আন্দোলনে ‘অপ্রস্তুত’ বিএনপি জোটকে এখনই মাঠে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সরকারবিরোধী এই জোটকে রাজনীতির মাঠে নামাতে খুব কৌশলী তারা। সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন মামলায় তড়িঘড়ি চার্জশিট প্রদান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির শীর্ষনেতাদের জড়ানো, জিয়াউর রহমানের পরিবার নিয়ে বিষোদগার, সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়নসহ নানা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিরোধী জোটকে রাজপথে নামতে একরকম ‘প্ররোচনা’ দেয়া হচ্
ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। তবে বিষয়টি এড়িয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপি বর্তমানে একটা ভঙ্গুর রাজনৈতিক দল। তাদের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই। অতীতেও কোনো ধরনের আন্দোলনে জনগণকে তারা সম্পৃক্ত করতে পারেনি। দলের সিনিয়র নেতাদের ওপর মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা ব্যাপক ুব্ধ। তাই তারা মাঠে নামতে পারছে না। এ ছাড়া ৫ জানুয়ারির আগমুহূর্তের চরম অস্থিতিশীলতা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছেন। এখন মাঠে নামার মতো তেমন কোনো ইস্যুও নেই। আর মামলার বিষয়গুলো আদালতের ব্যাপার। সেখানে সরকারের কিছু করার নেই। এসব বিষয় নিয়ে তারা মাঠে নামলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবেই মোকাবেলা করা হবে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে পড়েছে। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতারও সমালোচনা হচ্ছে দলের মাঠপর্যায়ে। দলটির সাংগঠনিক কাঠামো অনেকটাই ভঙ্গুর হয়ে আছে। তারা এখন সরকারবিরোধী জোরালো আন্দোলনের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেদের ঘর গোছাতে ব্যস্ত রয়েছে। অন্য দিকে বিএনপি জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ কয়েক সারির নেতা কারাবন্দী হয়ে আছেন। সরকারের নানা ‘নিপীড়নে’ দলটি এখন কোণঠাসা। এ অবস্থায় বিএনপি জোট মাঠে নামলে সরকারবিরোধী আন্দোলন পুরোপুরি ব্যর্থ হবে। যার ফল ক্ষমতাসীনদেরই ঘরে যাবে। তাই বড় ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার আগেই বিএনপি জোটকে মাঠে টেনে আনতে চান সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। অন্য দিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকায় আওয়ামী লীগও সংগঠন গুছিয়ে উঠতে পারেনি। সাংগঠনিক তৎপরতা বাদ দিয়ে সরকারি দলের অনেক নেতাকর্মী যার যার মতো করে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত রয়েছেন। দলটি এখন প্রায় পুরোপুরি প্রশাসননির্ভর। তাই সরকারি দলে সাংগঠনিক স্থবিরতা থাকলেও অনেকটাই ‘দুর্বল’ বিএনপি জোটকে প্রশাসনিকভাবেই দমন করা যাবে বলে মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য আলাপকালে বলেন, বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে হেরে গিয়ে বিএনপি এখন চরম কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। নানা ধরনের মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত হয়ে তাদের নেতাকর্মীরা এখন ছন্নছাড়া অবস্থায়। তারা এখন রাজপথে না নেমে নিজেদের সঙ্ঘবদ্ধ করে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে মনোযোগী। সরকার এ সুযোগকে কাজে লাগাতে চায়। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা চান, বিএনপি জোট এখনই মাঠে নামুক। এতে তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনের হালে পানি পাবে না। ভঙ্গুর অবস্থায় রাজপথে নামলে তাদের দমন করাও বেশ সহজ হবে। যাতে জনগণ বিএনপি জোট থেকে আবারো মুখ ফিরিয়ে নেবে। এতে আওয়ামী লীগই বেশি লাভবান হবে। তাই তড়িঘড়ি করে বিতর্কিত বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলার অভিযোগ গঠনসহ নানাভাবে তাদের ক্ষেপিয়ে তোলা হচ্ছে। দলের সাবেক একজন সংসদ সদস্য জানান, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে সরকার একটু নড়বড়ে অবস্থানে রয়েছে। সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং দূরদর্শিতার অভাবে বিএনপি জোট সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারছে না। সে জন্য বিএনপি এখন দল গোছাতে ব্যস্ত রয়েছে। সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করে তারা যেকোনো মুহূর্তে সরকারবিরোধী বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে। তাই সরকার চায় তারা দল গোছানোর কাজ বাদ দিয়ে মাঠেই থাকুক। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপি জোটকে মাঠে নামানোর কৌশল হিসেবেই এই জোটের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে করা বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় তড়িঘড়ি চার্জশিট প্রদান, সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে করা দুর্নীতি মামলার গতি বৃদ্ধি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ শীর্ষনেতাদের জড়ানো, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবার নিয়ে নানা কটূক্তি ও বিষোদগার, সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়নসহ নানা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে এক দিকে নেতাকর্মীদের মনে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে তাদের নিষ্ক্রিয় করা যাবে, অন্য দিকে তারা মাঠে নামতে এক রকম বাধ্য হবে। আর অপ্রস্তুত অবস্থায় মাঠে নামলে এর সুফল সরকারের ঘরেই যাবে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি বলেন, আমরা চাই দেশের রাজনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক থাকুক। তারা প্রস্তুত বা অপ্রস্তুত হয়ে মাঠে নামুক আমরা তার কোনোটাই চাই না। আমাদের একটাই লক্ষ্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন। আর বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমা আদালতের বিষয়। তারা এসব ঘটনায় নির্দোষ হলে মামলা মোকাবেলা করে প্রমাণ করুক। তিনি আরো বলেন, বিএনপি বর্তমানে একটা ভঙ্গুর রাজনৈতিক দল। তাদের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই। অতীতেও কোনো ধরনের আন্দোলনে তারা জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। দলের সিনিয়র নেতাদের ওপর মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা ব্যাপক ুব্ধ। এ অবস্থায় তারা মাঠে নামতে পারছে না। তাই সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের উদ্ভট অভিযোগ করছে।
No comments:
Post a Comment