ষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে নারীরা ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে আসছে। ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে অনেকের প্রাণও যাচ্ছে। কিন্তু অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার নয়া দিগন্তকে বলেন, নারী নির্যাতন বাড়া-কমা একটি আপেক্ষিক ব্যাপার। তবে সার্বিকভাবে বলা যায়, এটা নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত সাত মাসেই দেশের বিভিন্ন থানায় নারী নির্যাতন মামলা হয়েছে ১১ হাজার ৯১৩টি। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে মামলা হয়েছে এক হাজার ১২৭টি, ফেব্রুয়ারি মাসে এক হাজার ২৫৬টি, মার্চ মাসে এক হাজার ৬৬৯টি, এপ্রিলে এক হাজার ৯৮৮টি, মে মাসে দুই হাজার ৬৯, জুনে এক হাজার ৯৮১ এবং জুলাই মাসে এক হাজার ৮২৩টি। গড়ে প্রতিদিন মামলা হয়েছে ৫৬টির বেশি। নারী নির্যাতনের এই চিত্র আগের বছরগুলোর তুলনায় ভয়ঙ্কর। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয় ১৯ হাজার ৬০১টি, ২০১২ সালে ২০ হাজার ৯৪৭টি, ২০১১ সালে ২১ হাজার ৩৮৯টি এবং ২০১০ সালে ছিল ১৭ হাজার ৭৫২টি। গত শনিবার রাতে রাজধানীর খিলগাঁও নন্দিপাড়া এলাকায় ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয় উম্মে কুলসুম রিতু নামে নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী। এলাকার বখাটে শিমুলচন্দ্র মণ্ডল ও তার সঙ্গীরা দীর্ঘ দিন ধরে ওই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। তাদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মেয়েটি ওই রাতে বিষপান করে আত্মহত্যা করে। এই ঘটনায় খিলগাঁও থানায় মামলা করা হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইভটিজিংয়ের মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে বখাটেদের দৌরাত্ম্য আগের তুলনায় বেশ বেড়েছে। মহানগর পুলিশ সূত্র জানায়, বছর দেড়েক আগে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ইভটিজিংয়ের ঘটনার পর ইভটিজিংবিরোধী টিম গঠন করা হয়। মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আবুল বাসার বলেন, নারী নির্যাতনের অনেক খবর প্রচার হয় না। অনেক ক্ষেত্রে পরিবার বিষয়টি গোপন রাখে মানসম্মানের ভয়ে বা কারো চাপে পড়ে। নারী নির্যাতনের প্রকৃত ঘটনার সংখ্যা আরো বেশি। তিনি বলেন, নারী নির্যাতনের সাথে অনেক কিছুই জড়িত। সামাজিক অবক্ষয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও মনুষ্যত্ববোধ শিখছে না শিক্ষার্থীরা। তাদের শিক্ষার মধ্যে দুর্বলতা আছে। শিক্ষায় নৈতিকতা থাকে না বলেই নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। বিনা কষ্টে যারা অর্থ উপার্জন করছে তারা অর্থ উপার্জনের জন্য আরো কিছু লোককে জুড়ে দিচ্ছে। তারা এসব অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন, দেশে নারী নির্যাতনবিরোধী আইন আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। দৃষ্টান্তমূলক সাজা হচ্ছে না বলেই নারী নির্যাতন দিন দিন বাড়ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেন, রাজধানীতে নারী নির্যাতন এবং ইভটিজিং বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ এই অপরাধ প্রতিরোধে সক্রিয় রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ৮ মাসে দেশে যৌতুক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১৫৮ জন নারী, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪১৪ জন, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৫৫ জন এবং এসিড সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৩২ জন। অধিকারের আগস্ট মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে নারীর প্রতি সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। নারীরা যৌতুক সহিংসতা, এসিড আক্রমণ, ধর্ষণ এবং বখাটেদের হয়রানির শিকার হয়ে আসছেন। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার আগস্ট মাসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আগস্ট মাসে যৌতুকের জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে ১৪ জন নারীকে এবং নির্যাতনে আহত হয়েছে আরো ১১ জন। পারিবারিক ও অন্যান্য কলহের ফলে নির্যাতিত হয়ে ৫৩ জনের মৃত্যু এবং আহত হয়েছে ২১ জন। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে আগস্টে ১৭ জন শিশু ও ১৪ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, যা গত মাসের তুলনায় বেশি। তবে পুলিশের মহাপরিদর্শক ইভটিজিং সম্পর্কে বলেন, এটা নারী নির্যাতনেরই একটি অংশ। ইভটিজিংকে কেন্দ্র করে বিচ্ছিন্ন কিছু দুঃখজনক ঘটনা ঘটছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
Headlines from most popular newspapers of Bangladesh. বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকার সংবাদ শিরোনামগুলো এক নজরে দেখে নিন।
Tuesday, September 9, 2014
নারী ও শিশু নির্যাতন চিত্র ভয়াবহ:নয়াদিগন্ত
ষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে নারীরা ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে আসছে। ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে অনেকের প্রাণও যাচ্ছে। কিন্তু অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার নয়া দিগন্তকে বলেন, নারী নির্যাতন বাড়া-কমা একটি আপেক্ষিক ব্যাপার। তবে সার্বিকভাবে বলা যায়, এটা নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত সাত মাসেই দেশের বিভিন্ন থানায় নারী নির্যাতন মামলা হয়েছে ১১ হাজার ৯১৩টি। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে মামলা হয়েছে এক হাজার ১২৭টি, ফেব্রুয়ারি মাসে এক হাজার ২৫৬টি, মার্চ মাসে এক হাজার ৬৬৯টি, এপ্রিলে এক হাজার ৯৮৮টি, মে মাসে দুই হাজার ৬৯, জুনে এক হাজার ৯৮১ এবং জুলাই মাসে এক হাজার ৮২৩টি। গড়ে প্রতিদিন মামলা হয়েছে ৫৬টির বেশি। নারী নির্যাতনের এই চিত্র আগের বছরগুলোর তুলনায় ভয়ঙ্কর। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয় ১৯ হাজার ৬০১টি, ২০১২ সালে ২০ হাজার ৯৪৭টি, ২০১১ সালে ২১ হাজার ৩৮৯টি এবং ২০১০ সালে ছিল ১৭ হাজার ৭৫২টি। গত শনিবার রাতে রাজধানীর খিলগাঁও নন্দিপাড়া এলাকায় ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয় উম্মে কুলসুম রিতু নামে নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী। এলাকার বখাটে শিমুলচন্দ্র মণ্ডল ও তার সঙ্গীরা দীর্ঘ দিন ধরে ওই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। তাদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মেয়েটি ওই রাতে বিষপান করে আত্মহত্যা করে। এই ঘটনায় খিলগাঁও থানায় মামলা করা হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইভটিজিংয়ের মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে বখাটেদের দৌরাত্ম্য আগের তুলনায় বেশ বেড়েছে। মহানগর পুলিশ সূত্র জানায়, বছর দেড়েক আগে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ইভটিজিংয়ের ঘটনার পর ইভটিজিংবিরোধী টিম গঠন করা হয়। মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আবুল বাসার বলেন, নারী নির্যাতনের অনেক খবর প্রচার হয় না। অনেক ক্ষেত্রে পরিবার বিষয়টি গোপন রাখে মানসম্মানের ভয়ে বা কারো চাপে পড়ে। নারী নির্যাতনের প্রকৃত ঘটনার সংখ্যা আরো বেশি। তিনি বলেন, নারী নির্যাতনের সাথে অনেক কিছুই জড়িত। সামাজিক অবক্ষয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও মনুষ্যত্ববোধ শিখছে না শিক্ষার্থীরা। তাদের শিক্ষার মধ্যে দুর্বলতা আছে। শিক্ষায় নৈতিকতা থাকে না বলেই নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। বিনা কষ্টে যারা অর্থ উপার্জন করছে তারা অর্থ উপার্জনের জন্য আরো কিছু লোককে জুড়ে দিচ্ছে। তারা এসব অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন, দেশে নারী নির্যাতনবিরোধী আইন আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। দৃষ্টান্তমূলক সাজা হচ্ছে না বলেই নারী নির্যাতন দিন দিন বাড়ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেন, রাজধানীতে নারী নির্যাতন এবং ইভটিজিং বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ এই অপরাধ প্রতিরোধে সক্রিয় রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ৮ মাসে দেশে যৌতুক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১৫৮ জন নারী, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪১৪ জন, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৫৫ জন এবং এসিড সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৩২ জন। অধিকারের আগস্ট মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে নারীর প্রতি সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। নারীরা যৌতুক সহিংসতা, এসিড আক্রমণ, ধর্ষণ এবং বখাটেদের হয়রানির শিকার হয়ে আসছেন। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার আগস্ট মাসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আগস্ট মাসে যৌতুকের জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে ১৪ জন নারীকে এবং নির্যাতনে আহত হয়েছে আরো ১১ জন। পারিবারিক ও অন্যান্য কলহের ফলে নির্যাতিত হয়ে ৫৩ জনের মৃত্যু এবং আহত হয়েছে ২১ জন। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে আগস্টে ১৭ জন শিশু ও ১৪ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, যা গত মাসের তুলনায় বেশি। তবে পুলিশের মহাপরিদর্শক ইভটিজিং সম্পর্কে বলেন, এটা নারী নির্যাতনেরই একটি অংশ। ইভটিজিংকে কেন্দ্র করে বিচ্ছিন্ন কিছু দুঃখজনক ঘটনা ঘটছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment