Friday, August 29, 2014

সারা দেশে ৪৪ নদ-নদীতে পানিপ্রবাহ বেড়েছে:কালের কন্ঠ

টানা বৃষ্টিপাতের সঙ্গে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ঢাকার আশপাশের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। রাজধানীর আশপাশ এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রে পানি কোথাও কোথাও বিপদসমীর ১০ থেকে ৮৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এতে ঢাকার আশপাশের নদীগুলোতে পানির চাপ বেড়ে গিয়ে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে বলে জানি
য়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। ঢাকায় প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। চারপাশের নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় বৃষ্টির পানি নামতে পারছে না। এতে রাজধানীর নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন অংশে পানি আটকে আছে। নিচু এলাকার বেশ কিছু বাড়িঘরে পানি ঢুকে গেছে। ভেসে গেছে রাস্তাঘাট ও মাছের খামার। রাস্তাঘাট ভেসে যাওয়ায় খিলগাঁওয়ের নাসিরাবাদ ইউনিয়নের নাগড়াপাড়ায় শত শত মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নাগড়াপাড়ার বাসিন্দা মো. আমিন বলেন, ‘সপ্তাহখানেক ধরেই পানি বাড়ছে। ভাবছি পানি কমে যাবে। কিন্তু হঠাৎ গতকাল বৃহস্পতিবার পানির চাপ অনেক বেড়ে গেছে। গত দুই দিনে দু-তিন ফুট পানি বেড়েছে। পানির চাপে রাস্তা ভেঙে আমার ঘরেও পানি ঢুকেছে। এভাবে চলতে থাকলে পুরো এলাকাটাই পানিতে ডুবে যাবে।’ বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় শতাধিক মৎস্য খামার ভেসে গেছে। সামছুদ্দিন মাতব্বর মৎস্য খামারের কর্মী মো. মাহফুজুল হক বলেন, ‘গত বছর আড়াই লাখ টাকা দিয়ে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে। অন্য তিন পাশে জালের বেড়া থাকায় মালিক ভেবেছিলেন মাছ যেতে পারবে না। এখন দেখছি রাস্তাটি পানিতে ভেসে গেছে। ১০ হাজার টাকার মাটি দিয়েও রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।’ রাজধানীর পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা ত্রিমোহনী, দাসেরকান্দি, ফকিরখালী, বেরাইদ ও আশপাশের এলাকা এবং বালু-শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পাড়ের ডেমরার আমুলিয়া, মেন্দিপুর, কায়েতপাড়া, নাসিরাবাদ, শেখের জায়গা, নাগড়াপাড়া ও পাইটির নিম্নাঞ্চলে পানি বেড়ে বেশ কিছু রাস্তাঘাট ডুবে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। ত্রিমোহনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি। ওই এলাকার রাস্তাঘাট ভেসে যাওয়ায় অভিভাবকরা শিশুদের বিদ্যালয়ে দিতে ভয় পাচ্ছেন। প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ঝুমা আক্তারের বাবা মো. সবুজ মিয়া বলেন, ‘মাইয়াড্যা আমার ছোডো। ক্লাস ওয়ানে পড়ে। রাস্তায় পানি উডছে। তাই স্কুলে যাইবার দিচ্ছি না। আমরা বড়রার যাওনই কষ্ট, ছোডরা কিভাবে যাইব।’ মাণ্ডা, নন্দীপাড়া সেতুর পূর্ব প্রান্ত ও নতুনবাজার এলাকায়ও বৃষ্টির পানি জমে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। ঢাকার আশপাশের নদীগুলোর মধ্যে শীতলক্ষ্যার পানি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। কামরাঙ্গীরচরের বড়বাড়ী থেকে কোম্পানিঘাট এলাকা পর্যন্ত এক কিলোমিটারব্যাপী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও হাঁটু পর্যন্ত পানি। অনেকের বাড়ি ও দোকানে পানি ঢুকেছে। এ ছাড়া বুড়িগঙ্গা নদীতে বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নেওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী রিপন কর্মকার জানান, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার সিরাজগঞ্জ থেকে সারিয়াকান্দি ও আশপাশ এলাকায় পানি কয়েক দিন ধরে কমছে। এখন সেই পানি ভাটিতে চলে আসছে। এর ফলে ঢাকার আশেপাশের নদীগুলোতে পানি বাড়ছে। ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় আগামী ৪৮ ঘণ্টায় রাজধানীর আশপাশের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে বলে জানান তিনি। এদিকে সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারার পানি বিভিন্ন স্থানে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে? সুনামগঞ্জের আটটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পাউবো জানায়, সুরমা নদীর পানি এ মুহূর্তে সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা আরো প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাউবো জানায়, যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই এলাকার নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবতের জীবন যাপন করছে। জেলার সাতটি উপজেলার ৮২টি ইউনিয়নের মধ্যে অন্তত ৬০টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত। এ ছাড়া উজানে পানি বাড়তে থাকায় দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। পাউবোর তথ্যানুযায়ী, গতকাল সকালে দেশের ৮৩টি পয়েন্টে ৪৪টি নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এসবের মধ্যে ১৯টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। তিনটি পয়েন্টে পানিতল অপরিবর্তিত রয়েছে। পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, আগামী ৭২ ঘণ্টায় গঙ্গা অববাহিকার নদ-নদীগুলোর পানি কিছুটা বাড়তে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা পর সুরমা-কুশিয়ারার পানিও কমতে শুরু করতে পারে। সে ক্ষেত্রে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে। তবে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও পদ্মা এবং ঢাকা শহরসংলগ্ন নদ-নদীগুলোর পানি আগামী ৭২ ঘণ্টায় বাড়তে পারে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আমিরুল হোসেন বলেন, গত কিছুদিন ধরে দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছিল। কিন্তু গতকাল থেকে আবার পানি বাড়ছে। উজানে ভারতে বৃষ্টি বাড়ায় দেশের নদ-নদীতে এর প্রভাব পড়ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু এলাকার পানি বেড়ে পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে বলে জানান তিনি।

No comments:

Post a Comment