Sunday, August 24, 2014

মিয়ানমারকে আস্থায় আনতে চায় সরকার:নয়াদিগন্ত

নিরাপত্তা নিয়ে মিয়ানমারকে আস্থায় আনতে চায় সরকার। এ জন্য ভারতের মতো দেশটির সাথে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার পাশাপাশি নিরাপত্তা সংলাপের প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। আগামী ৩১ আগস্ট ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ-মিয়ানমার পররাষ্ট্র সচিবপর্যায়ের বৈঠকে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এসব প্রস্তাব দেবে প্রতিবেশী দেশটিকে। বৈঠকে অংশ নিতে ২৮ আগস্ট ঢাকা আসছেন মিয়ানমারের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান। তিনি ১০ সদস্যের প্রতিনিধ
িদলের নেতৃত্ব দেবেন। বাংলাদেশের নেতৃত্বে থাকবেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সমস্যাকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনসহ (আরএসও) বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের তৎপরতার কারণে বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের নিরাপত্তা সমস্যা দীর্ঘ দিনের। এ ধরনের কোনো গ্রুপকে আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। গত ২৮ মে এই অভিযোগেই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টহল দলের ওপর গুলি চালায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এতে মিজানুর রহমান নামে একজন বিজিবি সদস্য নিহত হন। সীমান্তে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। দীর্ঘ দিন ধরে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সমস্যার একটি সমাধানের জন্য বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সোচ্চার হয়েও কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। রোহিঙ্গাদের নিজেদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ মিয়ানমার সরকার। প্রতিবেশী দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা অং সান সুচিও রাখাইন প্রদেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর বৌদ্ধদের দমন-পীড়নের ব্যাপারে মুখ খোলেন না। এর প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দূর করাকে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। মিয়ানমারের সাথে নিরাপত্তা সংলাপ নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করতে চায় বাংলাদেশ। এ সংলাপটি নিরাপত্তা নিয়ে দুই দেশের উদ্বেগ দূর করার জন্য আলোচনার একটি প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। প্রতি বছর বাংলাদেশ-মিয়ানমার পররাষ্ট্র সচিব বৈঠকের আগের দিন নিরাপত্তা সংলাপ করতে চায় সরকার। নিরাপত্তা নিয়ে প্রতিবেশী দেশটিকে আস্থায় আনতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা মিয়ানমার সফর করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর প্রধান বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। এরপর আসছেন দেশটির বিমানবাহিনী প্রধান। এ ছাড়া সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে বিজিবি প্রধান মিয়ানমার সফর করেছেন। সম্প্রতি সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, মিয়ানমারকে আস্থায় আনতে বাংলাদেশ নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিছু দিন আগে প্রতিবেশী দেশটির একটি ফ্রিগেট নাফ নদীতে তাদের অংশে নাব্যতা সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশ অংশ ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছিল। ভবিষ্যতে তাদের কাছ থেকেও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে এমন বিবেচনায় বাংলাদেশ অনুমতি দিয়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আসন্ন পররাষ্ট্র সচিবপর্যায়ের বৈঠকে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধান, সীমান্ত ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি সইয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে। উপকূলীয় জাহাজ চলাচলের জন্য বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, মংলা, নারায়ণগঞ্জ ও টেকনাফ বন্দরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্য দিকে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন, পাথেইন, সিটওয়ে ও মংডু বন্দরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। উপকূলীয় জাহাজ চলাচল শুরু হলে সমুদ্রগামী জাহাজের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম খরচে দুই দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রফতানি করা যাবে। বৈঠকে বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক সহযোগিতার (বিসিআইএম-ইসি) প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারেও আলোচনা হবে।

No comments:

Post a Comment