জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটিতে কাক্সিত পদপদবি নিয়ে দ্বিধাবিভক্তির মধ্যেও রংপুরে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলের আন্দোলনের মজবুত ভিত্তি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আজ শনিবার সকালে প্রথম প্রকাশ্যে ২০ দলের সমন্বয় সভার ঘোষণা দেয়া হয়েছে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে। মহানগর বিএনপির দফতর সম্পাদক সালেকুজ্জামান সালেক নয়া দিগন্তকে জানান, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে বিএনপির নেতৃত্বে রংপুর
অঞ্চলে ২০ দলের সর্ববৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য আজ নগরীর হক কমিউনিটি সেন্টারে সকাল ১০টায় ২০ দলের সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। এখানে ২০ দলীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। সমন্বয় সভার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রংপুর ২০ দলীয় ঐক্যজোটের আহ্বায়ক ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর হোসেনের সভাপতিত্বে সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। তিনি বলেন, আগামী দিনগুলোতে ২০ দলের শান্তিপূর্ণ যুগপত আন্দোলনের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা আসবে এই সমন্বয় সভা থেকে। কমিটি গঠন ইস্যুতে কাক্সিত পদ-পদবি নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি দূর না হতেই ২০ দলের সমন্বয় সভা কেনÑ প্রশ্নের উত্তরে মহানগর বিএনপির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেন নয়া দিগন্তকে জানান, রংপুর বিএনপিতে কোনো দ্বিধাবিভক্তি নেই। সামান্য ভুলবোঝাবুঝি আছে। তাদেরও পদ-পদবি আছে। অচিরেই বিষয়টি ঠিক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, দেশনেত্রীর ডাকে বিএনপির ডাকে আন্দোলনে কোনো নেতাকর্মীই গোস্সা করে ঘরে থাকতে পারবেন না। সবাই চলে আসবেন। তিনি বলেন, আন্দোলন সংগ্রামের সুতিকাগার রংপুরে ঐক্যবদ্ধ বিএনপির নেতৃত্বেই ২০ দল দুর্বার আন্দোলন শুরু করবে। এজন্য প্রস্তুত আমরা। শুধু নেতাকর্মীই নয়, প্রত্যেক শ্রেণী-পেশার মানুষকে আন্দোলনে শরিক করাতে ইতোমধ্যেই আমাদের গণসংযোগ শুরু হয়েছে। রংপুর মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও যুবদলের সভাপতি রইচ আহম্মেদ নয়া দিগন্তকে জানান, কমিটির বিষয়ে আমরা আমাদের আপত্তির কথা চেয়ারপারসন ও মহাসচিবসহ উচ্চপর্যায়ে জানিয়েছি। আমরা চাই রংপুরে ঐক্যবদ্ধ বিএনপির নেতৃত্বে দুর্বার আন্দোলন। কাউকেই বাদ দিয়ে নয়। আশা করি কেন্দ্র থেকে অতি দ্রুত সেটি করে দেয়া হবে ২০ দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা জামায়াত আমির এ টি এম আজম খান বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্যই সমন্বয় সভা। এই সভার মাধ্যমেই শান্তিপূর্ণ অহিংস গণতান্ত্রিক আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি হবে। আমরা আশা করি সেখানে বিএনপি এবং ২০ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ থাকবে। ৬ জুন রংপুরে বিএনপির বটবৃক্ষ হিসেবে পরিচিত রহিম উদ্দিন ভরসার ছেলে এমদাদুল হক ভরসাকে সভাপতি ও সাইফুল ইসলামকে সেক্রেটারি এবং বীরমুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেনকে মহানগর সভাপতি ও সামসুজ্জামান সামুকে সেক্রেটারি করে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট করে কমিটি ঘোষণা করার পর থেকেই দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে রংপুর বিএনপি। কমিটি ঘোষণার দিন থেকেই রহিম উদ্দিন ভরসার সহধর্মিণী মমতাজ শিরিন ভরসা, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম মিজু, যুবদল সভাপতি রইচ আহম্মেদ, কৃষক দলের সভাপতি হাজী আবু তাহের, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মাহফুজ উন নবী ডন এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুস সালামের নেতৃত্বে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের একটি অংশ ওই কমিটির বিরোধিতা করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। শুধু তা-ই নয়, পুরো রমজান মাস বিএনপির ইফতার পার্টিতে হামলার ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয় বিরূপ প্রতিক্রিয়া। তবে রংপুরের একজন সিনিয়র সাংবাদিক এ প্রতিবেদককে জানান, বিএনপিতে রংপুরে দীর্ঘকাল ধরেই নেতৃত্ব নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল, সেটি এখনো আছে। তিনি অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, যতই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকুক না কেন, প্রত্যেকটি ক্রুশিয়াল মোমেন্ট ও আন্দোলনে বিএনপি রংপুরে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থেকেছে। এটা রংপুরে বিএনপির ঐতিহাসিক ঐতিহ্য। সে কারণে সরকারবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরেই রংপুরে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হবে বলে তিনি অতীতের অভিজ্ঞতার কথা জানান নয়া দিগন্তকে।
No comments:
Post a Comment