Sunday, August 24, 2014

সুশীলসমাজ না জাগলে ফ্যাসিবাদের দিকে যাবে দেশ : মাহমুদুর রহমান মান্না:নয়াদিগন্ত

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল গণতন্ত্র হত্যার নির্বাচন। সরকার বাঘের পিঠে সওয়ার হয়েছে। তাদের এখন গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার পথ নেই। আওয়ামী লীগ ভোটের সামনে দাঁড়াতে পারবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ আছে। সুশীলসমাজকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে মান্না বলেন, বিএনপি হয়তো পারবে বা পারবে না। কিন্তু সুশীলসমাজকে কথা বলতে হবে। গণতন্ত্রের পে দাঁড়াতে হবে। না হলে শেষ পর্যন্ত
দেশ ফ্যাসিবাদের দিকে যাবে।  গতকাল জাতীয় প্রেস কাবে সাউথ এশিয়া ইয়ুথ ফর পিস অ্যান্ড প্রসপারিটি সোসাইটি আয়োজিত ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন, আয়োজক সংগঠনের সভাপতি বদরুদ্দিন উমর। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান। মান্না আরো বলেন, গণতন্ত্র ছাড়া অর্থনৈতিক বিকাশ হয় না। এ কারণে দেশে এখন জিডিপির টার্গেট পূরণ হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরেও পূরণ হবে না। গণতন্ত্র না থাকলে দেশ গজবে পড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ক্রেস্ট থেকে সোনা নিয়ে গেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যায় না। এ ধরনের প্রশ্ন করলেই কেবল চেতনা যায়। সম্প্রচার নীতিমালার সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকার পত্রিকা বন্ধ করে দেবে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করবে। এর প্রতিবাদ করা যাবে না।  মান্না বলেন, দেশের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণ আর গণতান্ত্রিক ধারাকে ফিরিয়ে আনার জন্য তরুণ প্রজন্মকেই এগিয়ে আসতে হবে। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হবে।  সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব:) মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ এখন বাজিকরদের হাতে, আর বাজিকরেরা তাদের গডফাদারদের হাতে। তিনি আরো বলেন, গত ৪৩ বছরে বাংলাদেশে অসুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে। পরিচর্যার অভাবে গণতন্ত্র শুকিয়ে গেছে। হিংসা, বিদ্বেষ, প্রতিপকে ধ্বংস করার মনোভাব বড় হয়ে গেছে। জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, যেদিন থেকে দেশের সংবিধান চালু হয়েছে, সেদিন থেকেই সংবিধানের পাতা কাটা শুরু হয়েছে। এখন আর পাতা কাটার কোনো জায়গা নেই। ৪৩ বছরে যারাই মতায় এসেছে তারাই এ কাজ করেছে। আজ ভোট দেবেন কিন্তু প্রশ্ন করা যাবে না। তিনি আরো বলেন, যে সরকার জনগণের সাথে প্রতারণা করবে কথা দিয়ে কথা রাখবে না তাদের তালাক দেয়া উচিত। আর ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কি বলব? এই সরকার হাইজ্যাকার, ডাকাত এবং চোর। তারা জনগণের ভোট চুরি করেছে, ডাকাতি করেছে। আব্দুর রব বলেন, আজ সংসদে দাঁড়িয়ে মানুষ হত্যার কথা বলা হয় না। খুন, গুম নিয়ে কোনো কথা বলা হয় না। কার জন্ম কবে, কিভাবে এসব নিয়ে আলোচনা করা হয়Ñ এটা তো গণতন্ত্র হতে পারে না। আর ফেনী ও নারায়ণগঞ্জের ঘটনাই বলে দেয় দেশে কতটুকু গণতন্ত্র আছে। এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, আমরা একটি প্রবল হানাহানির আশঙ্কা করছি। গণতন্ত্র আজ হুমকির মুখোমুখি। এ জন্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে না পারলে গণতন্ত্র ফিরে আসবে না। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নোংরা রাজনীতি থেকে সরে আসতে হবে। আর পারিবারিক রাজনীতি থেকে সরে না আসতে পারলে ভবিষ্যতে গণতন্ত্র আসবে না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে আছে। সরকার একটার পর একটা নীলনকশা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা তো আগেই বলেছে, তারা গণতান্ত্রিক ধারাকে পরিবর্তন করে অন্য ধারার দিকে এগিয়ে যেতে চায়।  মূল প্রবন্ধে আতাউর রহমান বলেন, গত ৫ জানুয়ারির প্রধান বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন, রাজনৈতিক সহিংসতা এবং রাষ্ট্রীয় নির্যাতন দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে নিপে করেছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরেও গণতন্ত্রের চর্চা নেই। সেখানে শীর্ষ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হয়। আতাউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস বলে, যেকোনো দল যথাযথ বৈধতা নিয়ে বা বৈধতা ছাড়া যেভাবেই হোক মতায় আসার পর তাদের মনোভাবের পরিবর্তন হয় না। তারা প্রথমে বিরোধীদের মুখ বন্ধ করে দিয়ে বা তাদের জেলে দিয়ে তাদের সঙ্কুচিত করে ফেলে। বাকিদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের পে টেনে নেয়। আর স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের কথা বলে নিজেদের স্বৈরাচারী কাজগুলোর বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করে।  সভায় আরো বক্তব্য রাখেনÑ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম, সাবেক রাষ্ট্রদূত আশফাক চৌধুরী, আয়োজক সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদুল হক প্রমুখ।

No comments:

Post a Comment