গ্রুপ লিডারদের প্রতারণায় এবারো কিছু মানুষের হজে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রতারিত হজযাত্রীরা হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এবং আশকোনা হজ অফিসে যোগাযোগ করছেন। হাব নেতারা কয়েকটি ঘটনায় মধ্যস্থতা করে হজযাত্রীদের পাঠানোর চেষ্টা করছেন। হজ ফাইটের শেষপর্যায়ে এ ধরনের আরো কিছু প্রতারণার ঘটনা স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন হাব ও হজ অফিসের কর্মকর্তারা। গ্রুপ লিডার বা এজেন্সির গাইড
রাই প্রতারণার সাথে জড়িত বলে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে। তারা এজেন্সিকে টাকা না দেয়ার কারণেই হজযাত্রীদের পাঠাতে গড়িমসি করছে মূল এজেন্সি মালিকরা। ইতোমধ্যে ১২ জন হজযাত্রী আশকোনা হজ ক্যাম্পে গিয়ে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন মনির ট্রাভেলস নামে একটি এজেন্সির বিরুদ্ধে। গ্রুপ লিডারের কাছে টাকা দিলেও এখন সেই গ্রুপ লিডারকে তারা খুঁজে পাচ্ছেন না। এজেন্সি মালিক টাকা না পাওয়ার কথা বলে তাদের পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। হজ অফিসের পরিচালক মিজানুর রহমান অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, পাঁচজন হজযাত্রীর অভিযোগ পেয়েছি। তবে তারা কখনো বলছেন গ্রুপ লিডারকে খুঁজে পাচ্ছেন না আবার বলছেন তিনি সৌদি আরব চলে গেছেন। এজেন্সি মালিকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে হজযাত্রীদের পাঠানোর চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান। ফাইট রোজ সার্ভিসেস ট্রাভেলসের ৪০ জন হজযাত্রীর হজে যাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অভিযোগ এসেছে, এরা বাব-ই মদিনা নামে এজেন্সির মাওলানা সুলতানের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। সুলতান ফাইট রোজে এই হজযাত্রীদের নামে মোয়াল্লেমের টাকা জমা দিলেও বাকি টাকা না দিয়ে আত্মগোপন করেছেন। হজযাত্রীরা ফাইট রোজে যোগাযোগ করলে কর্তৃপক্ষ টাকা না পাওয়ার কথা জানিয়ে হজযাত্রীদের পাঠাতে অপারগতা প্রকাশ করছে। প্রতারিত হজযাত্রীরা লিখিতভাবে ধর্ম সচিব ও হাবের কাছে অভিযোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এদিকে শরীফ এয়ারের ৯৮ জন হজযাত্রী এখন পর্যন্ত হজে যেতে পারেননি। হক ট্রাভেলস নামে আরেক এজেন্সির একাউন্টে এসব হজযাত্রী ৬২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা অনলাইন চেকের মাধ্যমে জমা দেন। পরে এজেন্সি মালিক হজযাত্রীদের পাঠাতে অস্বীকার করলে শরীফ এয়ার সার্ভিস লিমিটেডের নামে তাদের মোয়াল্লেম ফি জমা দেয়া হয়। কিন্তু হক ট্রাভেল ৬২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ফেরত না দিলে এ ব্যাপারে হাবের কাছে শরীফ এয়ার লিখিত অভিযোগ করে। সর্বশেষ হাবের মধ্যস্থতায় উভয় ট্রাভেল যেকোনোভাবে হজযাত্রীদের পাঠানোর ব্যাপারে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাব নেতারা। হাবের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল কবির খান জামান জানান, দুই এজেন্সি ৯৮ জন হজযাত্রীকে যেকোনোভাবে হজে পাঠানের ব্যাপারে রাজি হয়েছে; আশা করি তারা শেষ পর্যন্ত হজে যেতে পারবেন। তিনি বলেন, হজযাত্রীদের সাথে প্রতারণার আরো দু-একটি ঘটনার বিষয় আগামী দু-এক দিনের মধ্যে পরিষ্কার হতে পারে। হাবের মহাসচিব শেখ আব্দুল্লাহ অবশ্য বলেছেন, এবার প্রতারণার বড় ধরনের ঘটনার অভিযোগ আমাদের কাছে এখনো আসেনি। একটি এজেন্সির বিরুদ্ধে ৯৮ জনের ব্যাপারে যে অভিযোগ আমরা পেয়েছিলাম তা সমাধানের পথে। তিনি বলেন, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর হজ ফাইট শেষ হবে। এর মধ্যে আরো দু-একটি প্রতারণার খবর আসতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে যাতে ব্যবস্থা নিয়ে হজযাত্রীদের পাঠানো যায় সে ব্যাপারে হাব সতর্ক রয়েছে বলে তিনি জানান। হজ অফিসের পরিচালক বলেন, আমরা শুনেছি কিছু এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। আমাদের কাছে এ পর্যন্ত মাত্র পাঁচজন হজযাত্রী অভিযোগ করেছেন। তিনিও আগামী দু-এক দিনের মধ্যে এ ধরনের আরো দু-একটি ঘটনার অভিযোগ আসতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। হজ অফিসের আইটি হেল্প ডেক্সের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, গতকাল রাত পর্যন্ত ৮০ হাজার ৫৮৭ জন বাংলাদেশী হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। গতকাল সরকারি হজযাত্রীদের শেষ ফাইটে ৯০ জন গিয়েছেন। এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রী এক হাজার ৫০৮ জন। এ বছর সৌদি দূতাবাস সর্বমোট ৯৭ হাজার ৯৮৫টি ভিসা ইস্যু করেছে। গত মঙ্গলবার ভিসা ইস্যু কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এ পর্যন্ত মক্কা মদিনায় পাঁচজন মহিলাসহ ২২ জন বাংলাদেশী হজযাত্রী মারা গেছেন। গত সোমবার নোয়াখালী জেলার মো: আব্দুল হক (৬৬) পবিত্র মক্কায় ইন্তেকাল করেন। তিনি গ্রামীণ হলিডেস (০৭৯২) এর মাধ্যমে সৌদি আরব যান। তার পাসপোর্ট নম্বর বিএ০৭০২৫৫৮। চাঁদ দেখাসাপেক্ষে আগামী ৪ অক্টোবর পবিত্র হজ পালিত হবে। ফিরতি ফাইট শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ৮ অক্টোবর, শেষ হবে ৭ নভেম্বর।
No comments:
Post a Comment