Saturday, August 9, 2014

স্বাধীনতার পর থেকে উদ্ধার হয়নি দুই শতাধিক ডুবে যাওয়া নৌযান:নয়াদিগন্ত

স্বাধীনতার পর থেকে ডুবে যাওয়া দুই শতাধিক নৌযান উদ্ধার হয়নি। এর মধ্যে এক শ’র মতো রয়েছে যাত্রীবাহী নৌযান। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, দক্ষ জনশক্তি এবং কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই এগুলো উদ্ধার সম্ভব হয়নি বলে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন। অনেকে অবাক হয়েছেন। যেখানে সমুদ্র তলদেশ থেকে অনেক কিছু উদ্ধার সম্ভব হচ্ছে সেখানে অল্প গভীরতায় ডুবে যাওয়া নৌযান উদ্ধার হবে না কেন? কেউ কেউ বলেছেন, লঞ্চ ডুবে মানুষ মরার দায় সরকার ও রাষ্ট্র
এড়াতে পারে না। এর বেশির ভাগই হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করেন তারা।  বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ১৯৭৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত দেশে নৌযান দুর্ঘটনার সুনির্দিষ্ট এবং কোনো সঠিক জরিপ নেই। অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল অধ্যাদেশ ১৯৭৬ (আইএসও) জারির আগ পর্যন্ত ওভাবে কোনো হিসাব রাখা হয়নি। সূত্র জানায়, ১৯৭৬ সাল থেকে যে হিসাব রয়েছে তাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডুবে যাওয়া নৌযানের মধ্যে দুই শতাধিক উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে এক শ’র মতো রয়েছে যাত্রীবাহী নৌযান। নৌ-সড়ক ও রেলখাত রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আশীষ কুমার দে নয়া দিগন্তকে বলেছেন, এই নৌযানগুলো উদ্ধার না হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। তিনি বলেছেন, অনেক নৌযানের রেজিস্ট্রেশন নেই। অথবা রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দুর্নীতি আছে। ওগুলো মালিক নিজেই চায় না উদ্ধার হোক। কোনো কোনো মালিক ওই নৌযানের মালিকানাও স্বীকার করেন না। উদ্ধার করার জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ না থাকায় অনেক সময় ডুবে যাওয়া নৌযান উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। সময়মতো কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে না পৌঁছানোও একটি কারণ বলে তিনি উল্লেখ করেন। আর সর্বোপরি কিছু কিছু নৌযান ডুবে গেলে তা উদ্ধার সম্ভব হয় না। সময়মতো উদ্ধারকারীরা না পৌঁছানোর ফলে ডুবে যাওয়া নৌযানের উপরে পলি পড়ে যায়। তখন আর তা শনাক্ত করাই সম্ভব হয় না।  সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৩ সালে চাঁদপুরের মেঘনা মোহনায় এমভি নাসরিন, ২০১২ সালে ভোলার মেঘনায় তেলবাহী জাহাজ এমটি মেহের এবং সর্বশেষ পদ্মায় ডুবে যাওয়া পিনাক-৬ সহ অনেক নৌযানই ডুবে যাওয়ার পরে উদ্ধার হয়নি। সূত্র জানায়, নৌযান ডুবে যাওয়ার পরে তা উদ্ধারের জন্য দেশে চারটি উদ্ধার জাহাজ আছে। এগুলো হলো রুস্তুম, হামজা এবং সর্বশেষ দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৩৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নিয়ে আসা নির্ভীক ও প্রত্যয়। গত মার্চ মাসে এই দু’টি উদ্ধার জাহাজ যাত্রা শুরু করে। সূত্র জানায়, অত্যাধুনিক বলে প্রচার করা হলেও সর্বশেষ দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ক্রয় করা এই দুই জাহাজ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সম্প্রতি এমভি মিরাজ ডুবে যাওয়ার পরে তা উদ্ধার করতে গিয়ে প্রত্যয়ের ক্রেনের তার ছিঁড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে উদ্ধারকারী জাহাজের ক্রেনে ৯০ ডিগ্রি ঘুরে উদ্ধারকাজ চালানোর কথা; কিন্তু এই দু’টি জাহাজের ক্রেন ঘুরতে পারে মাত্র ২৫ ডিগ্রি। সূত্র জানায়, এর প্রতিটি জাহাজের ২৫০ মেট্রিক টন উদ্ধারের ক্ষমতা রয়েছে বলে কাগজে-কলমে আছে; কিন্তু বাস্তবে উদ্ধার সক্ষমতা এতটা নেই বলে সূত্র জানিয়েছে। একাধিক সূত্র জানায়, উদ্ধারকারী জাহাজ পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবলেরও অভাব রয়েছে। নৌ বাণিজ্য অধিদফতরের সাবেক মুখ্য কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মো: হাবিবুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, ডুবে যাওয়া নৌযান উদ্ধার না হওয়ার বিষয়টি অবাক কাণ্ড। তিনি বলেন, নৌযান ডুবে গেলে প্রথমতো সেটিকে চিহ্নিত করতে হবে। সাগরের নিচেও অনেক কিছু চিহ্নিত হয়ে যায়। আর পিনাক যেখানে ডুবেছে তার গভীরতা তো বেশি নয়। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব আছে। না হলে উদ্ধার হবে না কেন? তিনি বলেন, নৌ দুর্ঘটনা এটাই শেষ নয়। আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযুক্ত উদ্ধার জাহাজ দরকার বলে তিনি উল্লেখ করেন। বুয়েটের নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আব্দুর রহিম নয়া দিগন্তকে বলেন, কয়েক বছর আগে একটি বিমান দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে সমুদ্রে পড়েছিল। সেই টুকরাগুলো যদি উদ্ধার করা সম্ভব হয় তবে এই লঞ্চ ডুবে গেলে তা উদ্ধার সম্ভব হবে না কেন। তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে দু’টি উদ্ধার জাহাজ আনা হয়েছে। বলা হয়েছে তা অত্যাধুনিক। তা দিয়েও কেন ডুবে যাওয়া এই লঞ্চ উদ্ধার সম্ভব হলো না? তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে জ্ঞান ও প্রযুক্তি দরকার। সেটি উচ্চ প্রযুক্তি হতে হবে এমন নয়, তবে স্থান কাল পাত্র ভেদে যন্ত্রপাতির সন্নিবেশিত হতে হবে। আমাদের যা প্রয়োজন সেই যন্ত্রপাতি থাকতে হবে। প্রশিক্ষিত জনবল থাকতে হবে।  এ দিকে, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান ড. শামসুদ্দোহা খন্দকার নয়া দিগন্তকে বলেন, ডুবে যাওয়া পিনাক-৬ উদ্ধারে আমরা এখনো আশাবাদী। যদি না পারি সে ক্ষেত্রে যে কারণগুলো থাকবে তা হচ্ছে নদীতে প্রচণ্ড স্রোত। প্রতি সেকেন্ডে ১৮ ফিট স্রোত বয়ে যায়। স্রোতের টানে লঞ্চটি দূরে কোথাও চলে যেতে পারে। এরপর বালু ও কাদায় তা ঢাকা পড়তে পারে। এ ছাড়া নদীর তলদেশে বড় বড় গর্ত আছে। এসব গর্তের মধ্যে লঞ্চটি পড়ে যেতে পারে। তখন শনাক্ত এবং উদ্ধার না-ও হতে পারে। তিনি বলেন, এর সাথে বৈরী আবহাওয়া তো রয়েছেই। ড. শামসুদ্দোহা বলেন, যে যন্ত্রপাতি রয়েছে তা যথেষ্ট। মাটির নিচে ৬০ ফিট পর্যন্ত কোনো কিছু শনাক্ত করার যন্ত্রও ব্যবহার হচ্ছে।

No comments:

Post a Comment