ইয়েমেনে রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসঙ্ঘের মধ্যস্থতায় সরকার ও শিয়া বিদ্রোহীরা একটি শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। বিদ্রোহীরা রোববার সন্ধ্যায় বেশ কয়েকটি সরকারি ভবন দখল ও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর উভয়পক্ষ এ চুক্তিতে পৌঁছায়। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সাবার খবরে রোববার বলা হয়, সানায় প্রেসিডেন্ট ভবনে সন্ধ্যায় আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে একটি জাতীয় শান্তি ও অংশীদারিত্ব চুক্
তিতে স্বাক্ষর করে উভয়পক্ষ। অনুষ্ঠানে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবদুর রবুহ মনসুর হাদি, জাতিসঙ্ঘ দূত জামিল বেনোমার ও শিয়া বিদ্রোহীসহ ইয়েমেনের রাজনৈতিক পক্ষগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রেসিডেন্ট হাদি তার এক ভাষণে বলেন, ‘সঙ্কট সমাধানে আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছেছি’। জাতিসঙ্ঘ দূত জামিল বেনোমার বলেন, চুক্তিতে আগামী এক মাসের মধ্যে নতুন সরকার গঠনের কথা বলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, চুক্তি অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট হাদি আগামী তিন দিনের মধ্যে শিয়া আনসারুল্লাহ বিদ্রোহী ও দক্ষিণাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্য থেকে উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। জামিল বেনোমার চুক্তিটি পড়ে শোনান। এ ছাড়া আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট একজন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করবেন। তাকে অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবে এবং তিনি কোনো দলের সদস্য হবেন না। নতুন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বাসিনদাবার স্থলাভিষিক্ত হবেন। বিদ্রোহীদের পক্ষে বিদ্রোহী নেতা আব্দুল মালিক আল- হাউছির দুই প্রতিনিধি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিদ্রোহীরা পার্লামেন্ট ভবন, প্রতিরা মন্ত্রণালয়, সেনা সদরদফতর, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জাতীয় রেডিও স্টেশনসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দখল নেয়। চুক্তি অনুযায়ী বিদ্রোহীদের দখল করা ভবনগুলো অবশ্যই সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। এ ছাড়া এক মাসেরও বেশি সময় আগে রাজধানী সানায় স্থাপিত বিক্ষোভকারীদের শিবিরগুলোও ভেঙে ফেলতে হবে এবং অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। সংবাদ সংস্থা সাবার খবরে বলা হয়, চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল মোহাম্মদ নাসের আহমেদের তত্ত্বাবধানে সরকারি বিভিন্ন ভবন থেকে বিদ্রোহীদের প্রত্যাহার শুরু করা হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি-মুন বলেছেন, ইয়েমেনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তির জন্য এই চুক্তি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তিনি কোনো ধরনের বিলম্ব ছাড়াই চুক্তিটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এর আগে, রাজধানীতে চলমান প্রচণ্ড সঙ্ঘাতের মধ্যে মোহাম্মদ বাসিনদাবা প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার বিষয়টি আনসারুল্লাহ বাহিনীর অন্যতম প্রধান দাবি ছিল। উল্লেখ্য, দুই বছর আগে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় বিপ্লবের মাধ্যমে ইয়েমেনের স্বৈরশাসক আলী আব্দুল্লাহ সালেহকে পদত্যাগে বাধ্য করাতে হাউছি আন্দোলন বড় ভূমিকা পালন করেছিল। ৩৩ বছর ধরে স্বৈরশাসন চালানোর পর ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সালেহ মতা ছাড়তে বাধ্য হন। আর এবার বর্তমান সরকারকেও তাদের সাথে চুক্তি করতে বাধ্য করল দলটি।
No comments:
Post a Comment