সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা হয় ২০১০ সালের জানুয়ারিতে। এরপর চার বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি আর করা হয়নি। এর মধ্যে কমিটির সহসভাপতি দস্তগীর চৌধুরী মারা যান বছর দুয়েক আগে। এখন চারজন নিয়ে চলছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কর্মকাণ্ড। দলীয় সূত্রগুলো জানায়, চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের ত্রিমুখী ঠান্ডা
লড়াইয়ের কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা যাচ্ছে না। এই তিনটি পক্ষের নেতৃত্বে আছেন নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছিরউদ্দিন। অবশ্য আমীর খসরু মাহমুদ এই ত্রিমুখী দ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করেননি। তিনি বলেন, তিনি জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার রাজনীতি করেন। তাঁর নিজের কোনো গ্রুপ নেই। দলীয় কর্মসূচিতে তাঁর নামে কিংবা অন্য কোনো স্থানীয় নেতাদের নামে স্লোগান দেওয়া বন্ধ করেছেন তিনি। তবে মীর নাছির চট্টগ্রাম বিএনপিতে তিনটি ধারা আছে বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এটা দিবালোকের মতো সত্য যে নোমান সাহেব দীর্ঘদিন মহানগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন। এরপর আমি ১০ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। ফলে নোমান সাহেব এবং আমার পক্ষে নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মী সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের বাদ দিয়ে কমিটি হতে পারে না।’ একসময় এই তিনটি পক্ষের বিভেদের জের ধরে চট্টগ্রামে বিএনপির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। সে পরিস্থিতি এখন নেই। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এই তিনটি পক্ষ এক হয়েছিল। তখন তিন নেতাকে এক মঞ্চে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এখন আর তাঁদের একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে না। প্রকাশ্যে কেউ কারও বিরুদ্ধে কিছু না বললেও সবাই নিজ নিজ বলয় ধরে রাখতে সক্রিয় আছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের ১০ জন নেতার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাঁরা জানান, অসংখ্য নেতা-কর্মী মামলার আসামি হয়ে ভোগান্তির মধ্যে আছেন। পরবর্তী আন্দোলনের জন্য দলকে পুনর্গঠন ও প্রস্তুতি দূরের কথা, এখন পর্যন্ত একটা পূর্ণাঙ্গ মহানগর কমিটি করা যায়নি। তার ওপর রয়েছে দলের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় তিনটি পক্ষের চলছে ঠান্ডা লড়াই। এর ফলে সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরা পড়েছেন হতাশায়। এসব নেতারা জানান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার কথা, সেখানে নোমান ও মীর নাছিরের অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। সব পক্ষই চায় কমিটিতে নিজ নিজ অনুসারীর সংখ্যা বেশি থাকুক। বছর দুয়েক আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের কাছে পূর্ণাঙ্গ কমিটির ১৮১ সদস্যের তালিকা পাঠানো হয়। ওই তালিকায় নোমান ও মীর নাছিরের অনুসারীদের অনেকের নাম ছিল না। তাই এই দুই নেতার পক্ষে আলাদা তালিকা জমা দেওয়া হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণায় দীর্ঘসূত্রতা সম্পর্কে জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ‘অনেক আগেই আমরা কমিটির তালিকা কেন্দ্রে জমা দিয়েছি। এ ব্যাপারে বারবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র যদি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা না করে, তাতে আমার কী করার আছে।’ তবে এ বিষয়ে আবদুল্লাহ আল নোমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক বিবেচনার চেয়ে ব্যক্তি পছন্দ বড় করে দেখা হচ্ছে। মাঠে-ময়দানে যাঁরা আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছেন, তাঁদের বাদ দিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হলে ফলাফল ভালো হবে না, যা কেন্দ্র উপলব্ধি করতে পারছে। এই দ্বিধা থেকে কমিটি ঘোষণা হচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে।’ দলীয় সূত্রগুলো বলছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার জন্য কোনো পক্ষ এ মুহূর্তে আর চাপও দিচ্ছে না। তাদের আশঙ্কা, কমিটি ঘোষণার পর পদ-পদবি নিয়ে দ্বন্দ্ব সংঘাতে রূপ নিতে পারে। এর আগে গত বছর চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর দফায় দফায় সংঘর্ষের কথা তাঁদের স্মরণে রয়েছে। ছাত্রদলের ওই সংঘর্ষও হয় বিএনপির ত্রিমুখী দ্বন্দ্বের জের। অবশ্য মীর নাছির প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগর কমিটি ঘোষণার আগে আমি, নোমান সাহেব ও খসরু সাহেবের মধ্যে বৈঠক হতে হবে। ওই বৈঠকে ঠিক করতে হবে কারা নগর কমিটিতে আসবে। আমাদের মধ্যে ঐকমত্য হলে কমিটি ঘোষণার পর কোনো সমস্যা হবে না।’
No comments:
Post a Comment