Saturday, September 13, 2014

জামায়াতকে খুশি রাখতেই তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তিতে তৃণমূলের বাধা:কালের কন্ঠ

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে তৃণমূল কংগ্রেস তিস্তা ও স্থলসীমান্ত চুক্তি আটকে দিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে বলে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ভারতের বহুল প্রচারিত আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আনন্দবাজারের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভ
োটের আগে থেকেই বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু উর্দুভাষী নেতার দহরম-মহরম শুরু হয়। ২০১১ সালের ভোটে সীমান্ত এলাকায় জামায়াতকর্মীরা তৃণমূলের হয়ে কাজ করে। সে সময় তৃণমূলকে অর্থেরও জোগান দিয়েছিল জামায়াত। সেই সুসম্পর্ক থেকেই পরবর্তীকালে জামায়াতকে তৃণমূল শুধু পাল্টা সাহায্যই করেনি, তিস্তা চুক্তি ও স্থলসীমান্ত চুক্তি আটকে দিয়ে বাংলাদেশ সরকারকেও বিপদে ফেলার চেষ্টা করে। বাংলাদেশসংক্রান্ত নীতির বিষয়ে মমতা বরাবর জামায়াতের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগ রাখা উর্দুভাষী নেতাদের মতামতই মেনে চলেছেন বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।’ পত্রিকাটি জানায়, বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি করতে কাজে লাগানো হয় সারদা গ্রুপের কোটি কোটি টাকা। আর এ কাজে তৃণমূলের বর্তমান রাজ্যসভার সদস্য আহমেদ হাসান ইমরান জড়িত বলে ভারতের কাছে সরকারিভাবে অভিযোগও জানিয়েছে বাংলাদেশ। তবে কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তাই ভারতের কাছে অভিযোগ জানানোর কথা স্বীকার করেননি। এ রকম কোনো আবেদন পাঠানো হয়নি বলে তাঁরা দাবি করেন। এমনকি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও এ বিষয়ে কোনো চিঠি পাঠানোর কথা জানেন না বলে জানিয়েছেন। আনন্দবাজারে বলা হয়, “বাংলাদেশের তদন্তকারীদের দাবি, ২০১২-২০১৩ সালে তৃণমূলের ইমরানের মাধ্যমে ভারত থেকে দফায় দফায় বিপুল পরিমাণ অর্থ পৌঁছেছে জামায়াত ও তাদের নানা শাখা সংগঠনের হাতে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতের প্রথম সারির নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা শুরু করার পরে বাংলাদেশে দাঙ্গা, নাশকতা ও সন্ত্রাস শুরু করেছিল মৌলবাদীরা। সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার হুঁশিয়ারি দিলে ‘হেফাজতে ইসলাম’ নামে বকলমে আরো একটি মৌলবাদী সংগঠন গজিয়ে ওঠে। তারা ঢাকা অবরোধ করে সরকার ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিল। গোয়েন্দা সূত্র অনুসারে, সেই কাজে ইন্ধন জোগাতেই এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল, যার একটা বড় অংশ সারদা অর্থলগ্নি সংস্থার।” আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের গোয়েন্দা প্রতিবেদনও এ বক্তব্যকে অনেকটাই সমর্থন করছে। বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে অবশ্য এ দাবিও করা হয়েছে যে ইমরানের মাধ্যমে অর্থের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকের বেশ কয়েকটি চালানও ভারত থেকে পৌঁছে গিয়েছিল জামায়াতের হাতে। ভারতের গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারদার বেশ কিছু অ্যাম্বুল্যান্সে কাঁচা টাকার বান্ডিল ভরে তা নিয়ে যাওয়া হতো বনগাঁ, বসিরহাট, নদিয়া, মালদহ, বালুরঘাট ও কোচবিহারের সীমান্তসংলগ্ন অঞ্চলে। এরপর তা বাংলাদেশি টাকা, ডলার বা ইউরোয় পরিবর্তন করে জামায়াতের এজেন্টদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সংসদ সদস্য কুনাল ঘোষও ইডিকে লেখা চিঠিতে সারদার অ্যাম্বুল্যান্সে করে বাংলাদেশে জামায়াতের কাছে টাকার বান্ডিল চালান যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া হাওয়ালা ও হুন্ডির মাধ্যমেও গেছে সারদার টাকা। বাংলাদেশের গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, জামায়াত পরিচালিত বেশ কিছু হাসপাতাল, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বেনামে লগ্নিও করেছে সারদা। সেই অর্থও কার্যত জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনেই খরচ হয়েছে। বাংলাদেশের একজন কূটনীতিকের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানায়, শেখ হাসিনার আমলে ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক যতটা মধুর হয়েছে, ততটাই তেতো হয়েছে কলকাতার সঙ্গে। এর জন্য তিনি দায়ী করেছেন তিস্তা ও স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে মমতার কট্টর বিরোধিতাকে। ওই পদস্থ কূটনীতিকের দাবি, তৃণমূলের জামায়াত-ঘনিষ্ঠ নেতারাই মমতাকে এ কাজে প্রভাবিত করতে সফল হয়েছেন। ওই নেতারাই বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা জামায়াতের দুষ্কৃতিকারীদের কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গায় মাসের পর মাস আশ্রয় দিয়ে রেখেছেন। বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়টিও ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। এদিকে অন ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের জেদ্দায় যে ইসলামী ব্যাংক রয়েছে, পূর্ব ভারতে তার কর্তা নিযুক্ত হন তৃণমূলের সংসদ সদস্য ইমরান। ব্যাংকটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর বাংলাদেশের মামুল আল আযম; তিনি জামায়াত নেতা গোলাম আযমের ছেলে। বাংলাদেশে নাশকতা চালানো, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতা, ভারতবিরোধী কার্যকলাপ চালানো ইত্যাদি ঘটনায় বারবার নাম উঠে এসেছে জামায়াতের। আইএসআইয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এরা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভারতবিরোধী জিহাদের বীজ বুনছে। অন ইন্ডিয়া আরো জানায়, বাংলাদেশের কট্টর ইসলামী সংবাদপত্র ‘নয়া দিগন্ত’র কলকাতা প্রতিনিধি হিসেবেও কিছুদিন কাজ করেছেন ইমরান। সেই কাগজে তাঁর লেখাও প্রকাশিত হয়েছে নিয়মিত। যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মীর কাশেম আলী প্রমুখের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল ইমরানের। এদিকে কলকাতা থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতা সিদ্ধার্থ নাথ সিং বলেন, ‘জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতা মীর কাসেম আলী ও দেলাওয়ার হোসাইনকে বস্তায় বস্তায় টাকা দিয়েছিলেন তৃণমূলের সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরান। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের কয়েকটি উগ্রপন্থী জঙ্গিগোষ্ঠীকে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকায় নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থাও করে দিচ্ছেন তৃণমূলের কিছু নেতা ও মন্ত্রী।’ তৃণমূল নেতা ও রাজ্যসভা সদস্য কলম পত্রিকার সাবেক সম্পাদক আহমেদ হাসান ইমরান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ ছিল না। তাঁর ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এ প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যাঁরা করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠাবেন বলেও জানান তিনি। এদিকে রাজ্যের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দুজন মন্ত্রীর অনুপস্থিতি নিয়ে নানা গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। সারদাকাণ্ডে জড়িত অন্যতম দুই মন্ত্রী মদন মিত্র ও শ্যামা প্রসাদ ভট্টাচার্য। তৃণমূল সূত্রের খবর, এই দুজনের ওপর ভীষণ রেগে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের দুজনকে দপ্তরে না যাওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, মন্ত্রিত্ব না গেলেও সারদাকাণ্ডে বারবার ওই দুই মন্ত্রীর নাম জড়িয়ে পড়ায় আপাতত পর্দার আড়ালে রাখতেই মমতা এ কৌশল নিয়েছেন। যদিও মমতা নিজেও এখন শান্তির খোঁজে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সময় কাটাচ্ছেন।

No comments:

Post a Comment