস্তাবে সম্মতি দেন। তিনি শেভরন ও ঠিকাদারদের বলেন চিহ্নিত চাঁদাবাজদের একটি তালিকা দিতে। দ্বিতীয় সভা আউশকান্দিতে: বৃহস্পতিবার বেলা একটা থেকে তিনটা পর্যন্ত রহমান কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত এ সভায় স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসকের পরিচালনায় ওই সভায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘরে ঘরে গ্যাসের দাবি তোলেন। অনেকে চাকরির দাবি করেন। জেলা প্রশাসক ওই সভায় বলেন, ঘরে ঘরে গ্যাস দেওয়ার মালিক শেভরন নয়। জেলা প্রশাসন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সে ব্যাপারে অনেক দূর এগিয়েছে। আর অদক্ষ লোকের জন্য গ্যাসক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ সীমিত। তিনি এলাকা ও এলাকাবাসীর স্বার্থে আরও কিছু উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শেভরনের প্রতি আহ্বান জানান।

No comments:

Post a Comment