Friday, August 29, 2014

হাসি ফিরল মায়ের মুখে:প্রথম অালো

অবশেষে হাসি ফুটল মা রুনা আক্তারের মুখে। সাত দিন পর একসঙ্গে কোলে তুলে নিলেন যমজ দুই ছেলেকে। ‘মনে হচ্ছে, পৃথিবীটাই আমার হাতে পাইছি’—চুরি যাওয়া শিশুকে ফিরে পেয়ে প্রথম প্রতিক্রিয়া তাঁর।  ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া নবজাতকটিকে বুধবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে গাজীপুরের বোর্ডবাজার-সংলগ্ন একটি বাসা থেকে উদ্ধার করেছে র্যাব। গতকাল সাড়ম্বরে তাকে তুলে দেওয়া হয় মায়ের কোলে। আর চুরির অভিযোগে
গ্রেপ্তার দুই নারীকে পাঠানো হয় পুলিশি হেফাজতে। র্যাব জানায়, হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে চুরি করেন ধাত্রী রাশেদা খানম (৪৮)। পরে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে গাজীপুরের বোর্ডবাজারের উত্তর কমলেশ্বর বটতলা এলাকার বেলি আক্তারের (৪৫) কাছে বিক্রি করেন। বেলি আক্তার নিঃসন্তান। ২০ আগস্ট ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যমজ পুত্রসন্তানের জন্ম দেন মোহাম্মদপুরের রুনা আক্তার। র্যাব জানায়, ওই দিনই (২০ আগস্ট) সন্তান জন্ম দেওয়ার কথা বলে নবজাতক ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন রাশেদা খানম। পরদিন রুনার যমজ শিশুর একটি চুরি হয় ওই ওয়ার্ড থেকে। রাজধানীর উত্তরায় র্যাবের সদর দপ্তরে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, রাশেদা এর আগেও এ ধরনের কাজ করেছেন। বিভিন্ন সময় ধাত্রীর কাজ করতে গিয়ে জীবিত বাচ্চাকে মৃত বলে অন্যের কাছে বিক্রি করেছেন। তিনি জানান, হাসপাতালের কোনো কর্মচারী এই শিশু চুরির ঘটনায় জড়িত কি না, তা তদন্ত করা হচ্ছে। র্যাবের উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের কাছে শিশু চুরির কথা স্বীকার করেন রাশেদা খানম। তিনি বলেন, অন্য একজন বেলিকে একটি বাচ্চা এনে দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু দিতে পারেনি। পরে চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে ১৯ আগস্ট মেডিকেলে ভর্তি হন তিনি। পরে শিশুটিকে চুরি করে নিয়ে ৪০ হাজার টাকায় বেলির হাতে তুলে দেন। সংবাদ সম্মেলনেই উদ্ধার হওয়া শিশুটিকে মা রুনা আক্তারের কোলে তুলে দেন র্যাবের কর্মকর্তারা। সন্তানকে ফিরে পাওয়ার জন্য গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান তিনি। নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া দুঃসহ এই অভিজ্ঞতা যাতে অন্য মায়েদের জীবনে না ঘটে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শও দিয়েছেন রুনা। তিনি বলেন, ‘ঠিকমতো না চিনলেও ওই মহিলার (রাশেদা) কোলে বাচ্চা দিয়েছিলাম। এ রকম ভুল যেন অন্য মায়েরা না করেন।’ রুনার স্বামী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী কাওছার হোসেন বলেন, গতকাল সকাল সাতটার দিকে র্যাব থেকে জানানো হয়, তাঁর সন্তানকে উদ্ধার করা হয়েছে। এরপর র্যাবের একটি গাড়িতে করে তাঁদের উত্তরায় র্যাবের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্তানকে ফিরে পাওয়ার পর সেখানেই তাদের নাম ঘোষণা করেন কাওছার। উদ্ধার হওয়া নবজাতকের নাম রেখেছেন এখলাস হোসেন, অন্যজনের নাম ইয়াসিন হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার স্বপ্ন, বড় হয়ে এক শিশু সাংবাদিক হবে, অন্যজন হবে র্যাব।’ র্যাবের কার্যালয়ে রাশেদা খানম সাংবাদিকদের জানান, তাঁর বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। দুই মেয়ে ও এক ছেলে তাঁর। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। ১৬ বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর ধাত্রীবিদ্যায় প্রশিক্ষণ নেন। একসময় উত্তরার গ্রিনল্যান্ড হাসপাতালে কাজ করতেন। পরে গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকায় ওষুধের দোকান দেন। ছেলেকে নিয়ে সেখানেই থাকেন। শিশুটিকে কিনে নিয়েছেন যে বেলি আক্তার, তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ছয় বছর আগে বিয়ে হলেও তিনি নিঃসন্তান। তাই সন্তানের আকাঙ্ক্ষায় রাশেদাকে ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। তবে তাঁর দাবি, ঢাকা মেডিকেল থেকে বাচ্চা চুরি করার বিষয়টি রাশেদা তাঁর কাছে গোপন করেছিলেন। শিশু চুরির ঘটনায় শাহবাগ থানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের করা মামলায় গতকাল বিকেলে রাশেদা ও বেলিকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে র্যাব। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। শিশু চুরির দায় মা-বাবার?: হাসপাতাল থেকে শিশু চুরি হয়ে যাওয়ার জন্য বাবা-মায়ের অসচেতনতাকে দায়ী করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান। গতকাল হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন কথা বলেন। পরিচালক বলেন, অভিভাবকেরা সচেতন থাকলে এ রকম ঘটনা না-ও ঘটতে পারত। সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালের পক্ষ থেকে ‘রোগী রুনা আক্তার ভর্তির পরবর্তী কার্যক্রম’ শিরোনামে এক পাতায় কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়। তাতে লেখা রয়েছে: শিশু দুটি ভূমিষ্ঠের পর তার বাবা-মাকে উপদেশ দেওয়া হয়, ‘হাসপাতাল থেকে মাঝে মাঝে বাচ্চা চুরি হয়, তাই সাবধানে থাকবেন।’ বাচ্চা চুরির বিষয়ে রোগীকে উপদেশ দিলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই শিশু চুরির দায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে কি না, জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, ‘দায় তো আমরা অস্বীকার করছি না। না হলে তো এত খোঁজাখুঁজি করতাম না।’ আগে আরও দুটি শিশু চুরি হয়েছে, যাদের এখনো খোঁজ মেলেনি উল্লেখ করে পরিচালক বলেন, প্রসূতি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪০টি শিশু ভূমিষ্ঠ হয়। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার মায়ের সম্মতি নিয়ে কোনো আত্মীয়র কাছে শিশুটিকে হস্তান্তর করা হয়। হাসপাতালের পক্ষে অনেক সময় তাদের দেখভাল করা সম্ভব হয় না। শিশু চুরির সঙ্গে ঢাকা মেডিকেলের কোনো কর্মীর জড়িত থাকা বা অবহেলার প্রমাণ মিলেছে কি না, জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলে অনেক অনিয়ম আছে। তবে শিশু চুরির সঙ্গে আমার কর্মচারী জড়িত থাকতে পারে না। তবে কখনো আমরা এ রকম সম্পৃক্ততা পেলে সঙ্গে সঙ্গেই ডিসমিস (বরখাস্ত) করে দেব।’ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু ও তার মায়ের জন্য একটি নম্বরসংবলিত একজোড়া স্টিকার দেওয়া হবে। জোড়া স্টিকার ছাড়া কোনো শিশুকে ওয়ার্ডের বাইরে নেওয়া যাবে না।

No comments:

Post a Comment