Friday, August 29, 2014

খুনিরা চেনা মুখ!:কালের কন্ঠ

ইসলামী ফ্রন্টের নেতা মাওলানা শায়খ নূরুল ইসলাম ফারুকীকে হত্যার আগে খুনিদের অন্তত দুজন ওই বাসায় তিনবার গিয়েছিল। ফারুকীর (৫৫) স্বজনরা এ দাবি করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তারাও মনে করছেন, দীর্ঘদিন ধরে নজরদারি ও পরিকল্পনা করে ফারুকীকে হত্যা করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে ইসলামী চেতনা ও রাজনৈতিক বিরোধের পাশাপাশি ব্যক্তিগত এবং আর্থিক বিষয়ও ভূমিকা রাখতে পারে বলে সন্দেহ করছে গোয়েন্দারা। সব সন্দেহ সামনে
রেখেই তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে টেলিভিশনে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জনপ্রিয় এ উপস্থাপকের হত্যার উদ্দেশ্য ও খুনিদের ব্যাপারে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো ধারণা দিতে পারেননি তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। মূলত জঙ্গিসংশ্লিষ্টতাকে প্রাধান্য দিয়েই অনুসন্ধান চলছে। হত্যার ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যায় ফারুকীর ছেলে ফয়সাল ফারুকী বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় সাত-আটজনকে আসামি করে শেরে বাংলানগর থানায় মামলা করেছেন। হত্যার সম্ভাব্য কোনো কারণের কথাও উল্লেখ করা হয়নি এজাহারে। তাতে ডাকাতির কথাও বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, নগদ দুই লাখ টাকা, একটি ক্যামেরা, একটি টেপ এবং প্রায় সাড়ে পাঁচ ভরি স্বর্ণালংকারসহ আনুমানিক ছয় লাখ টাকার মালামাল লুট হয়েছে। তবে মামলায় ডাকাতির পর হত্যার কথা বলা হলেও ঘটনাটি নিছক ডাকাতি করতে গিয়ে হত্যা বলে মনে করছে না পুলিশ ও র‌্যাব। পুলিশ ইতিমধ্যে সন্দেহভাজন তিনজনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করছে। সাংবাদিকদের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফারুকীর স্ত্রী । প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাতে সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের খতিব এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘কাফেলা’ ও ‘শান্তির পথে’র উপস্থাপক ফারুকীকে তাঁর নিজ বাসায় গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। রাত সোয়া ৯টার দিকে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের ৪৮ নম্বর (১৭৪ পুরনো) বাসার দ্বিতীয় তলায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে ফারুকীর মরদেহ পূর্ব রাজাবাজারে তাঁর বাসার সামনে আনা হয়। এরপর আবার মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। গতকাল রাতে ফারুকীর বড় ছেলে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন। রাতে পারিবারিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আজ বাদ জুমা জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ফারুকীর জানাজা হবে। এরপর তাঁকে পঞ্চগড়ে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার নাজমুল আলম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, নূরুল ইসলাম ফারুকীর খুনিদের সম্পর্কে এখনো সঠিক ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে পরিবার ও বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মনে হচ্ছে, ধর্মীয় আদর্শগত বিরোধের কারণেই পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। তবে তদন্তে এ বিষয়টির পাশাপাশি পারিবারিক বিরোধ, হজে লোক পাঠানো নিয়ে লেনদেনসহ একাধিক কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। র‌্যাবের অতিরিক্ত পরিচালক (এডিজি) কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, ঘটনার পরপরই র‌্যাবের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত পরিষ্কার কোনো ধারণা পাওয়া না গেলেও ধর্মীয় মতাদর্শগত বিরোধের কারণেই পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে। চূড়ান্ত মত দেওয়ার মতো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। গোপীবাগের ছয় খুনের সঙ্গে মিল : ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, আট মাস আগে রাজধানীর গোপীবাগে কথিত পীর লুৎফর রহমানসহ ছয় খুনের ঘটনার সঙ্গে ফারুকী হত্যাকাণ্ডের কিছুটা মিল আছে। দুটি খুনের ঘটনার ধরন প্রায় একই রকম। দুটি হত্যাকাণ্ডের পেছনে একই গোষ্ঠী জড়িত থাকতে পারে। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রামকৃষ্ণ মিশন রোডের ৬৪/৬ নম্বরে চারতলা ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসায় মুরিদ সেজে ঢুকে কথিত পীর লুৎফর রহমান, তাঁর ছেলে সারোয়ার ইসলাম ফারুখ ওরফে মনির, পীরের খাদেম মঞ্জুর আলম মঞ্জু, মুরিদ শাহিন, রাসেল ও মুজিবুল সরকারকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। আর গত বুধবার রাতে হজে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনার কথা বলে দুর্বৃত্তরা পূর্ব রাজাবাজারে চারতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলার বাসায় ঢুকে মাওলানা ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করে। দুটি হত্যাকাণ্ডের ধরন একই রকম হলেও কথিত পীরের ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গীদেরও হত্যা করা হয়েছিল। ফারুকীর বাড়িতে যারা ঢুকেছিল তাদেরও হাত-পা বেঁধে রাখা হলেও অন্যদের হত্যা করা হয়নি। গোপীবাগের ঘটনায় উগ্র ইসলামপন্থীরা কথিত পীরের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল বলে তদন্তে ধারণা পেয়েছিল পুলিশ ও র‌্যাব। একইভাবে সুন্নিবাদী সংগঠন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নেতা ফারকী হেফাজতে ইসলাম ও হিজবুত তাওহীদসহ অন্যান্য উগ্রবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছিলেন। এ কারণে বেশ কয়েকবার তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এর আগে তিন দফায় বাসায় যায় খুনিরা : গতকাল দুপুর ১টায় পূর্ব রাজাবাজারে ফারুকীর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তখনো দেয়ালে, ফ্রিজের গায়ে রক্তের দাগ লেগে ছিল। বসার ঘরে কাগজপত্র এলোমেলো পড়ে আছে। স্বজনদের চোখে বিলাপের অশ্রু। এক ফাঁকে কথা হয় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ফারুকীর ভাগ্নে মারুফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁর মামাকে (ফারুকী) হত্যার আগে খুনিদের অন্তত দুজন তিন দফায় ওই বাসায় গিয়েছিল। হজে যাওয়াসহ নানা বিষয়ে তাদের মধ্যে কয়েক দফায় কথা হয়েছে। বুধবার রাত ৮টার দিকে প্রথম যে দুই যুবক বাসায় ঢুকেছিল তাদের এর আগেও এ বাসায় আসতে দেখেছেন পরিবারের সদস্যরা। মারুফ দাবি করেন, প্রথম দুই যুবক তাদের আরো অন্তত আট সহযোগীকে নিচ থেকে ডেকে এনে ফারুকীকে হত্যা করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মুখোশ পরা ছিল। বাসায় ঢুকেই হত্যা করা হলেও যুবকরা প্রায় এক ঘণ্টা বাসাতেই ছিল। পরে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে নির্বিঘ্নে চলে যায় তারা। পিস্তল-রিভলবার নিয়ে পরিবারের সদস্যদের ভয় দেখালেও ফারুকীকে হত্যা করে জবাই করে। তদন্তসংশ্লিষ্টরাও গতকাল ফারুকীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন। খুনিদের আচরণ ও কথাবার্তার মাধ্যমে কোনো ধারণা পাওয়া যায় কি না তা জানার চেষ্টা করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। যেভাবে টার্গেট করে হত্যা : পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফারুকীকে হত্যার আগে খুনিরা দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর ওপর নজরদারি করেছিল। পূর্বপরিচয়ের সূত্রেই বুধবার সহজেই বাসায় ঢোকে দুই যুবক। এরপর আরো কমপক্ষে আটজন বাসায় ঢোকার পর রাত ৯টার মধ্যে হত্যা মিশন সফল করে তারা পালিয়ে যায়। তখনো পুরো রাজাবাজার এলাকার প্রতিটি গলি ও সড়কে মানুষের কর্মব্যস্ততার কমতি ছিল না। প্রতিবেশীরাও যার যার কাজে ব্যস্ত ছিল। কেউই কিছু বুঝতে পারেনি। হত্যাশেষে নির্বিঘ্নে বেরিয়ে যেতে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করেছে বলে মনে করছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।  পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য মতে, রাত ৮টার দিকে ফারুকী বাসার ড্রয়িং রুমে বসে ছিলেন। এ সময় তাঁর শাশুড়ি জয়গুন্নেছা (৮৫), স্ত্রী লুবনা, ভাগ্নে মারুফ হাসান, গৃহপরিচারিকা শরিফাসহ আরো দুই নারী ছিলেন। এ অবস্থায় বাড়ির প্রধান ফটক ও ভেতরে কলাপসিবল গেট পার হয়ে সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠে বাইরে থেকে দরজা নক করে দুই যুবক। ভেতর থেকে মারুফ তাদের পরিচয় জানতে চান। যুবকরা বলে, ‘আমরা হুজুরের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। হজে যাব।’ এ কথা শোনার পর ভেতর থেকে দরজা খুলে দেন মারুফ। যুবকরা ভেতরে ঢোকার পরপরই ফারুকী তাদের চিনতে পারেন। এর আগে আরো তিন দিন হজে লোক পাঠানোর কথা বলে ফারুকীর সঙ্গে দেখা করেছিল। ফারুকী তাদের বসতে বললে একজন বলে, ‘হুজুর আমার ভাই আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন। পথে আছেন।’ এ সময় ফারুকী ভেতর থেকে আরো চেয়ার আনতে বলেন মারুফকে। মারুফ কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি ভেতর থেকে চেয়ার এনে দেখতে পান ড্রয়িং রুমে অন্তত আট যুবক। তাদের মধ্যে একজন ফারুকীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে আছে, আরেকজন গলায় চাকু ধরে রেখেছে। কয়েকজন হাত, মুখ চেপে ধরে আছে। বাসা থেকে বের হওয়ার দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করা। এরই মধ্যে দুজন তাঁকেও (মারুফ) জাপটে ধরে মেঝেতে শুইয়ে ফেলে। পাশে থাকা কাপড় দিয়ে তাঁর হাত-পা বেঁধে ফেলে এবং মারধর করে। ফারুকীকে জিম্মি অবস্থায় পাশের একটি ঘরে নিয়ে যায় কয়েকজন। এ সময় যুবকদের কয়েকজন পাশের ঘরে ঢুকে হুজুরের শাশুড়ি জয়গুননেছা ও গৃহপরিচারিকা শরিফাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। একটি ঘরে ছিলেন হুজুরে ছোট স্ত্রী লুবনা ও হুজুরের সঙ্গে দেখা করতে আসা দুই নারী। যুবকদের দেখে লুবনা জানতে চান, ‘তোমরা কারা?’ যুবকরা বলে- ‘পুলিশ আমাদের তাড়া করেছে। তাই এ বাসায় ঢুকেছি। আমাদের আশ্রয় দিন।’ লুবনা তাদের রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এ কথা বলার পরপরই যুবকরা লুবনা ও ওই দুই নারীকে বেঁধে ফেলে দরজা আটকে দেয়। এরপর খাবার ঘরে ফারুকীকে জাবাই করে। এভাবে এক ঘণ্টার মধ্যে হত্যা মিশন শেষ করে ঘাতকরা চলে যায়। মারুফের দাবি, হত্যাকাণ্ডের পর যুবকরা বাসার আলমারি থেকে দেড় লাখ টাকা, সাড়ে তিন লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার, দেড় লাখ টাকা মূল্যের একটি ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ৩৩ হাজার টাকা দামের একটি ক্যামেরা নিয়ে গেছে। হুজুরের শ্বাশুড়ি জয়গুননেছা বলেন, হঠাৎ কয়েক যুবক তাঁর কক্ষে ঢুকে অস্ত্র ধরে বলে, ‘কথা বলবি না।’ এরপরই তাঁকে ও কাজের মেয়েকে পিঠমোড়া দিয়ে বেঁধে পাশের কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে লুবনাসহ আরো দুই নারী ছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা তখনো জানি না ফারুকীর অবস্থা। এর পরপরই লুবনাসহ সবার হাত-মুখ বেঁধে দরজা আটকে দেয়। এরপর যুবকরা চলে গেলে লুবনা অনেক চেষ্টায় নিজের হাতের বাঁধন খুলে আমাদের বাঁধন খোলে। ততক্ষণে সব শেষ।’ মাওলানা ফারুকীকে হত্যার সময় তাঁর প্রতিবেশী, এমনকি বাড়ির মালিকসহ আশপাশের লোকজন কেউ কিছু জানতেন না। ফারুকীর সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া ফাতেমা বেগম বলেন, তাঁরা কোনো চিৎকার শুনতে পাননি। তাঁরা পরে সব জানতে পারেন। ফারুকীর বাসায় সব সময় লোকজনের ভিড় থাকত বলে তিনি জানান। পূর্ব রাজাবাজারের নাজনীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কয়েক গজ পশ্চিমে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ হোস্টেলের দেয়ালঘেঁষা ১৭৪ নম্বর হোল্ডিংয়ে একই সীমানার মধ্যে চারতলা দুটি মুখোমুখি ভবন। ফারুকী প্রায় ২০ বছর ধরে পশ্চিম পাশের ভবনের দ্বিতীয় তলার দক্ষিণের ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকতেন। ড্রইংরুমটি তিনি ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক অফিস হিসেবে ব্যবহার করতেন। ‘ফারুকী ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস’ নামে তাঁর একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ইসলামিক মিডিয়া জনকল্যাণ সংস্থা নামে একটি এনজিওর চেয়ারম্যান হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। মূলত চ্যানেল আইয়ের ‘কাফেলা’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি দেশব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। অন্য সংবাদমাধ্যমেও তাঁর উপস্থিতি ছিল। একসময় তিনি বাসার পাশেই পূর্ব রাজাবাজার জামে মসজিদের খতিব ছিলেন। পরে হাইকোর্ট মাজার মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ফারুকীর প্রথম স্ত্রী আয়েশা বেগম থাকেন মগবাজারে। ওই ঘরে দুই মেয়ে ও এক ছেলে আছে। দ্বিতীয় স্ত্রী লুবনা কুলসুমের ঘরে আছে তিন ছেলে। বড় ছেলে আহমেদ রেজা ফারুকী সৌদি আরবে থাকেন। খবর পেয়ে গতকাল রাতে দেশে ফিরেছেন তিনি। স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলাপকালে ফারুকীর পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কোনো বিরোধের কথা জানা যায়নি। তিনি অনেকটা নিরিবিলি জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন।  ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিক্ষোভ ফারুকী হত্যার প্রতিবাদে গতকাল ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। বিক্ষোভকারীরা অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। আগামীকাল শনিবারের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করা না হলে রবিবার সারা দেশে হরতাল ডাকার হুমকি দিয়েছে ইসলামী ছাত্রসেনা। প্রতিবাদ : মাওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকী হত্যার প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীতে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। ছবি : কালের কণ্ঠ গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা। বুধবার রাতেও চট্টগ্রামে বিক্ষোভ করেছিল ফারুকীর সমর্থকরা। সে সময় নগরীর মুরাদপুর, ষোলশহর, জিইসির মোড় ও অক্সিজেন মোড় এলাকায় বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। গতকাল সকালে মুরাদপুর এলাকায় ফের টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে ফারুকীর সমর্থকরা। পরে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাব চত্বরে জড়ো হয় তারা। উত্তেজিত কর্মীরা এ সময় কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করে।   দুপুরে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আহলে সুন্নাতের মহাসচিব মোছাহেব উদ্দিন বখতেয়ার আগামী মঙ্গলবার বিকেলে লালদীঘি মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দেন। সমাবেশ থেকে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি। মোছাহেব উদ্দিন বলেন, ‘নূরুল ইসলাম ফারুকী গণমাধ্যমে সুন্নিজনতার পক্ষে ইসলামের শান্তির কথা বলতেন। বাংলাদেশের একটি গোষ্ঠী মাজারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। সুন্নিরা ঐতিহ্য ফিরে পেলে জঙ্গিবাদ এগিয়ে যেতে পারবে না। এ কারণে জঙ্গিরা আলেম-ওলামাদের হত্যার পরিকল্পনা করেছে।’  গতকাল রাতে ইসলামী ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন রাব্বানী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ফারুকীর খুনিদের ধরতে প্রশাসনকে শনিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হলো। ব্যর্থ হলে রবিবার সারা দেশে হরতাল দেওয়া হবে।’ ফারুকী হত্যার প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে ফারুকীর বাসভবনের সামনে এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, সুন্নি আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী ছাত্রসেনাসহ কয়েকটি সংগঠন। দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে সুন্নি আন্দোলন বাংলাদেশ। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন আল্লামা সৈয়দ ছাইফুর রহমান নিজামী শাহসহ সুন্নি আন্দোলনের নেতারা। ফারুকী হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে পৃথক বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির মহাসচিব মাওলানা আবদুল মালেক নূরী, আঞ্জুমান ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মহসিন, সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ দিদারুল ইসলাম আশেক্কীনে আওলিয়া ঐক্য পরিষদ। দেশে খুনের রাজত্ব কায়েম হয়েছে : খালেদা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অভিযোগ করেছেন, ‘দুষ্কৃতকারীদের হাতে মাওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকীকে হত্যার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে দেশে খুনের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আছে বলেই গুম, খুন ও অপহরণকারীরা ঘটনা ঘটিয়ে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।’ ফারুকী হত্যার প্রতিবাদে গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। নিন্দা জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী : মাওলানা ফারুকী হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ধর্ম নিয়ে ব্যবসা, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মাওলানা ফারুকীর প্রয়াস ছিল অগ্রগণ্য। অবিলম্বে ঘাতকদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য প্রশাসনের তৎপরতার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। তথ্যমন্ত্রী নিহত ফারুকীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

No comments:

Post a Comment