Thursday, August 14, 2014

পাসের হারে মেয়েরা এগিয়ে:যুগান্তর

সারা দেশে একযোগে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে বুধবার। ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় এবার পাসের হার ৭৫ দশমিক ৭৪ ভাগ। সারা দেশের সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং মাদ্রাসা, কারিগরি ও ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিজসহ দশ বোর্ডে সম্মিলিত পাসের হার ৭৮ দশমিক ৩৩ ভাগ। এ ক্ষেত্রেও গত বছরের তুলনায় ভালো করেছে। গত বছর ১০ বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭৪ দশমিক ৩০ ভাগ। ২০১২ সালে এই হার অবশ্য
আরও বেশি ছিল, ৭৮ দশমিক ৬৭ ভাগ। এবারের ফলাফলের বিশেষত্ব হল পাসের হারে মেয়েরা আর জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যায় ছেলেরা এগিয়ে। ১০টি শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষায় মোট অংশ নিয়েছিল ১১ লাখ ২৯ হাজার ৯৭২ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৭০ জন। এর মধ্যে ছেলে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ২১৪ জন ও মেয়ে ৪ লাখ ১৭ হাজার ৮৫৬ জন। ছেলে পাসের হার ৭৭.৮৬ আর মেয়ে ৭৮.৮৬ ভাগ। তবে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির বিচারে মেয়েদের পেছনে ফেলে ছেলেরা ভালো করেছে। দশটি বোর্ডে মোট জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ছেলেরা পেয়েছে ৩৮ হাজার ৭৮৭ জন আর মেয়ে ৩১ হাজার ৮১৫ জন। এ বছর ৩ এপ্রিল থেকে ৮ জুন পর্যন্ত সারা দেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেয়া হয়। এবারের পরীক্ষায় ইংরেজি ও গণিতসহ সৃজনশীলের কয়েকটি বিষয়ের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোয় এবারের এইচএসসিতে পাসের হার গত ৫ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রথম সর্বোচ্চ পাসের হার ছিল ২০১২ সালে। ওই বছর পাসের হার ছিল ৭৬ দশমিক ৫০ ভাগ। তবে গত বছরের চেয়ে এবার পাস বেড়েছে ৪ ভাগের বেশি। গত বছর এই পাসের হার ছিল ৭১ দশমিক ১৩ ভাগ। আর ২০১১ সালে পাসের হার ছিল ৭২ দশমিক ৩৬ ভাগ এবং ২০১০ সালে পাসের হার ছিল ৭১ দশমিক ৮২ ভাগ। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম বছর বা ২০০৯ সালের চেয়ে এবারের পাসের হার ৫ ভাগেরও বেশি বেড়েছে। ওই বছর এইচএসসিতে মোট পাসের হার ছিল ৭০ দশমিক ৪৩ ভাগ। পাসের হার গত বছরের তুলনায় ভালো হওয়ার পেছনে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতির প্রভাব ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন আজকের প্রজন্ম আগের প্রজন্মগুলোর চেয়ে অনেক বেশি মেধাবী। তারা সারা বিশ্ব সম্পর্কে খোঁজ রাখে। যে কারণে তাদের পরীক্ষার ফলাফল দিন দিন ভালো হচ্ছে। একদিন এই পাসের হার শতভাগে পৌঁছবে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রী দিনাজপুর বোর্ডের অধীন দিনাজপুর সরকারি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, উথরাইল সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসা এবং টেকিনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন। ফল প্রকাশ উপলক্ষে বেলা ১টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে ফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। অবশ্য এর আগে সকাল ১০টায় তিনি সব বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে দেন। ফল হাতে পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী উত্তীর্ণদের অভিনন্দন জানান। একই সঙ্গে অনুত্তীর্ণদের সান্ত্বনা জানিয়ে বলেন, ‘যারা ভালো করতে পারনি, তারা এখন থেকে প্রস্তুতি নাও পরবর্তীকালে ভালো করার জন্য।’ ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবার শুধু পাসের হারে নয়, জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও গত বছরের চেয়ে বেশি। ১০টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭০ হাজার ৬০২ জন। গত বছর এই সাফল্য পেয়েছিল ৫৮ হাজার ১৯৭ জন। এর আগের বছর বা ২০১২ সালে অবশ্য জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৬১ হাজার ১৬২ জন। গত বছরের তুলনায় এবার এই সাফল্য বেশি পেয়েছে ১২ হাজার ৪০৫ জন। অপরদিকে এইচএসসির ৮ বোর্ডে এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৭ হাজার ৭৮৯ জন। গত বছর এই সাফল্য অর্জনকারী ছিল ৪৬ হাজার ৭৩৬ জন। পাবলিক পরীক্ষায় ফেলের হারের বিষয়টি ছিল একটি স্বাভাবিক ঘটনা। সেখানে বিগত বছরগুলোতে অবশ্য বিপরীত চিত্র দাঁড়িয়েছে। এখন পাসের হারের এতই ছড়াছড়ি যে, ফেল কতজন করল সেই প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। ফলে বুধবার সকালে শিক্ষার্থীরা ভয়-উদ্বেগ নিয়ে দুরুদুরু বুকে কলেজে গেলেও বেশির ভাগই হাসিমুখ নিয়ে বাসায় ফিরেছে। শিক্ষক-অভিভাবকরাও সন্তুষ্টচিত্তে ছিলেন। যথারীতি মিষ্টির দোকানগুলোতে ভিড় ছিল লক্ষণীয়। অনেক স্থানে মিষ্টি কেনার এতই ধুম ছিল যে, শেষ পর্যন্ত মিষ্টি অনেকে কিনতেও পাননি। এবারও পঞ্চমবারের মতো ইন্টারনেটে ই-মেইলের মাধ্যমে ফল পাঠানো হয় কলেজগুলোতে। সে অনুযায়ী বেলা দেড়টায় ইন্টারনেটের ই-মেইলের মাধ্যমে সারা দেশে একযোগে এই ফল পাওয়ার কথা। কিন্তু সারা দেশের ৭ হাজার ৯৪৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ই-মেইলে ফল পেতে দারুণ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। অনেকেই ডিজিটাল বিড়ম্বনায় পড়ে বিকালের পরিবর্তে সন্ধ্যার পর ফল জানতে পেরেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জেলা সদর থেকে লোক পাঠিয়ে ফল গ্রহণ করতে হয়েছে অনেক কলেজ-মাদ্রাসাকে। ফলে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আনন্দ-উল্লাসে কিছুটা ভাটার সৃষ্টি হয়। এর বাইরে অনলাইনে এবং মোবাইল ফোনের এসএমএসের মাধ্যমেও ফল জানার ব্যবস্থা ছিল। তবে অনলাইনেও যথারীতি ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল। এসএমএসে অবশ্য ভোগান্তি তুলনামূলক কম ছিল। শিক্ষা বোর্ডগুলো এ ব্যাপারে অবশ্য বলেছে, যান্ত্রিক কারণে সামান্য ত্র“টি-সমস্যা হতেই পারে। এজন্যই ফল জানার বিকল্প পদ্ধতিও রাখা হয়েছে। জেলায় ডিসি অফিস থেকে সনাতনী পদ্ধতিতে জানার ব্যবস্থা ছিল। ২০০৯ সালে ৩শ’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ই-মেইলে এসএসসির ফলাফল পাঠানোর মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। এদিকে দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, অতিরিক্ত ক্লাস নেয়াসহ নানা কারণে এবারের ফলাফল ভালো হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী ফেল করার জন্য লেখাপড়া করে না। কোনো শিক্ষক তার শিক্ষার্থীকে ফেল করার জন্য পড়ায় না। তেমনিভাবে অভিভাবকরাও সন্তানকে ফেল করার জন্য প্রতিষ্ঠানে পাঠান না। তাই শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করেই পাস করেছে। তিনি আরও বলেন, পাসের হার নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন। আমি বলব, এটা আধুনিক যুগের প্রশ্ন হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, কেউ কেউ বলেন, আমরা খাতা দেখার সময় নম্বর বাড়িয়ে দিতে বলেছি, এভাবে নানাভাবে আমাদের বিব্রত করার চেষ্টা করেন। তবে আমরা বিব্রত হই না। কারণ নম্বর বাড়িয়ে দেয়ার কথা বলা হয় না। মন্ত্রী বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, সৃজনশীল পদ্ধতি চালু ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দিয়ে শিক্ষকদেরও ক্লাস নেয়া হচ্ছে। সেরা শিক্ষকদের ক্লাস বিটিভিতে প্রচার, ইংরেজি ও গণিতসহ বিভিন্ন বিষয়ে ১১ লাখ অতিরিক্ত ক্লাস নেয়া হয়, যার ইতিবাচক ফল পাচ্ছি। এবার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠলে ঢাকা বোর্ডের গণিত দ্বিতীয় পত্র ও ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি। তবে প্রশ্ন ফাঁসের প্রভাব ফলাফলে পড়েনি দাবি করেন শিক্ষামন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক, অতিরিক্ত সচিব সোহরাব হোসাইন, এসএ মাহমুদ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন, ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগমসহ বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন। সেরা কলেজ নির্বাচনে গত বছরেরই মানদণ্ড বিবেচনায় নেয়া হয়। এবার এইচএসসিতে সেরা কলেজের তালিকায় উত্থান-পতন ঘটেছে। ঢাকা বোর্ডে সেরা কলেজের তালিকায় রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ প্রথম হলেও এই তালিকা অখ্যাত এবং নতুন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জায়গা করে নিয়েছে। এসবের মধ্যে বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ফল পুনঃনিরীক্ষণের সময়সূচি : পুনঃনিরীক্ষণের জন্য এসএমএসের মাধ্যমে আজ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করা যাবে। এজন্য শুধু টেলিটক মোবাইল থেকে মেসেজ অপশনে গিয়ে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে শিক্ষা বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে স্পেস দিয়ে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। প্রতিটি বিষয় বা পত্রের জন্য ১৫০ টাকা ফি ধার্য করা হয়েছে। ফিরতি এসএমএসে আবেদন ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর দেয়া হবে। আবেদনে সম্মত থাকলে মেসেজ অপশনে গিয়ে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ণঊঝ লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে মোবাইল নম্বর দিয়ে পুনরায় ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। যেসব বিষয়ের দুটি পত্র (যেমন- বাংলা ও ইংরেজি) রয়েছে, সেসব বিষয়ে একটি বিষয় কোডের বিপরীতে আবেদন দুটি পত্রের আবেদন হিসেবে বিবেচিত হবে এবং আবেদন ফি ৩০০ টাকা নেয়া হবে। একই এসএমএসে একাধিক বিষয়ের আবেদন করা যাবে, এ ক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে কমা দিয়ে লিখতে হবে।  

No comments:

Post a Comment