পাকিস্তান সরকার দু’জন বিরোধী রাজনীতিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা গতকাল সকালে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সদর দফতরে হামলা চালিয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য তা দখলে নেয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়। ইসলামাবাদের পুলিশ স্টেশন সেক্রেটারিয়েট সন্ত্রাসবাদ দমন আইনে তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতা ইমরান খান ও ধর্মীয় নেতা তাহিরুল কাদরির বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করে। তাদের শত শত সমর্থক সেখানে
দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি, রাষ্ট্রীয় ভবনের ক্ষতিসাধন ও নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর হামলায় অংশ নেয়। এ দিকে মুখ খুলতে শুরু করেছেন পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সদ্য বহিষ্কৃত প্রেসিডেন্ট জাভেদ হাশমি। দলের প্রধান ইমরান খান তাকে বহিষ্কার করার পরদিনই গতকাল সোমবার হাশমি বলেছেন, ইমরান খান তাদের জানিয়েছিলেন, সেনাবাহিনীর সহায়তা ছাড়া তারা আন্দোলনের পথে অগ্রসর হতে পারবেন না। এমনকি ইমরান এ-ও বলেছিলেন, সেপ্টেম্বরেই নির্বাচন হবে, সব আগেভাগেই ঠিক করা হয়েছে। জিও নিউজের খবরে জানানো হয়, সোমবার রাজধানী ইসলামাবাদে পার্লামেন্ট হাউজের বাইরে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের এ কথা বলেন হাশমি। আল জাজিরা, দ্য ডন। সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা গতকাল স্বল্প সময়ের জন্য রাষ্ট্রপরিচালিত টেলিভিশন কেন্দ্র পিটিভি ভবন দখল করে নেয় এবং ৪৫ মিনিটের জন্য উর্দু ও ইংরেজি খবর সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। পরে আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা এসে বিক্ষোভকারীদের বের করে দিলে সম্প্রচার আবার শুরু হয়। পাকিস্তানে রাজনৈতিক সঙ্কট চলার মধ্যে গতকাল সোমবার ইসলামাবাদে দেশটির সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সাথে বৈঠক করেছেন। তবে তাদের মধ্যকার বৈঠক অনুষ্ঠানের পর কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি। তবে গত রোববার সেনাবাহিনী বলেছিল, রাজনৈতিক সঙ্কট আরো ছড়িয়ে পড়ার মুখে তা নিরসনে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ সঙ্কটের আরো অবনতি ঘটাবে। বিরোধী নেতারা দুর্নীতি ও গত বছরের সাধারণ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পদত্যাগ দাবি করছেন। ওই নির্বাচনে নওয়াজ শরিফের দল জয়ী হয়। বিক্ষোভকারীরা তিন দিন ধরে সরকারি ভবনগুলোতে ঢোকার চেষ্টা এবং তিন সপ্তাহ ধরে অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন। সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান ও কানাডাভিত্তিক ধর্মীয় নেতা কাদরির বিরুদ্ধে এআইআর বিধির আওতায় মামলা রুজু করা হয়েছে। এ দিকে ইমরান খান ইসলামাবাদ পুলিশ প্রধানের কাছে আটক তার তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টি এবং কাদরির রাজনৈতিক আন্দোলন পাকিস্তান আওয়ামী তেহরিকের সব সমর্থকের মুক্তি দাবি করেছেন। ইমরান আরো বলেছেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের হত্যার অভিযোগে তারা সরকারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করবেন। এর আগে তিনি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলার নিন্দা জানান। দুর্নীতি ও নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পদত্যাগের দাবিতে ইসলামাবাদের সুরক্ষিত রেড জোনে দুই সপ্তাহ ধরে বিােভ করছে (পিটিআই) ও ধর্মীয় নেতা তাহির-উল-কাদরির দলের সমর্থকেরা। প্রধানমন্ত্রী তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফ শুক্রবার চলমান অচলাবস্থার মধ্যে মধ্যস্থতার কথা বলেন। সেনাবাহিনী রোববার রাতে চলমান সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সরকার ও বিক্ষোভকারীদের প্রতি আহ্বান জানায়। তবে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হওয়ার পর ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখার’ বিষয়েও সতর্ক করে দেয় সেনাবাহিনী। ইমরান খান ও কাদরি উভয়ে তাদের সমর্থকদের শান্ত ও সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন। শনিবার রাতে ইমরান ও কাদরির সমর্থকেরা ইসলামাবাদে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এরপর মধ্যরাতে তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ইসলামাবাদ, লাহোর ও করাচি শহরে। সোমবার সকালে রাজধানীতে ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ হয়। তিন হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী সকালে ফের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে এ সংঘর্ষ বাধে। বিােভকারীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে এবং কয়েকজন লাঠি দিয়ে সেখানে রাখা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। পুলিশও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করে। তবে বৃষ্টির কারণে তা তেমন কাজে আসেনি। সোমবারের সহিংসতায় বেশ কয়েকজন পুলিশ আহত হন। নওয়াজের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামছে এমকিউএম। পাকিস্তানের মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টের (এমকিউএম) নেতা ড. ফারুক সাত্তার এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতিবাদকারীদের ওপর পুলিশের এই নির্যাতন বন্ধ না হলে, আমরাও রাস্তায় নামতে বাধ্য হবো।’ তার দাবি, দেশটিতে সরকারবিরোধী যে আন্দোলন চলছে তার শান্তিপূর্ণ সমাধানের যে চেষ্টা এমকিউএম করছে, সরকারের কারণেই তা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনীর সাথে ইমরানের আঁতাত! সোমবার জাভেদ হাশমি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইমরান খান বলেছিলেন, আমরা সেনাবাহিনী ছাড়া এগোতে পারব না। সব বিষয় নির্ধারণ হয়ে আছে, সেপ্টেম্বরে নির্বাচন হবে।’ যেন সবকিছু আগে থেকেই পরিকল্পিত ছিল। ইমরান খানকে উদ্ধৃত করে হাশমি বলেন, ‘প্রতীক ধারকেরা (সেনাবাহিনী) চেয়েছিলেন পিটিআইয়ের আন্দোলনকারীরা পাকিস্তান আওয়ামী তেহরিকের (পিএটি) নেতা তাহির-উল-কাদরির সাথে একত্রে আন্দোলন করুক।’ জাভেদ হাশমি বলেন, ‘এর মানে তারা এখানে এসব পরিকল্পনা নিয়েই নেমেছে। আমি জানি না, এটা ঠিক কার পরিকল্পনা। শুধু পরিকল্পনাকারীরা এ বিষয়ে জানে।’ চলমান সঙ্কটের জন্য পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও সেনাবাহিনীর নাম উঠে এসেছে বলে মন্তব্য করেন হাশমি। তিনি বলেন, ‘ইমরান খান নিজেই দলের কেন্দ্রীয় কমিটিকে এ বিষয়ে আগে বলেছেন।’ হাশমি মন্তব্য করেন, ইমরান খান ঝোঁকের বশে চালিত হচ্ছেন এবং পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টকে অপমানিত করছেন। পার্লামেন্ট, সুপ্রিম কোর্ট ও দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা রক্ষায় প্রয়োজনে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত আছেন বলে জানান হাশমি। নিজেকে এখনো পিটিআইয়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দাবি করে জাভেদ হাশমি মন্তব্য করেন, ইমরান দলের সংবিধান মানেননি। তিনি বলেন, ইমরান খানের উচিত ছিল দলের সংবিধান অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া। দ্য ডন। নওয়াজকে পদত্যাগের প্রস্তাব সেনাপ্রধানের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সাথে টানা দুই ঘণ্টা বৈঠক করলেন সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফ। দীর্ঘ এ বৈঠকে তিনি নওয়াজকে এক মাসের জন্য পদত্যাগ করাসহ অনেক অপশন দিলেন। তিনি পদত্যাগ করলেও ওই এক মাসে গত বছরের নির্বাচন নিয়ে যে কারচুপির অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করা হবে। তবে সেনাপ্রধানকে নওয়াজ জানিয়ে দিলেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল খবর দিয়েছে, বৈঠকে নওয়াজ শরিফকে সেনাপ্রধান পদত্যাগ করতে অনুরোধ করেছেন। তবে এই রিপোর্ট প্রচার হওয়ার পর পরই আইএসপিআর থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এমন খবর ভিত্তিহীন।
No comments:
Post a Comment