পুলিশের ‘অপকর্মের’ খবর বের করা মানেই সংবাদমাধ্যমের বড় কৃতিত্ব। কিন্তু হাজারো ‘অপকর্মের’ হোতা পুলিশও যে হাবুডুবু খাচ্ছে হাজারো সংকটে, সেই খবর অনেকেরই অজানা। কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে তাই অনুসন্ধান চালানো হয় পুলিশের সমস্যা-সংকট নিয়ে। বেরিয়ে আসে প্রায় ‘মানবেতর’ এক জীবনচিত্র। জনবল এতই কম যে অন্য দেশে যেখানে প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ জনের নিরাপত্তায় একজন পুলিশ কাজ করে; এ দেশে সেখানে একজন পুলিশকে নিরাপত্তা দিতে হ
য় প্রায় এক হাজার মানুষের। একজন সাব-ইন্সপেক্টরকে মাসে অন্তত ২০টি মামলা ও জিডির তদন্ত করতে হয়, যে কারণে সঠিক সময়ে মামলার চার্জশিট দাখিল করতে সমস্যা হয়। আবাসন সংকট এতই প্রকট যে সারা দিন হাড়ভাঙা ডিউটির পর বিশ্রামের জন্য ব্যারাকে ফিরে দেখতে হয়, নিজের জন্য বরাদ্দ সিটে বিশ্রাম নিচ্ছেন আরেকজন। অগত্যা বারান্দায় শুয়েই রাত পার করতে হয় তাঁকে। থানায় যানবাহন ও আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা অপ্রতুল; উন্নত প্রশিক্ষণেরও অভাব। তাই নিয়ে অভিযানে গিয়ে প্রায়ই মার খেয়ে ফিরতে হয় পুলিশকে। আর বেতন-ভাতা যা পান তা দিয়ে পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণ চলে না। অনেককে তাই বাধ্য হতে হয় অসাধু পথে পা বাড়াতে। আর তখনই পড়ে যায় হৈচৈ- পুলিশের মতো খারাপ আর হয় না! এক বা একাধিক সদস্যের বদনামের ভাগী হতে হয় সবাইকে। কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে পাওয়া পুলিশের পেশাগত সমস্যাগুলো এখানে তুলে ধরা হলো : জনবল : সূত্র জানায়, দেশের ১৬ কোটি মানুষের নিরাপত্তা বিধানের জন্য বর্তমানে সারা দেশে পুলিশ বিভাগে কর্মরত আছেন একজন আইজি, দুজন অতিরিক্ত আইজি, ৪৯ জন ডিআইজি, ৭৫ জন অতিরিক্ত ডিআইজি, ২৫৭ জন এসপি, ৪৯২ জন অতিরিক্ত এসপি, ২৭১ জন জ্যেষ্ঠ এএসপি, এক হাজার ১৪ জন এএসপি, তিন হাজার ৯৬২ জন ইন্সপেক্টর, ১৪ হাজার ৯২৯ জন এসআই, ২৪৭ জন টিএসআই, এক হাজার ৭৬৪ জন সার্জেন্ট, ১০ হাজার ৩৭ জন এএসআই, সাত হাজার ১৯৯ জন সহকারী টিএসআই, ছয় হাজার ৫০১ জন নায়েক, সাত হাজার ৯৬৩ জন নারী পুলিশ ও এক লাখ সাত হাজার ৪৭৯ জন কনস্টেবল। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ভারতে প্রতি ১৮৯ জন নাগরিকের বিপরীতে একজন, পাকিস্তানে ৩৭৭ জনের বিপরীতে একজন, নেপালে ২১৯ জনে একজন, ভুটানে ১৪৬ জনে একজন, মালয়েশিয়ায় ২৪৯ জনে একজন, থাইল্যান্ডে ২২৮ জনে একজন, জাপানে ১৫৭ জনে একজন, যুক্তরাষ্ট্রে ২৪৫ জনের বিপরীতে একজন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। আর বাংলাদেশে এক হাজারের বেশি মানুষের বিপরীতে একজন পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। পুলিশের জনবল দ্বিগুণ না করলে জনগণকে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা দেওয়া যাবে না। বেতন-ভাতা : একজন কনস্টেবলের মূল বেতন চার হাজার ৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে মাসে পান ৯ হাজার ৯৫ টাকা। একজন নায়েকের মূল বেতন চার হাজার ৯০০ টাকা। সব মিলিয়ে পান ১০ হাজার ৪৫০ টাকা। সহকারী টাউন সাব-ইন্সপেক্টর (সহকারী টিএসআই) ও সহকারী সাব-ইন্সপেক্টরের (এএসআই) মূল বেতন পাঁচ হাজার ২০০ টাকা। সব মিলিয়ে তাঁরা পান ১১ হাজার ২৩৫ টাকা। সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই), টাউন সাব-ইন্সপেক্টর (টিএসআই) ও সার্জেন্টের মূল বেতন আট হাজার টাকা। সব মিলিয়ে তাঁরা পান ১৬ হাজার ৫৪০ টাকা। একাধিক সাব-ইন্সপেক্টর ও কনস্টেবল জানান, বেতন দিয়ে সংসার চালানো যায় না। তবে রেশন পাওয়া যায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতোই। দীর্ঘদিন পর সরকার মূল বেতনের ৩০ শতাংশ ঝুঁকিভাতা দিয়েছে। তাঁরা আরো জানান, সবার পক্ষে বাড়ি ভাড়া করে থাকা সম্ভব নয়। সন্তানদের পড়ালেখা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বেতন কম, তাই অনেক পুলিশ সদস্য দুর্নীতি করে থাকেন বলে তাঁরা মন্তব্য করেন। আবাসন : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ- ডিএমপির জনবল প্রায় ৩২ হাজার। অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) থেকে নিচের পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বাসার চাহিদা আছে ১৫ হাজার ৮২ জনের। বর্তমানে বাসা আছে পাঁচ হাজারের মতো। সহকারী পুলিশ কমিশনারদের ৫৫টি বাসার চাহিদা থাকলেও এখন আছে ৩৫টি। ইন্সপেক্টরদের ২৮৭টি বাসার চাহিদা থাকলেও আছে ১১২টি। সাব-ইন্সপেক্টর ও সার্জেন্টদের দুই হাজার ৩৭৬টি বাসার প্রয়োজনের বিপরীতে আছে এক হাজার ৭৭৭টি। সহকারী সাব-ইন্সপেক্টরদের এক হাজার ৭৪০টি বাসার প্রয়োজনের বিপরীতে আছে ৩৭৩টি। অন্যদিকে হেড কনস্টেবল, নায়েক ও কনস্টেবলদের ২০ হাজার ২১৮টি বাসার চাহিদার বিপরীতে আছে মাত্র এক হাজার ২৫৩টি। পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (প্রশাসন) বিনয় কৃষ্ণ বালা কালের কণ্ঠকে বলেন, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সরকার পুলিশের উন্নয়নের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করছে। পুলিশের লজিস্টিক সাপোর্ট, জনবল বাড়ানোসহ বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। এর পরও পুলিশের কিছু সমস্যা আছে। সেসব লাঘবের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আনুষঙ্গিক বিষয় : ইউএনডিপির এক গবেষণায় বলা হয়, বাসস্থান, চিকিৎসা সুবিধা, পদোন্নতি, বেতন-ভাতা নিয়ে পুলিশ সদস্যরা নাখোশ। রাজারবাগ পুলিশ ব্যারাকে চার কনস্টেবল মিলে একটি সিট পাচ্ছেন। ডিউটি করে আসার পর তাঁরা বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। স্বাস্থ্য খাতে পুলিশের বাজেট নেই বললেই চলে। চিকিৎসা বাবদ একজন কনস্টেবল মাসে ৪৪ টাকা পান, যা দিয়ে উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। এ ছাড়া যানবাহন, অস্ত্র, অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব রয়েছে; নিয়োগপ্রক্রিয়ায় দুর্নীতি তো আছেই। র্যাবের সব সদস্যকে মূল বেতনের ৭০ শতাংশ ঝুঁকিভাতা দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশকে ঝুঁকিভাতা কম দেওয়া হচ্ছে। বেতন-ভাতার প্রায় পুরোটাই খরচ হয়ে যায় বাড়িভাড়ায়। পদোন্নতির পরীক্ষায় অনেকে হয়রানির শিকার হন। নারী পুলিশ : নারী পুলিশের সংখ্যা সাত হাজার ৯৬৩, যা পুরুষ পুলিশের সংখ্যার ৪.৪৪ শতাংশ মাত্র। কনস্টেবল থেকে শুরু করে অতিরিক্ত আইজিপি পর্যন্ত বিভিন্ন পদে আছেন নারী সদস্যরা। পুলিশের নারী সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন অতিরিক্ত আইজিপি একজন, ডিআইজি দুজন, অতিরিক্ত ডিআইজি দুজন, পুলিশ সুপার ১২ জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ৫৭ জন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ১৯ জন, সহকারী পুলিশ সুপার ১১১ জন, ইন্সপেক্টর ৫৮ জন, এসআই ৪৭৫ জন, এএসআই ৪১১ জন ও কনস্টেবল ছয় হাজার ৪১৩ জন। রাজারবাগ পুলিশ লাইন ব্যারাকের বাসিন্দা এক নারী কনস্টেবল বলেন, ‘পুরুষের চেয়ে নারী সদস্যরা বেশি অবহেলিত। মাঝে মাঝে আমরা নির্যাতনের শিকার হই। এর পরও কিছু বলতে পারি না। সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। নারী পুলিশ সদস্যদের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মাঠপর্যায়ে কাজ। একজন পুরুষ সদস্যকে জনগণ যেভাবে গ্রহণ করে, একজন নারী পুলিশকে সেভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে না। বিশেষ করে একটি থানায় যখন একজন নারী অফিসারের রাতে ডিউটি পড়ে তখন অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। বড় অফিসাররা এসব দেখেও না দেখার ভান করেন। অনেক সময় পারিবারিক কাজে ছুটি চাইলে কর্তৃপক্ষ দিতে চায় না।’ নারী পুলিশ সদস্যরা পুরুষ সদস্যদের মতোই দায়িত্ব পালন করেন। টানা ১২-১৪ ঘণ্টা তাঁদের রাস্তায় ডিউটি করতে হয়। কিন্তু তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত টয়লেট সুবিধা নেই। তাই দুর্ভোগে পড়তে হয়। আবার নারী ব্যারাকের অবস্থাও ভালো নয়। খাবারের মান উন্নত নয়। যানবাহন : জনবলের তুলনায় পুলিশের যানবাহনের সংখ্যা কম। শহরের চেয়ে মফস্বলের অবস্থা আরো করুণ। দেশের বিভিন্ন থানায় গাড়ির সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। অধিকাংশই ২০ বছরের বেশি পুরনো। কোনো কোনো গাড়ির ফিটনেসও নেই। মাঝেমধ্যে আসামি ধরার অভিযানের সময় রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ে গাড়ি। অনুপযোগী এসব গাড়ি বছরের পর বছর ধরে ব্যবহার করছে পুলিশ। পরিবহন সংকটের কারণেই ব্যক্তিমালিকানাধীন যানবাহন রিকুইজিশন করে চলতে হয় পুলিশকে। যানবাহনের মধ্যে প্রায় ৭০০টি জিপ, ৯২টি প্যাট্রল জিপ, ৬০টি মাইক্রোবাস, ২৭টি বাস, ১৬টি মিনিবাস, ৭২টি হাইওয়ে প্যাট্রল কার, শতাধিক প্রিজন ভ্যান, ২০টি অ্যাম্বুল্যান্স এবং প্রায় ৫০০ ট্রাক আছে। ডিএমপিতে গাড়ি আছে প্রায় দুই হাজার। এসবের মধ্যে পিকআপ ভ্যান ২৮০টি, জিপ ১৫৫টি, প্যাট্রল জিপ ৫০টি, অর্ধশত মাইক্রোবাস, ২০টি বাস, ১০টি রায়ট কার, ৮টি অ্যাম্বুল্যান্স ও ২০টি প্রিজন ভ্যান। এ প্রসঙ্গে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, জনবল বাড়ানো হলেও যানবাহনের সংখ্যা তেমন বাড়েনি। পুলিশের কাজের জন্য আবাসনের পাশাপাশি যানবাহনের সংখ্যাও দ্রুত বাড়াতে হবে। সংস্কার : দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ বাহিনীতে সংস্কারের উদ্যোগ হিমাগারে পড়ে আছে। ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। দলীয় সরকার ক্ষমতায় আসার পর সে প্রক্রিয়া বলতে গেলে ভেস্তে যায়। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ১৮৬০ সালে গঠিত কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে পুলিশ বাহিনী গঠন করা হয়। পরে ১৯০২, ১৯৬০, ১৯৬৮, ১৯৮৮ ও ১৯৮৯ সালেও পুলিশ কমিশন গঠন করা হয়। ২০০৭ সালে কমিশন পুনর্গঠন করা হয়। সপ্তাহখানেক আগে আইন মন্ত্রণালয়ে ওই কমিশনের একটি বৈঠক হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আইন সংস্কার না হওয়ায় পুলিশ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। পুলিশের সংস্কারের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে এগিয়ে আসতে হবে। নতুন রেঞ্জ, ইউনিট ও থানা : সেবা বাড়াতে পুলিশের বেশ কয়েকটি নতুন ইউনিট গঠন করা হয়েছে। শিল্প পুলিশ, এসপিবিএন, পিবিআই, নৌপুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, রংপুর রেঞ্জ, রংপুর রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স (আরআরএফ) এবং ২৯টি নতুন থানা ও ৪৭টি তদন্তকেন্দ্র গঠন করা হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। ৩০টি ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে ট্রেনিং কার্যক্রমে আধুনিক ও ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য সায়েদাবাদ ও নিউ মার্কেট এলাকায় তিনটি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। মিরপুর, উত্তরা, রাজারবাগসহ আরো কয়েকটি স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণ করার কথা রয়েছে। ট্রাফিক ব্যারাক : ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার চারটি বিভাগে ট্রাফিক পুলিশ সদস্য রয়েছেন সাড়ে তিন হাজার। তাঁদের মধ্যে চারজন উপকমিশনার, চারজন অতিরিক্ত উপকমিশনার, শতাধিক ট্রাফিক ইন্সপেক্টর, ৭০০ সার্জেন্ট এবং দুই হাজার ৬৭২ জন ট্রাফিক কনস্টেবল। রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, খুলনা ও সিলেটে ট্রাফিক পুলিশ আছে ১০ হাজারের মতো। ওই সব এলাকায়ও আবাসনের সমস্যা আছে। সারা দিন পরিশ্রম করে ট্রাফিক কনস্টেবলরা ঠিকমতো বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগও পান না। এ প্রসঙ্গে এক সার্জেন্ট বলেন, ‘আমরা বাসাভাড়া করে থাকতে পারছি। কিন্তু কনস্টেবলরা অমানবিক দশায় ব্যারাকে থাকছেন। আবাসনের পাশাপাশি খাবারের মানও ভালো না।’ ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মিলি বিশ্বাস কালের কণ্ঠকে বলেন, ট্রাফিক পুলিশ অনেক কষ্ট করছে। সবাই যদি আইন মেনে চলত তাহলে পুলিশের এত কষ্ট করতে হতো না। ট্রাফিক সদস্য ও পুলিশের অন্যান্য বিভাগের সদস্যদের মধ্যে কিছু বিষয়ে বৈষম্য ছিল। তবে এখন তা অনেক কমে এসেছে। তাঁদের বেতন-ভাতা বেড়েছে। পদোন্নতি, আবাসন ও খাবারের সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চলছে। মফস্বলের থানা : মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, মফস্বলের থানার অবস্থা করুণ। বিশেষ করে যানবাহন ও আবাসন সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। একটি থানায় মাত্র একটি জিপগাড়ি আছে। রাতের বেলায় ডিউটি করার জন্য অন্তত পাঁচটি গাড়ি দরকার। বাধ্য হয়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন গাড়ি রিকুইজিশন করতে হয়। যানবাহনের অভাবে ঠিকমতো অভিযান চালানো যায় না; অপরাধী ধরা যায় না। তিনি বলেন, থানার সবার বাসস্থান নেই। ভাড়া করে অনেককে থাকতে হচ্ছে। অনেক কনস্টেবল চেয়ারে বসে রাত পার করে দেন। একটি থানায় কমপক্ষে ৬০ জন পুলিশ সদস্য থাকতে হবে। কিন্তু এখন আছে ৩২ জনের মতো। অস্ত্রগুলোও মান্ধাতা আমলের। অথচ অপরাধীদের কাছে রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। পুলিশের বাজেট : ২০১১-১২ অর্থবছরে পুলিশের জন্য বার্ষিক বাজেট ছিল ছয় হাজার ৩০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বাজেট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকায়। সারা দেশে নতুন থানা ভবন নির্মাণ এবং জরাজীর্ণ থানা ভবন সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৮১৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলেন... : মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ওমর ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের উন্নতির জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। এর পরও পুলিশ নানা সমস্যায় আছে। বেতন কাঠামো এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ালে পুলিশের চরিত্র পাল্টাতে পারে। ঝুঁকি ও ট্রাফিক ভাতাও বাড়াতে হবে। অন্যান্য সংস্থা যেসব সুবিধা পায় তা পুলিশকেও দেওয়া যায় কি না, সরকারের ভাবা উচিত। তেমন হলে সামাজিক অপরাধ রোধে পুলিশ বেশি মনোযোগ দিয়ে কাজ করবে। পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেন, বর্তমান ও পূর্ববর্তী সরকারের আমলে পুলিশে যুগান্তকারী উন্নয়ন হয়েছে। পুলিশকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত র্যাংক ও ব্যাজ। তবে পুলিশে এখনো কিছু সমস্যা রয়েছে। আবাসন ও যানবাহনের সমস্যাও আছে। এসব লাঘবের চেষ্টা চলছে।
No comments:
Post a Comment