Tuesday, August 19, 2014

বন্যার অবনতি, চোখের সামনে ৪০ বাড়ি শেষ:কালের কন্ঠ

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার পাইকান ব্যাঙপাড়া গ্রামের মানুষের আশঙ্কাই সত্যি হলো। তিস্তার বাঁধ ভেঙে মোটামুটি এক দিনের ব্যবধানে গ্রামের ৪০টি পরিবারের মানুষ দেখল, কিভাবে চোখের সামনে ভিটেমাটি হারাতে হয়। মুহূর্তেই ঘরবাড়িগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে এখন তারা ঠিকানাহীন। এ গ্রামের আরো এক হাজার পরিবার নদীভাঙনের হুমকিতে আছে। তবে এ উপজেলায় তিস্তার পানি কিছুটা কমায় বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও গাইবান্ধা জেলায়
একই নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে। অন্যদিকে বিভিন্ন জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি আরো বেড়ে যাওয়ায় উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বিকেল ৫টার দিকে পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। এ ছাড়া গতকাল বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও শেরপুর জেলায় নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শুধু এ তিন জেলায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ : রংপুর : গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানি কমতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের পাইকান ব্যাঙপাড়া এলাকায় ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করে। ওই এলাকার একটি প্রান্তিক বাঁধের এক হাজার ফুট ভেঙে যায়। বিলীন হয় সেখানকার নজরুল ইসলাম, মনজুম আলী, আব্দুস সালাম, আবু সিদ্দিক, বেলাল মিয়া, রাজু মিয়া, দুলালী বেওয়া, আব্দুল আজিজ, রফিকুল ইসলাম, সোলেমান, শহীদুল ইসলাম, খলিল উদ্দিন, ফেরদৌস আলী, আব্দুর রাজ্জাক, ফজিলা খাতুন, ফজু মিয়াসহ ৪০ পরিবারের ঘরবাড়ি। শুধু ব্যাঙপাড়ারই আরো প্রায় ৫০০ পরিবার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। স্থানীয় লোকজন বাঁশ-গাছসহ বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ সময়মতো ভাঙনরোধে কাজ করলে এত ক্ষতি হতো না। এ ছাড়া তিস্তার ভাঙনে গজঘণ্টা ইউনিয়নে ছালাপাক এলাকায় ৬০০ পরিবার হুমকির মুখে পড়েছে। গঙ্গাচড়া সদর ইউনিয়নের ধামুর ও নোহালী ইউনিয়নের বৈরাতি এলাকায় উপবাঁধের ১০০ ফুট করে ব্লক পিচিং ধসে গেছে। এ ছাড়া লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর এলাকায় বিজয় বাঁধের প্রায় ২০০ ফুট এলাকা ইতিমধ্যে ধসে গেছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কুড়িগ্রাম : পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ফেরিঘাট পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়। চিলমারী ঘাটে ব্রহ্মপুত্রের পানি গতকাল বিকেল পর্যন্ত ২৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি বেড়েছে দুধকুমার নদেও। পানি বাড়ার ফলে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জনপ্রতিনিধিরা জানান, অন্তত ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গতকাল পার্বতীপুর, খাসেরচরসহ ব্রহ্মপুত্রের বিভিন্ন চর ঘুরে দেখা গেছে, বন্যার পানির প্রবল স্রোতে টিকতে না পেরে অনেকেই ঘরবাড়ি উঁচু স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু উঁচু ভিটা ও নৌকার ব্যবস্থা করতে না পারায় অনেকেই ঘরের ভেতর মাচা ও চৌকিতে ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন। রৌমারী (কুড়িগ্রাম) : জেলার রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। বন্যার পানিতে দুই উপজেলার ৫০০ হেক্টর রোপা আউশ, বীজতলা, শাকসবজি বন্যার পানিতে ডুবে গেছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। দুই উপজেলার অর্ধশত গ্রাম ডুবে পানিবন্দি হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। গতকালও ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। শেরপুর : জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানিবন্দি রয়েছে ২০ গ্রামের অন্তত ২৫ হাজার মানুষ। পানিবন্দি এলাকাগুলোতে গো-খাদ্যসহ বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদী অববাহিকা এলাকার ৬০ একর জমিতে মোটা লাল বালির আস্তরণ পড়েছে। নালিতাবাড়ী পৌর শহরের খালভাঙ্গা এলাকায় পুরনো দুটি ভাঙন দিয়ে বারবার পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করায় এ এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে কাঁচা-পাকা রাস্তা। গাইবান্ধা : প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা, ঘাঘট ও যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ওই সব এলাকার ২০ হাজারেরও বেশি পরিবার ইতিমধ্যে পানিবন্দি। গতকাল দুপুরে ঘাঘট নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় ৩৯ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র ৪০ সেন্টিমিটার, তিস্তার পানি ৯ সেন্টিমিটার এবং করতোয়া নদীর পানি ৫০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়। সুন্দরগঞ্জের তারাপুর, বেলকা, কাপাসিয়া, হরিপুর ও চণ্ডীপুরের চরাঞ্চলের ১৫ হাজার পরিবার এবং ফুলছড়ির গজারিয়া, উড়িয়া, কঞ্চিপাড়া, এরেন্ডাবাড়ি, সাঘাটার হলদিয়া, ঘুড়িদহ, ভরতখালী এবং সদর উপজেলার মোল্লারচর, কামারজানি ও গিদারি ইউনিয়নের পাঁচ সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি, সদর উপজেলার চারটি, ফুলছড়ি উপজেলার ছয়টি এবং সাঘাটা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নসহ মোট ১৮টি ইউনিয়নের ৯ হাজার পরিবার এখন বন্যাকবলিত।

No comments:

Post a Comment