Friday, August 29, 2014

সরকার মুখে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বললেও কাজ করছে বিপরীত:নয়াদিগন্ত

দেশের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, সরকার মুখে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বললেও বাস্তবে তার বিপরীত কাজ করছে। দিগন্ত টিভি সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে সাময়িক বন্ধ করার পর ১৫ মাস পার হলেও এখনো খুলে দেয়া হয়নি। ফলে কয়েক হাজার সাংবাদিক-কলাকুশলী মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শুধু তাই নয়, সরকার আমার দেশ, ইসলামিক টিভি, চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে আবার সম্প্রচার নীতিমালা করে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করছ
ে। তারা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দিগন্ত টিভি খুলে দেয়ার দাবি জানান।    গতকাল জাতীয় প্রেস কাব মিলনায়তনে দিগন্ত টিভির ষষ্ঠ বর্ষপূর্তিতে ‘সাময়িক সম্প্রচার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে প্রতিবাদী সংহতি সম্মিলনে তারা এসব কথা বলেন। দিগন্ত টিভি এ সম্মিলনের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন দিগন্ত টিভির প্রধান নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম।  কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর-উত্তম বলেন, দিগন্ত টেলিভিশন সত্য সংবাদ প্রচার করত। আমার অনুষ্ঠানে তারা কখনো আমার ও অতিথিদের বক্তব্য কাটছাঁট করেনি। সরকার সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে দিগন্ত টিভি বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, দিগন্ত নাকি সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। ১৫ মাস হলো এ টিভি বন্ধ আছে। সাময়িক বন্ধ যদি ১৫ মাস হয়, তাহলে অসাময়িক কি কেয়ামত পর্যন্ত? তিনি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দিগন্ত টিভি খুলে দেয়ার দাবি জানান।  তিনি বলেন, দিগন্ত টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ আইনের কাছে না গিয়ে গত ১৫ মাস ধরে এই তথ্যমন্ত্রীর কাছে ধরনা দিচ্ছে। এই জন্যই দিগন্ত টেলিভিশন এ দীর্ঘ সময়েও মুখ খুলতে পারেনি। বোবা হয়ে রয়েছে। কাদের সিদ্দিকী বলেন, যারা আমার রাজনৈতিক পিতাকে হত্যা করতে চেয়েছে, তার গায়ের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছে, আজকে সহযোগিতার নাম করে তারাই আমার ভগ্নির চার পাশে অবস্থান নিয়েছে। ভয় হয়, তারাও আমার ভগ্নির ক্ষতি করতে পারে। দুঃশাসন চিরস্থায়ী হয় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ইতিহাসে অন্যায়কারীর বিজয়ের কথা লেখা নেই। তারা সব সময় পরাজিত হয়েছে।  সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারাই গণমাধ্যম দমন করেছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য মিডিয়া বন্ধ করে লাভ নেই। অবিলম্বে দিগন্তসহ বন্ধ সব মিডিয়া খুলে দিন। সরকার অন্ধকারে রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার এখন পথ খুঁজে পাচ্ছে না। দিগন্ত খুলে দিলে তাদের আলোয় সরকার পথ খুঁজে পেতে পারে।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র এক সাথে চলে না। এ জন্য সরকারের কাছে দিগন্ত টিভি খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে  কোনো লাভ নেই। তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই। নির্বাচনব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এ সব নিয়ে কেউ যেন কোনো টুঁ শব্দ করতে না পারে, সে জন্য সম্প্রচার নীতিমালার মাধ্যমে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ ও মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হচ্ছে। এ সাথে বিচারপতিদের অভিশংসনের মতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে বিচার বিভাগকেও নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। তাই কেবল দিগন্ত টিভির জন্য নয়, এ সব পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য চাই জনগণের আন্দোলন। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুর রউফ বলেন, সরকারের কর্মকাণ্ড গণতন্ত্রের পে নয়। তারা মুখে বলে এক কথা, কাজে অন্যরকম। সরকার মনে করছে, এ অবস্থার পরিবর্তন হবে না। কিন্তু এটি তাদের অমূলক চিন্তা। আমরা মনে করি বর্তমান অবস্থা থেকে সরে না এলে তাদের পতন অনিবার্য। নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন, দিগন্ত টিভি কেন বন্ধ করা হয়েছে তা আজো জানা যায়নি। এটি বিনা কারণে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দিগন্ত সবসময় সত্য সংবাদ প্রকাশ করত জানিয়ে তিনি বলেন, শোষক ও শাসকরা সব সময় সত্যের শত্রু। তিনি আরো বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকলে গণতন্ত্র থাকে না। সরকার বলে থাকে তারা গণতান্ত্রিক। এখন দিগন্ত টিভি খুলে দিয়ে তাদের প্রমাণ করতে হবে তারা প্রকৃতই গণতান্ত্রিক।  দিনকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী বলেন, ’৭২-৭৫ আমলে আওয়ামী লীগ সরকার এক দিকে গণমাধ্যম বন্ধ করে দিত, অন্য দিকে বলত আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এখনো তারা তা-ই করছে। তাদের চরিত্র এতটুকুও বদলায়নি। বর্তমান সরকারকে ফ্যাসিস্ট উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের পতন না হলে গণমাধ্যমের মুক্তি মিলবে না।  বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী বলেন, ৫ মে হেফাজতের কর্মসূচি নিয়ে অন্যান্য টেলিভিশন যা প্রচার করেছে দিগন্ত তার থেকে বেশি কিছু করেনি। তারপরও চ্যানেলটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু কেন বন্ধ করা হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট কারণ সরকার জানায়নি। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, যে সরকার দিগন্ত, ইসলামিক টিভি ও আমার দেশ বন্ধ করে দেয়, মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে বন্দী করে রাখে, তারা মিডিয়ার ভালো চায় এমন বক্তব্য শুনে কষ্ট হয়।  বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, দিগন্ত টিভি সত্য গোপন করেনি, এ জন্য জালিম সরকার দিগন্তকে খুন করেছে। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রী পাপ করেছেন। তিনি সম্প্রচার নীতিমালা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, সাংবাদিকরাই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছে। আর আওয়ামী লীগ সব সময় স্বৈরাচারের সাথে আঁতাত করেছে। যারা সত্য থেকে দূরে সরে গেছে তাদের বুঝিয়ে লাভ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, আগামীতে দ্বিতীয় মুক্তিসংগ্রাম শুরু হতে যাচ্ছে। এতে বেগম খালেদা জিয়া নেতৃত্ব দেবেন। সরকারের পতনের মধ্য দিয়েই দিগন্ত টিভি মুক্ত করা হবে।   কলামিস্ট সাদেক খান বলেন, সরকার একনায়কতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাকশালের সময় আইনের শাসন ছিল না। বর্তমানে তার চেয়েও খারাপ অবস্থা চলছে। এ অবস্থা থেকে অবশ্যই জাতির মুক্তি মিলবে। তখন দিগন্ত টিভি আবার সত্য প্রচার করতে পারবে।  দিগন্ত টিভির যুগ্ম-বার্তা সম্পাদক শাহিন হাসনাতের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, বিএফইউজে মহাসচিব এম এ আজিজ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহেনা প্রধান, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, প্রেস কাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বিএফইউজে সিনিয়র সহসভাপতি এম আব্দুল্লাহ, প্রেস কাবের যুগ্ম-সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, স্বাধীনতা ফোরাম সভাপতি ও বিএনপি নেতা আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, বিএনপির সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট ফেরদৌস আক্তার ওয়াহিদা, সাবেক এমপি নিলুফার চৌধুরী মনি, দিগন্ত টিভির বার্তা সম্পাদক জিয়াউল কবির সুমন, বিএফইউজে সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, নির্বাহী সদস্য কবি কামার ফরিদ, ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিক মুহাম্মদ প্রমুখ।  অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, কবি আল মাহমুদ, দিগন্ত টিভির চেয়ারম্যান (এমসি) ইঞ্জিনিয়ার মো: ইসকান্দার আলী খান, পরিচালক কাজী হারুন-অর-রশীদ প্রমুখ।  ছাত্রশিবিরের শুভেচ্ছা : দেশের অন্যতম জনপ্রিয় বেসরকারি টেলিভিশন দিগন্ত টেলিভিশনের ষষ্ঠ বর্ষপূর্তিতে শুভেচ্ছা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস কাবে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মনির আহমেদের নেতৃত্বে শুভেচ্ছা জানান শিবির নেতৃবৃন্দ। দিগন্ত টেলিভিশনের নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলমের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন তারা। এ সময় সহকারী প্রচার সম্পাদক জামাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

No comments:

Post a Comment