প্রশাসনের চাপ ছিল। ছিল মালিকপক্ষের নানা কৌশল। এর মধ্যেই বেতন-ভাতার আন্দোলন চলছিল তোবা গ্রুপের কর্মীদের। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার অনশনের ১১তম দিনে তাঁদের ওপর চড়াও হলো পুলিশ। লাঠিপেটা ও পিপার স্প্রে (একধরনের ঝাঁজালো পদার্থ) করে শ্রমিকদের ভবন থেকে বের করে দেওয়া হলো। রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হলো। এর মধ্যেই তৈরি পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর আয়োজনে দুই মাসের বেতনও নিতে হলো তাঁদের। তিন মা
সের বকেয়া বেতন-ভাতা, ঈদ বোনাস ও ওভারটাইম একসঙ্গে দেওয়ার দাবিতে ঈদের আগের দিন থেকে অনশন করছিলেন তাঁরা। অনশনরত শ্রমিকদের পক্ষে গতকাল দুপুরে শিল্পাঞ্চলসহ দেশের সব পোশাক কারখানায় গতকাল থেকেই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা করেন গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভানেত্রী ও তোবা গ্রুপ শ্রমিক সংগ্রাম কমিটির সমন্বয়ক মোশরেফা মিশু। এরপরই তাঁকে ও শ্রমিকনেত্রী জলি তালুকদারসহ তিনজনকে আটক করে বাড্ডা থানার পুলিশ। সেখান থেকে মিশুকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. মাহফুজুল ইসলাম রাতে প্রথম আলোকে বলেন, মিশুকে বিকেলে তাঁর বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। রাত সোয়া নয়টায় বাড্ডা থানার ওসি বলেন, থানায় এখন আর কেউ আটক নেই। বিকেলে শ্রমিকনেতারা জানালেন, অনির্দিষ্টকালের নয়, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী কাল শনিবার সারা দেশে ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করবেন তাঁরা। এর আগে রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকায় অবস্থিত বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে পুলিশের। পুলিশকে লক্ষ করে তাঁরা ইট-পাটকেল ছোড়েন। রাবার বুলেট এবং পিপার স্প্রে ব্যবহার করে জবাব দেয় পুলিশ। এ সময় আহত হন বেশ কয়েকজন শ্রমিক। আহত হন কয়েকজন সাংবাদিকও। এর মধ্যে গতকালও তোবার শ্রমিকদের বেতন দিয়েছে বিজিএমইএ। শেষ পর্যন্ত এক হাজার ৪৭৫ জন শ্রমিক-কর্মচারী বেতন নিয়েছেন। আর বাকি ২০ জন। রোববারের মধ্যে শ্রমিকেরা তোবা গ্রুপের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জুলাই মাসের বেতন বুঝে পাবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক। এর আগে সদ্য জামিনে বেরিয়ে আসা তোবা গ্রুপের মালিক দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বৈঠক করেন এই দুই মন্ত্রী। এ সময় সঙ্গে ছিলেন বিজিএমইএর নেতারা। শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ: বেলা একটার দিকে মধ্য বাড্ডা ও উত্তর বাড্ডায় অবস্থিত কয়েকটি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এমন ঘোষণার পর এসব কারখানার শ্রমিকেরা রাস্তায় নেমে আসেন। দেড়টার দিকে তাঁরা রাস্তায় জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশ তাঁদের জড়ো হতে না দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। ইট-পাটকেলের জবাবে পুলিশ জলকামান, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। সংঘর্ষ চলাকালে দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ থাকে। সংঘর্ষে বেশ কয়েকটি বাস-মাইক্রোবাসের পাশাপাশি বেসরকারি টেলিভিশন ইনডিপেনডেন্টের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। রাস্তায় অবস্থান নেওয়া একজন শ্রমিক জানান, তোবায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে তাঁরা সেখানে জড়ো হয়েছেন। শ্রমিকদের সঙ্গে যখন পুলিশের সংঘর্ষ চলছিল, ঠিক তখনই দেখা যায় তোবার শ্রমিকেরা হোসেন মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসছেন। এ সময় কেউ কেউ কাঁদছিলেন। এঁদের একজন জরিনা বেগম বলেন, ‘পুলিশ আমাগোরে লাঠি দিয়া পিটাইয়া জোর কইরা নামাইছে।’ আরেক শ্রমিক সুমি বেগম বলেন, ‘পুলিশ কী যেন মারছে, আমার চোখ, হাত-পা, পুরা শরিল জইল্যা যাইতেছে।’ অনশনরত শ্রমিক মো. মিরাজ জানান, কারখানা থেকে বের করতে তাঁদের ওপর ব্যাপক লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। হোসেন মার্কেটে অবস্থিত তোবার পোশাক কারখানায় তাঁরা অনশন করছিলেন। সেখান থেকে সবশেষে বেরিয়ে আসেন মোশরেফা মিশু, জলি তালুকদারসহ কয়েকজন শ্রমিক। এ সময় মিশু সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিলের নেতৃত্বে পুলিশ তাঁদের ভবন থেকে বের করে দিয়েছে। ওই ওসিকে বরখাস্ত করতে হবে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ভবন থেকে বের না হলে অনশনরত নারী শ্রমিকদের ধর্ষণ করার হুমকিও দিয়েছেন ওসি। মিশুর সঙ্গে থাকা তোবার শ্রমিক হাফসা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীও একজন নারী। তাইলে সরকারের একজন ওসি কেমনে মহিলা শ্রমিকগো রেপ (ধর্ষণ) করার কথা কওনের সাহস পায়!’ এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাড্ডা থানার ওসি এম এ জলিল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভবনের ভেতরে আমরা কোনো শ্রমিককে পেটাইনি। তারা স্বেচ্ছায় নেমে এসেছে। পিপার স্প্রে কিংবা গরম পানি ব্যবহারের অভিযোগ সত্য নয়।’ শ্রমিকেরা তো চোখ মুছতে মুছতে বের হচ্ছিল—এ কথা বললে ওসি হাসতে হাসতে বলেন, ‘ভেতরে হয়তো অক্সিজেনের অভাব হচ্ছিল।’ নারী শ্রমিকদের ধর্ষণের হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় হোসেন মার্কেটের সামনে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটের প্রধান ফটকের সামনের ফুটপাত রশি দিয়ে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। কাউকেই সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ জানায়, নিরাপত্তার জন্য প্রধান ফটকে রশি দিয়ে এ বাধা তৈরি করা হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর তোবা ফ্যাশনসের শ্রমিক মো. খোকন জানান, কারখানার ভেতরে পানির সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ এ অভিযোগও অস্বীকার করে। সাড়ে ১১টার দিকে কারখানার পেছনে গিয়ে দেখা যায়, কারখানার ভেতরের শ্রমিকদের খাবার ও পানি দেওয়ার জন্য আসা স্বজনদের পুলিশ সরিয়ে দিচ্ছে। বেলা সোয়া ১২টার দিকে কারখানার পেছনে থাকা সব খাবারের দোকানও বন্ধ করে দেয় পুলিশ। কেন খাবারের দোকান বন্ধ করা হচ্ছে, জানতে চাইলে এক পুলিশ কনস্টেবল বলেন, ‘শ্রমিকেরা তো অনশনে, তাদের আবার খাবার কিসের।’ শ্রমিকদের বের করে দেওয়ার পর সাংবাদিকেরা ভবনের সাত তলায় অনশনস্থলে যেতে চাইলে ওপরের নির্দেশ নেই বলে সেখানে যেতে দেয়নি পুলিশ। তবে বিকেল সোয়া চারটায় পুলিশ সাংবাদিকদের সেখানে নিয়ে যায়। ওপরে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো মেঝেতে ছড়ানো-ছিটানো আছে অনশনকারীদের বিছানা (মূলত পাতলা কম্বল)। একটি টেবিল ফ্যান মেঝেতে পড়ে আছে। ভবনের এক পাশে হালকা
No comments:
Post a Comment