Thursday, August 14, 2014

ছয় সহস্রাধিক চিকিৎসকের পদায়ন ঘিরে বেসামাল তদবির:যুগান্তর

সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ছয় সহস্রাধিক চিকিৎসকের পদায়ন ঘিরে নির্বিচারে তদবির চলছে স্বাস্থ্য খাতে। তদবিরবাজদের দাপটে অতিষ্ঠ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। সুবিধাজনক জায়গায় পদায়ন পাইয়ে দেয়ার বিনিময়ে টাকা-পয়সা লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে কতিপয় অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে। অভিযোগ করেছে চিকিৎসকদের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। ৩৩তম বিসিএসে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের পদায়নের ক
াজ চলছে মন্ত্রণালয়ে। এক্ষেত্রে সুবিধাজনক স্থানে পদায়ন পেতে প্রার্থীরা বেসামাল তদবির চালাচ্ছেন। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব ‘অনৈতিক চাপের’ কারণে সুষ্ঠুভাবে পদায়নের কাজ বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। সূত্রগুলো বলছে, গত ৭ আগস্ট কাজে যোগ দেয়া চিকিৎসকদের পদায়ন বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। সে অনুযায়ী আজ মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বসবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সূত্র জানিয়েছে, কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর পদায়নের তালিকা প্রকাশিত হতে পারে। আবার দু-এক কার্যদিবস বেশি সময়ও লাগতে পারে। পদায়ন ঘিরে অব্যাহত তদবির ও অন্যান্য অভিযোগের মধ্যে বুধবার বিএমএ বলেছে, কতিপয় অসাধু ব্যক্তি বা চিকিৎসক সংগঠনের সিনিয়র নেতাদের নাম ভাঙিয়ে নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, পদোন্নতির কথা বলে অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে আইনশৃংখলা বাহিনী এবং সংগঠনের সভাপতি ও মহাসচিবকে অবহিত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, নতুন চিকিৎসকরা বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি ধরে পছন্দের স্থানে (বিশেষত ঢাকার আশপাশে) পদায়ন পেতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। এমন সব জায়গা থেকে তদবির আসছে যেগুলো অগ্রাহ্য করা চলমান প্রেক্ষাপটে মুশকিল। নতুন চিকিৎসকদের পদায়ন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী বেশ কয়েকবার বলেছেন, নিজ নিজ জেলা অথবা সংশ্লিষ্ট বিভাগের আওতাভুক্ত জেলায় কমপক্ষে দু’বছর কাজ করতে হবে। সে অনুযায়ী বিভাগীয় পরিচালকদের (স্বাস্থ্য) সুপারিশের ভিত্তিতে ফাইলপত্র অগ্রায়ণ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগবিধির আংশিক পরিবর্তন করে গ্রামীণ এলাকায় থাকা বাধ্যতামূলক করে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। কিন্তু যুগান্তরের সূত্রগুলো বলছে, সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই নতুন চিকিৎসকদের। উল্টো পছন্দের জায়গায় পোস্টিং পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তারা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (পার) হাবিবুর রহমান খান বলেন, পদায়নের আদেশ দ্রুত জারি করতে সারাক্ষণই কাজ করছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে পদায়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি। তবুও মন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে পদায়ন দিতে চেষ্টা চলছে। মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) বাসুদেব গাঙ্গুলী যুগান্তরকে বলেন, দ্রুততার সঙ্গে পদায়ন আদেশ জারি করে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রাথমিক কাজগুলো সম্পন্ন করে ফাইলপত্র অগ্রায়ণ করেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, ঢাকার আশপাশের জেলায় পদায়ন পেতে এমনকি অন্য জেলার প্রার্থীরাও বিভিন্নভাবে তদবির করছেন। এরা আসলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তকে (নিজ নিজ জেলায় পদায়ণ) ভণ্ডুল করতে চাইছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, ঢাকার আশপাশের জেলায় শূন্য পদের সংখ্যা কমবেশি ৫০০। কিন্তু এ বিভাগের জেলাগুলো থেকে চাকরি পেয়েছেন কয়েকগুণ বেশি চিকিৎসক। অগত্যা প্রার্থীদের মেধা তালিকা মূল্যায়নের ভিত্তিতে পদায়নের বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। চিকিৎসকদের পদায়নের বেলায় স্বামী-স্ত্রী যাতে কাছাকাছি স্থানে থাকেন সেটি বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। নিজ জেলায় শূন্য পদ না পেলে পার্শ্ববর্তী জেলায় দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল যুগান্তরকে বলেন, বিভাগীয় পরিচালকরা (স্বাস্থ্য) শূন্যপদ অনুযায়ী কাকে কোন উপজেলায় দেয়া যায় সে বিষয়ে সুপারিশ দিয়েছেন। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। টাকা আদায়ের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির কোনো কোনো চিকিৎসকসহ এক বা একাধিক স্বার্থান্বেষী মহল এসব কাজে জড়িত থাকতে পারে।  

No comments:

Post a Comment