Saturday, September 27, 2014

খুচরায় এসেই দাম দ্বিগুণ মসলার:কালের কন্ঠ

মসলাজাতীয় পণ্যের পাইকারি বাজার ঢাকার মৌলভীবাজারে গত বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি ভারতীয় জিরা বিক্রি হয়েছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা দরে। এবারের ঈদের বাজারে জিরার দাম এর চেয়ে বেশি ওঠেনি বলে জানান পাইকারি বিক্রেতারা। ঢাকার কারওয়ান বাজারের বড় খুচরা দোকানগুলোতেও ২৭০ টাকা কেজি দরে ভারতীয় জিরা মিলছে। কিন্তু এখান থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরের তেজগাঁও কলমিলতা কাঁচাবাজারে সেই জিরাই বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা কেজিতে। ঈদুল আ
জহায় দেশে মসলার চাহিদা বাড়ে। মাংস রান্নার জন্য আদা-রসুনের পাশাপাশি বেশি করে জিরা, এলাচ, দারুচিনি কিনতে হয় পরিবারের কর্তাকে। কিন্তু বাজারে গিয়ে স্বস্তি পাওয়ার সুযোগ নেই। খুচরা ক্রেতারা এসব মসলা কখনো বেশি পরিমাণে কেনে না। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০ গ্রামের বেশি গোলমরিচ, দারুচিনি সচরাচর বিক্রি করতে পারেন না খুচরা বিক্রেতারা। তবে শহরের মধ্য আয়ের মানুষ ঈদ মৌসুমে সাধারণত ১০০-১৫০ গ্রাম এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গ ও দারুচিনি কিনে থাকে। জিরা বিক্রি হয় ১০০ থেকে ২৫০ গ্রাম পরিমাণে। বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজারে ‘মেসার্স এনায়েত অ্যান্ড ব্রাদার্স’ নামের একটি পাইকারি দোকানে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হয়েছে সর্বনিম্ন ৮০০ থেকে শুরু করে এক হাজার ৩০০ টাকা দরে। ঢাকার শেওড়াপাড়া কাঁচাবাজার ও তেজগাঁও কলমিলতা কাঁচাবাজারে বিক্রেতারা জানায়, ১০০ গ্রাম এলাচ তারা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি করছে। তবে এর বাইরেও একটি ভালো মানের এলাচ আছে। যার ১০০ গ্রামের দাম ৩২০ টাকা। মৌলভীবাজারে প্রতি কেজি দারুচিনি ২৫০, কালো গোলমরিচ ৮০০-৮৫০, লবঙ্গ এক হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যদিকে তেজগাঁও ও শেওড়াপাড়ায় প্রতি ১০০ গ্রাম দারুচিনি ৫০, গোলমরিচ ১৬০ ও লবঙ্গ ২০০ টাকা দাম চেয়েছে বিক্রেতারা। এসব মসলার বাইরে আদা ও পেঁয়াজের দামও অনেকটা বেড়ে যাচ্ছে খুচরা বাজারে এসে। তা স্পষ্ট সরকারি পরিসংখ্যানেই। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের গত বৃহস্পতিবারের বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, ঢাকার পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩১-৩৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা দরে। ২৪-২৭ টাকায় আমদানি করা পেঁয়াজ খুচরা বাজারে গিয়ে হয়ে যাচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা। পাইকারি বাজারে আদা বিক্রি হচ্ছে ১১০-১৪০ টাকা দরে। সেটি খুচরা বাজারে ১৪০-২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে রসুনের দামে চড়া পার্থক্য নেই। ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজির রসুন খুচরা বাজারে ৮৫-৯০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে পাইকারি মসলা ব্যবসায়ীরা খুচরা বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে চড়া লাভের অভিযোগ করেন। পাইকারি মসলা ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব আতিকুল হক বলেন, তিনি এবার জিরা আমদানি করে কেজিতে সাত টাকা লোকসান দিয়েছেন। সেই জিরাই খুচরা বাজারে চড়া দামে বিকোচ্ছে। অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল হোসেন মিঞা বিভিন্ন পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এতে বাজার তদারকি সহজ হবে। খুচরা পর্যায়ে এত বেশি দাম কেন জানতে চাইলে তেজগাঁও বাজারের একজন বিক্রেতা বলেন, তাঁদের এক কেজি জিরা বিক্রি করতে এক সপ্তাহ লাগে। তার ওপর খুচরা পরিমাণে বিক্রি করতে গিয়ে ঘাটতি হয় বলে দামও বেশি রাখতে হয়। ডিজিটাল মিটারের পরিমাপক ব্যবহার করায় ঘাটতি এখন কম হয় কি না জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করেন, আগের মতো এখন আর হয় না। ভলান্টারি কনজ্যুমার অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড ট্রেনিং সোসাইটির (ভোক্তা) নির্বাহী পরিচালক খলিলুর রহমান সজল মনে করেন, বাংলাদেশে বাজারদর নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষ যেমন নেই তেমনি নেই কোনো কৌশলও (মেকানিজম)। ফলে জানা থাকলেও বেশি লাভের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা আইনের অধীনে একটি কমিশন হলে কমিশনকে এই দায়িত্বটি দেওয়া যেত। কিন্তু আইন তৈরির পর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও প্রতিযোগিতা আইনের বিধি হচ্ছে না।

No comments:

Post a Comment