দেশে পরাজিত শক্তির উত্থান হতে দেয়া হবে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে তাদের ছেড়ে দেয়, বিভিন্ন স্থানে পুনর্বাসন করে। আর খালেদা জিয়া তাদের মন্ত্রী বানিয়ে গাড়িতে রক্তমাখা পতাকা তুলে দেয়। তারা এ দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তাদের মনে এখনো জ্বালা, পাকিস্তানপ্রীতি। বিএনপি নেত্রী তাদে
রই দোসর। তাই তাদের পাকিস্তানে চলে গেলেই হয়। জাতীয় শোক দিবস উপলে গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করায় খালেদা জিয়াকে ‘বিকৃত মানসিকতার’ এবং ২০০১ সালের পর অসংখ্য নেতাকর্মী হত্যার ‘খুনি’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির নেত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেন না। যদি করতেন, তাহলে ১৫ আগস্ট আমার বেদনার দিন তিনি উৎসব করতে পারতেন না। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও সাহারা খাতুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, শেখ ফজলে নূর তাপস, হাজী মো: সেলিম প্রমুখ। ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমানের সিগন্যাল ছিল অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আত্মস্বীকৃত খুনিরা হত্যাকাণ্ডের আগে জিয়ার সাথে দেখা করেছিলেন। তিনি নিজে থাকবেন না জানিয়েছিলেন, তবে সিগন্যাল দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করায় অনেকে আমাদের ত্রুটি টোকান। যতই আমাদের ত্রুটি টোকান না কেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কেউ ঠেকাতে পারবে না। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ভোগে নয়, ত্যাগের মাধ্যমে মহৎ কিছু অর্জন করা যায়। এটাই আমাদের ধারণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু আমাদের এ ত্যাগের আদর্শ শিখিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমি কেবল বঙ্গবন্ধুর সন্তানই নই, তাঁর আদর্শের সৈনিকও। ১৫ আগস্টের শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে এগিয়ে যাবো। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমার ওপর গুলি, বোমা ও গ্রেনেড হামলা হয়েছে। ১৫ আগস্ট আমার সব স্বজন হারানোর পরও দেশে ফিরে এসেছি। আমি মৃত্যুকে পরোয়া করি না। বঙ্গবন্ধু এ দেশের জন্য সারাজীবন ত্যাগ করেছেন, কষ্ট করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার জীবনে একটাই ল্য ছিল দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। তিনি সবসময় মানুষের স্বার্থ দেখেছেন, তাদের কল্যাণে কাজ করেছেন। তাই তাকে জীবন দিতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমানের সাথে হানাদার বাহিনীর যে যোগসাজশ ছিল তা আমরা আসলামের লেখা চিঠি থেকে জানতে পারি। এ ছাড়া ১৫ আগস্টের পর খন্দকার মোশতাক জিয়াকে সেনাপ্রধান নিয়োগ দেন। কিন্তু কেন? বিএনপি এর কোনো জবাব দিতে পারবে? পরে জিয়া নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে। সে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনীর অসংখ্য সদস্যকে হত্যা করেছে। তিনি আরো বলেন, ১৫ আগস্টের এক দিন আগে আমি সন্তান ও বোন রেহানাকে নিয়ে দেশ ছেড়েছিলাম। দীর্ঘদিন দেশে আসতে পারিনি। দেশে ফিরে বাবার বাসায় উঠতে পারিনি। জিয়া আমাকে বাসায় ঢুকতে দেয়নি। আমি সেখানে মিলাদ পড়তে চাইলাম কিন্তু জিয়া বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। তখন তার এত কিসের ভয় ছিল? প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বাস করে না। বিশ্বাস করলে পাকিস্তানিদের তারা এভাবে সম্মান দিতে পারে না। তারা হাওয়া ভবনে বিশ্বাসী ছিল। যেখানে জঙ্গিবাদ-খুন-গুমের আখড়া হয়ে উঠেছিল। তাদের কর্মকাণ্ডে দেশ স্থবির হয়ে যায়। কিন্তু ২০০৮ সালে আমরা নির্বাচিত হয়ে আবার সরকার গঠন করি। এর পর থেকে দেশ আবার এগিয়ে যায়। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছি। আশা করি, এ বিচার শেষ করতে পারব। কিন্তু বিএনপি আন্দোলনের নামে মানুষ খুন করছে। ঠিক যেভাবে পাকিস্তানি বাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টায় বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সভার কাজ শুরু হয়। অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মো: সেলিমসহ মহানগরের পদপ্রত্যাশী অনেক নেতা ব্যাপক শোডাউন করেন।
No comments:
Post a Comment