Tuesday, August 26, 2014

অবৈধ সরকারের কোনো আইন ভবিষ্যতে টিকবে না : খালেদা জিয়া:নয়াদিগন্ত

অবৈধ সরকারের কোনো আইনই ভবিষ্যতে টিকবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন খালেদা জিয়া। গত রাতে গুলশান কার্যালয়ে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ৫ জানুয়ারি দেশের ৫ ভাগ মানুষ ভোট দিতে যায়নি। আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে একের পর এক আইন করছে। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে সম্প্রচার নীতিমালা করেছে। বিচ
ার বিভাগকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে তারা এখন বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা অবৈধ সংসদের হাতে দিতে চলেছে। আমরা স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, এই অবৈধ সরকারের আইন করার বৈধতা নেই। তাদের কোনো আইনই টিকবে না। আন্দোলনের জন্য সংগঠনকে তৃণমূলপর্যায় থেকে শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, আমরা বলেছি আন্দোলন করব। তবে সেই আন্দোলন আওয়ামী লীগের মতো সন্ত্রাসী আন্দোলন হবে না। আমি বলতে চাই, ঐক্যবদ্ধ হোন, সংগঠনের দিকে জোর দিন। নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগের সরকার বিদায় হবে। রংপুর বিভাগের আটটি জেলার ৫৮টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা ২৪টি চেয়ারম্যান, ১৪টি ভাইস চেয়ারম্যান এবং ২৪টি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়। এ ছাড়া বিরোধী জোটের শরিক জামায়াত আটটি চেয়ারম্যান, ৩০টি ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১১ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে পাঁচ পর্বে সারা দেশে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হয়। খালেদা জিয়া অনুষ্ঠানের সূচনাতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক অবস্থা, সরকারের দুর্নীতি, অপশাসন, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা, বিচারপতিদের অভিশংসন প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করেন। উত্তরাঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলে এখন বন্যা চলছে। কিন্তু বন্যার্ত মানুষের দিকে সরকারের কোনো নজর নেই। সরকার লুটপাটে ব্যস্ত। সেখানকার মানুষজন নিদারুণ কষ্টের মধ্য দিনযাপন করছে। সারা দেশের অবস্থা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, সড়ক জনপদের অবস্থা চরমপর্যায়ে। কোনো রাস্তাঘাট ঠিক নেই। ঢাকা শহরের রাস্তাঘাটের অবস্থা কেমন সবাই জানে। ১০ বছর অতিক্রান্ত হলেও ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন না দিয়ে সরকার প্রশাসক দিয়ে ডিসিসি পরিচালিত করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এই মহানগরী এখন আবর্জনার শহরে পরিণত হয়েছে। এ জন্য বিদেশীরা বলেছে, বাংলাদেশ দুর্নীতিতে ১ নম্বর এবং নোংরাতে ৪ নম্বর। দেশে গণতন্ত্র নেই উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, দেশের বাকস্বাধীনতা নেই। সরকার মানুষের মুখ বন্ধ করে রাখতে চায়। এ জন্য জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা করেছে তারা। অতীতে যেভাবে বাকশাল করে চারটি ছাড়া সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিল, এখন একদলীয় শাসনপ্রক্রিয়ার দিকেই তারা দেশকে নিয়ে যাচ্ছে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, আজ বিচারকরা সরকারের হাতে বন্দী। তাদের যেভাবে নির্দেশ দেয়া হয়, সেভাবে কাজ করতে হচ্ছে। বিরোধী দলের জন্য এক রকম আইন। সরকারের জন্য অন্য রকম আইন। এরপরও সরকার বিচার বিভাগের ওপর আশ্বস্ত হতে পারছে না বলেই বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা সংসদের হাতে দিতে চাচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাইÑ সব অপকর্ম আড়াল করা। এসব আইন করার পরিণতি শুভ হবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, নিয়তির এমন পরিণতি আসবে, আপনারা (আওয়ামী লীগ) বাঁচতে পারবেন না। আইন করে কোনো লাভ হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন, শেখ হাসিনা লগি-বৈঠা নিয়ে আন্দোলন করে মানুষ হত্যা করেছে। বিডিআর সদর দফতরে ৫৭ সেনাকর্মকর্তার হত্যাকাণ্ডের পেছনে তার (শেখ হাসিনা) ও তার দলের নেতাদের হাত ছিল। ১৯৭৫ সালের ঘটনার পর দেশে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি জিয়ার ভূমিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ওই সময়ে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে লোক পাঠিয়েছিলেন। কেবল আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়া তাকে ওই সময়ে ৩৩ কোটি টাকার সম্পদ ও মালামাল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল। যার বর্তমান মূল্য হচ্ছে তিন হাজার ৫ শ’ কোটি টাকার সম্পদ। দেশের স্বাধীনতা যদি জিয়াউর রহমান ঘোষণা না করতেন, দেশ যদি স্বাধীন না হতো শেখ সাহেবের পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেতেন কি না সন্দেহ রয়েছে। জাতীয় পার্টির এইচ এম এরশাদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ৫ জানুয়ারি আসন ভাগবাটোয়ারা হয়েছে। ১৫৪টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা বলে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এরশাদকে কয়টা আসন দিয়েছে। তাতেই সে খুশি। তার কীর্তিকলাপ জনগণ জানে। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সমালোচনা করে তিনি বলেন, এক সময় মতিয়া চৌধুরী বলেছিলেন, শেখ মুজিবের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাবে। আর ইনুরা বলেছিল, শেখ মুজিবের লাশ কবর না দিয়ে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিতে। আজ এই মতিয়া-ইনু আওয়ামী লীগের দোস্ত হয়েছে। এখন তারা (মতিয়া-ইনু) কাফফারা দিয়ে মন্ত্রী হয়েছেন। নিজেদের মন্ত্রিত্ব ঠিক রাখতে আওয়ামী লীগের জন্য দরদে ফেটে পড়ছেন। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের স্বাগত জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারাই সত্যিকারের জনপ্রতিনিধি। সংসদে কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। তাই সততার সাথে জনগণের জন্য কাজ করুন। জানি আপনারা বিরোধী দলের বলে সরকারের সহযোগিতা পাচ্ছেন না। তারপরও জনগণের পাশে থাকুন। দুর্নীতি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, যারা দুর্নীতি করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আন্দোলন সম্পর্কে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা বলে, বিএনপি নাকি আন্দোলন করতে জানে না। নব্বইয়ের আন্দোলনে আমরাই এরশাদকে হটিয়েছি। আওয়ামী লীগ এরশাদের সাথে আঁতাত করেছিল। এখন তারা মিথ্যার ওপর টিকে আছে। তাদের সাথে জনগণ নেই। তিনি বলেন, বিএনপি আন্দোলন করে, আর আওয়ামী লীগ বোমা মারে। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, অস্ত্র রেখে খালি হাতে মাঠে নামুন। তখন দেখা যাবে জনগণ কার সাথে আছে। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে আওয়ামী লীগের লোকজন লুটপাটের অর্থ জমা করছে বলে অভিযোগ তুলেন তিনি। অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গনি, মাহবুবুর রহমান, জমির উদ্দিন সরকার, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে নির্বাচিত চেয়ারম্যান রেজাউল করীম শাহিন, তৈমুর রহমান খান, জিয়াউল ইসলাম জিয়া, আইনুল হক মাস্টার, নুরুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, খুরশীদ আলম মতি, শামীম চৌধুরী, আকরাম হোসেন, শহিদুজ্জামান, মামুনুর রশীদ, বজুলর রশীদ কালু, সেলিনা আখতার, আমজাদ হোসেন সরকার, নুর মোহাম্মদ মণ্ডল, হায়দার আলী, আফসার আলী, হাশেম আলী, নাজির হোসেন ব্যাপারী, আবুল কাশেম সরকার, এ কে এম মমিনুল হক, আইয়ুব আলী, ফারুক কবীর আহমেদ, সাঈদুর রহমান মুন্সি, ভাইস চেয়ারম্যান সুলতানা রাজিয়া, ফুরাতুন নাহার প্যারিস, পারুল বেগম, নাদিয়া এমদাদ, হাসিনা পারভিন, আখতারা চৌধুরী, নাজমুন নাহার মুক্তিসহ অর্ধশতাধিক জনপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

No comments:

Post a Comment