Saturday, August 9, 2014

এবার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে সমঝোতার চেষ্টা চলছে:প্রথম অালো

শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে রাজনীতি ঢুকে পড়ায় চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইউএসটিসি) বিদ্যমান সংকট কাটছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম সারির এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর তা চট্টগ্রামসহ দেশের মধ্যে, এমনকি বিদেশে
ও উচ্চশিক্ষার্থীদের নজর কাড়ে। কিন্তু গত কয়েক মাসের আন্দোলন, অস্থিতিশীলতা এবং স্থানীয় রাজনীতির সম্পৃক্ততায় বিশ্ববিদ্যালয়টি অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। গত ১৮ মে থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অব্যাহত আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকায় দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটি ৬ ও ৭ আগস্ট শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষ্য নিয়েছে।  বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতায় বসতে রাজি হননি। তাঁরা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের মধ্যস্থতায় সমাধান চাচ্ছেন। এ বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নীতিনির্ধারণ, সংকটের সমাধানসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইউজিসি মধ্যস্থতা করতে পারে। সেখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ শোভনীয় বা গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএসটিসির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ট্রাস্টি বোর্ড এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাঁরা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর নির্ভরশীল হয়েছেন।’ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক এ এইচ এম ইসহাক চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা ওনাকে (আ জ ম নাছির উদ্দিন) রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আহ্বান করিনি।উনি যেহেতু বিএমএর উপদেষ্টা, সেহেতু তাঁর উপস্থিতি প্রয়োজন বলে মনে করেছি।’ সংকটকবলিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাসহ পাঁচটি অনুষদে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় চার হাজার। শিক্ষক আছেন প্রায় আড়াই শ। এর মধ্যে চিকিৎসা অনুষদে দুই হাজার ৪০০ এবং অন্যান্য অনুষদে এক হাজার ৬০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন। চিকিৎসা অনুষদের ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থীই বিদেশি। শ্রীলঙ্কা, ভারত, নেপাল, ভুটান, মালয়েশিয়া ও মালদ্বীপের শিক্ষার্থীরা এমবিবিএস ডিগ্রি নিতে সেখানে ভর্তি হয়েছেন। বিক্ষিপ্ত থেকে যৌথ আন্দোলন: বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কয়েক মাস ধরে বিক্ষিপ্ত আন্দোলন চলে আসছে। এমবিবিএস, বিবিএ এবং বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের (এফসেট) শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কয়েক দফা আন্দোলনে বিভিন্ন অনুষদের পরীক্ষা ও শ্রেণি কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে অনেকবার। চলতি বছরের শুরুতে আন্দোলনে নামেন এফসেটের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া গত বছরের শেষ দিকেও তাঁরা কয়েক দফা আন্দোলন করেন। কাছাকাছি সময়ে কয়েকবার আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অনুষদের শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কিন্তু দাবি পূরণে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে গত ১৮ মে থেকে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ও চিকিৎসকেরা সম্মিলিত আন্দোলন শুরু করেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যত দাবি: আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য চান। এমবিবিএস ২৫, ২৬ ও ২৭ ব্যাচের অধ্যয়নরতদের বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) অনুমোদন নেই, এটা পাওয়ার দাবি তাঁদের। ‘প্রকৌশলী’ পদবি ব্যবহার করা নিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্সের সম্মতি নিতে বলেছেন আন্দোলনকারীরা। নিয়মবহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ, বাসস্থানের সুবিধা দেওয়া, বিভিন্ন অনুষদে অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ, প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, চাকরি বিধিমালা (সার্ভিস রুল) বাস্তবায়ন, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যুগোপযোগী বেতনকাঠামো নির্ধারণ, বদলি ও হয়রানি বন্ধের দাবিতে আন্দোলন চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিএমডিসির অনুমোদনের বিষয়ে ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা কর্তৃপক্ষ হিসেবে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ফর ইউএসটিসির নিবন্ধনের কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া আচার্যের মাধ্যমে স্থায়ী উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য নিয়োগের চেষ্টা চলছে। চলছে সমঝোতার চেষ্টা: গতকাল শুক্রবার আন্দোলনকারীদের মধ্যে সমঝোতা চুক্তির বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। এর সত্যতা স্বীকার করে ইসহাক চৌধুরী জানান, ‘আশা করছি, আগামী দু-এক দিনের মধ্যে আমরা ইতিবাচক সমাধানে পৌঁছতে পারব।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য রেজাউল করিম বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে একটি খসড়া আমাদের দেওয়া হয়েছে। তাঁদেরকে আমরাও একটি খসড়া কপি দিয়েছি। আশা করছি, শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।’ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, নীতিগতভাবে দুই পক্ষ কাছাকাছি এসেছে। দুই পক্ষের সঙ্গেই তিনি কথা বলেছেন। আস্থাহীনতার কারণে তাঁরা সমঝোতায় আসতে পারছিলেন না বলে মনে করেন ওই নেতা।

No comments:

Post a Comment