বার কোরবানির পশুর হাট নিয়ে গভীর চক্রান্তে নেমেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। তারা হাটগুলো পানির দামে বাগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা এঁটেছেন। তাই তৈরি হয়েছে পাতানো ইজারার (টেন্ডার) ছক। প্রথমত, হাট ইজারা নেয়ার ব্যাপারে কেউ তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ইজারাদারদের পরিবর্তে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাই এবার তাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। দেশের নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দেখিয়ে তারা বলছেন, এ বছর বাজারমূল্যে ইজারা নিলে ঘরবাড়ি বিক্রি করে ক্ষতি পোষাতে হবে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তারা কয়েকজন কাগুজে আবেদনকারী ঠিক করে রেখেছেন। ইজা জানা গেছে, গত বছরের চেয়ে ৪০ লাখ থেকে তিন কোটি টাকা পর্যন্ত কমে হাট ইজারা নেয়ার পাঁয়তারা করছেন তারা। এ জন্য গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। নিজেদের কাক্সিত দামে ইজারা পেতে একই ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন নামে-বেনামে নাম মাত্র মূল্য দিয়ে দরপত্র জমা দিচ্ছে। এ কারণে বারবার দরপত্র আহবান করেও কাক্সিত দর পাচ্ছে না সিটি করপোরেশন। তাই এবার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা করছে তারা। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলে ঢাকা দণি সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন ১১টি অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের জন্য গত আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে শিডিউল বিক্রি শুরু হয়। ১২ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দরপত্র জমা নেয়া হয়। ওই দিন বিকেলে দরপত্র বাক্স খোলা হয়। দরপত্র খোলার পর দেখা যায় সিন্ডিকেটের বাইরের কোনো দরপত্র নেই। অভিযোগ উঠেছে, তাদের বাইরে কারো পে শিডিউল সংগ্রহ ও জমা দেয়া সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, এ হাটগুলোর বিপরীতে ১১৩টি শিডিউল বিক্রি হলেও জমা পড়ে মাত্র ৩৯টি। এর মধ্যে ঝিগাতলা হাজারীবাগ মাঠের শিডিউল বিক্রি হয় ১৯টি, সেখানে জমা পড়ে মাত্র একটি। যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ মাসুদ রানা একাই শিডিউল জমা দেন। তিনি এই হাটের জন্য দর প্রস্তাব করেছেন ১১ লাখ ১১ হাজার ১০ টাকা। গত বছর এই হাট ইজারা দেয়া হয় ৫৫ লাখ ৩৪ হাজার ২০ টাকায়। লালবাগ মরহুম হাজী দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ ও বেড়িবাঁধ সংলগ্ন খালি জায়গায় (বিকল্প আরমানিটোলা) তিনটি শিডিউলের মধ্যে জমা হয় তিনটিই। এ শিডিউলে সর্বোচ্চ দরদাতা হলেন শেখ মোহাম্মদ আলমগীর, যার দরপত্রের মূল্য এক কোটি এক লাখ এক হাজার ১০০ টাকা। তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। অথচ গত বছর আরমানিটোলা হাটের সর্বোচ্চ দরদাতা ইলিয়াস রশিদ দেন চার কোটি এক লাখ ১১ হাজার ৫০৭ টাকা। এর আগের বছর সর্বোচ্চ দর ছিল চার কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দণি দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন (নতুন হাট) জায়গা সাতটি শিডিউলের মধ্যে জমা হয় তিনটি, যার সর্বোচ্চ দরদাতা হাজী মোহাম্মদ আবুল হোসেন সরকার দর দিয়েছেন এক লাখ ১০ হাজার টাকা। গোলাপবাগ পশুর হাটের জন্য বিক্রি হওয়া ৯টি শিডিউলের মধ্যে জমা পড়েছে সাতটি। এই হাটের জন্য সর্বোচ্চ ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা দর প্রস্তাব করেছেন মোহাম্মদ হামিদুল্লাহ। গত বছর ছিল ৬১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। উত্তর শাহজাহানপুর হাটের জন্য নুরে নবী ভূঁইয়া রাজু সর্বোচ্চ দর প্রস্তাব করেছেন পাঁচ লাখ ৬০ হাজার টাকা। গত বছর ছিল পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। রহমতগঞ্জ খেলার মাঠের জন্য তিনটি দরপত্র জমা পড়ে। সর্বোচ্চ দরদাতা রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি ছয় লাখ ৬৩ হাজার ২৭৪ টাকা। গত বছর ছিল ৬ লাখ ৩১ হাজার ৬৮৯ টাকা। মেরাদিয়া হাটের জন্য চারটি দরপত্র জমা পড়ে। সর্বোচ্চ দরদাতা সাবা এন্টারপ্রাইজ ৫৬ লাখ টাকা প্রস্তাব করে। গত বছর ছিল ২৬ লাখ এক হাজার টাকা। সাদেক হোসেন খোকা মাঠের জন্য ৩৫টি শিডিউল বিক্রি হলেও জমা পড়ে মাত্র চারটি। এই হাটের জন্য সর্বোচ্চ দরদাতা মোহাম্মদ আলী দর দেন ৫৬ লাখ এক হাজার টাকা। গত বছর ছিল ২৭ লাখ এক হাজার টাকা। ধূপখোলা হাটের জন্য সর্বোচ্চ দরদাতা হাজী মুহাম্মদ শামসুজ্জোহা ১০ লাখ আট হাজার টাকা। গত বছর ছিল নয় লাখ ৪৬ হাজার টাকা। গোপীবাগ হাটের জন্য সর্বোচ্চ দরদাতা সহিদউদ্দিন আহমেদ সেলিম ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা। গত বছর ছিল ২১ লাখ টাকা। পোস্তগোলা হাটের জন্য সর্বোচ্চ দরদাতা হাজী মোহাম্মদ রুবেল ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা। গত বছর ছিল নয় লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ ঘটনায় ডিএসসিসির কোরবানির হাটসংক্রান্ত কমিটি দর যাচাই বাছাই করে হতাশ হয়ে পড়েন। ১১টি হাটের দরের মধ্যে পাঁচটির দর এতই নিচে যে, পুনঃদরপত্র দিতে বাধ্য হয়। পুনঃদরপত্র ডাকা হাটগুলো হলোÑ ঝিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ, গোলাপবাগ মাঠের পাশের সিটি করপোরেশনের আদর্শ স্কুল মাঠ ও আশপাশের ডিসিসির খালি জায়গা, লালবাগ মরহুম হাজী দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ এবং তৎসংলগ্ন বেড়িবাঁধের খালি জায়গা ও আশপাশ এলাকা, আরমানিটোলা মাঠের বিপরীতে কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দণি দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার সংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠের অস্থায়ী পশুর হাট। গত ৩ সেপ্টেম্বর দরপত্র বাক্স খোলা হয়। কিন্তু এবারো হতাশ হন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। দেখা যায়, ২১টি পুনঃদরপত্র শিডিউল বিক্রি হলেও জমা পড়েছে ১৬টি। তা ছাড়া প্রথম দফার ইজারার দর থেকে মাত্র ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ লাখ টাকা বৃদ্ধি করেছে, যা গত বছরের ইজারা দরের তুলনায় প্রায় ৪০ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত কম। এর ফলে পুনঃদরপত্র আহ্বান করেও কাক্সিত দর পায়নি ডিএসসিসি। এর জন্য ইজারাদারদের সিন্ডিকেটই দায়ী করছেন অনেকে। ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় দফায় দেয়া দরে একমাত্র উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারসংলগ্ন হাটের কর্তৃপক্ষ কিছুটা সন্তুষ্ট হলেও বাকি চারটি হাটের দর নিয়ে তারা হতাশ। এ কারণে এ সংক্রান্ত কমিটি আগামীকাল সোমবারের সভার পর তৃতীয় দফা দরপত্র বিক্রি করা হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। নিয়মানুযায়ী, গত বছরের ইজারার দরের চেয়ে কম দর উঠলে সিটি করপোরেশন হাট ইজারা দিতে পারে না। এ কারণেই তাদের পুনঃদরপত্র আহ্বান করতে হচ্ছে। তবে বারবার দেয়ার পরও কাক্সিত দর না উঠলে সিটি করপোরেশন কম দামেই হাট ইজারা দিতে বাধ্য হবে। অনেকে মনে করছেন, ইজারাদার সিন্ডিকেট ঠিক এই সুযোগটারই অপোয় ছিল। তারা গত বছরেরও কম দরে হাট ইজারা নেয়ার পাঁয়তারা করছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদ বলেন, এ সংক্রান্ত কমিটির সভায় দরপত্র যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাক্সিত দর না পেলে আবারো দরপত্র আহবান করা হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও (ডিএনসিসি) একই অবস্থা বিরাজ করছে। প্রথম দফা টেন্ডারে মাত্র ২৩ জন দরপত্র জমা দেন। এর মধ্যে উত্তরা আজমপুর সরকারি প্রাইমারি স্কুল মাঠ ইজারার জন্য আবেদনকারী হলেন তিনজন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হলেন আবসার উদ্দিন খান। তিনি হাট ইজারা দর দিয়েছেন ৫৫ লাখ টাকা। খিলতে বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গার ইজারার জন্য আবেদনকারী হলেন তিনজন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হলেন মেসার্স মিজান এন্টারপ্রাইজ। তিনি হাট ইজারা দর দিয়েছেন ৬২ লাখ টাকা। আগারগাঁও বস্তির খালি জায়গা ইজারার জন্য আবেদনকারী হলেন দু’জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হলেন এ এম জাহিদ। তিনি হাট ইজারা দর দিয়েছেন ২ কোটি ৭৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। মিরপুর সেকশন ওয়ার্ড-৬ ইস্টার্ন হাউজিংযের খালি জায়গা ইজারার জন্য আবেদনকারী হলেন তিনজন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হলেন মোহাম্মদ লুৎফর রহমান। তিনি হাট ইজারা দর দিয়েছেন ৩৩ লাখ টাকা। বারিধারা জে-ব্লকের খালি জায়গা ইজারার জন্য আবেদনকারী হলেন চারজন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হলেন হাজী নজরুল ইসলাম। তিনি হাট ইজারা দর দিয়েছেন ৮১ লাখ ৫০ হাজার ৫৫০ টাকা। উত্তরা ১১ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ সংলগ্ন খালি জায়গা ইজারার জন্য আবেদনকারী হলেন তিনজন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হলেন রাজ্জাক প্যাকেজিং অ্যাসোসিয়েটস। তারা হাট ইজারা দর দিয়েছেন ৭১ লাখ টাকা। বনানী-কাকলী (রেলওয়ে সংলগ্ন খালি জায়গা) ইজারার জন্য আবেদনকারী হলেন পাঁচজন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হলেন মোহাম্মদ ফারুক রাজা। তিনি হাট ইজারা দর দিয়েছেন ৬০ লাখ ১ হাজার ১০০ এক টাকা। অভিযোগ রয়েছে, দরদাতাদের সবাই মতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। গত ১১ আগস্ট প্রথম দফার দরপত্রে মোট আটটি হাটের মধ্যে পাঁচটি বরাদ্দ দিতে পারেন তারা। কাক্সিত দর না পাওয়ায় তিনটিতে আবারো দরপত্র আহ্বান করতে হয়। গত ২ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফার দরপত্র খুলে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। আজ রোববার ডিএনসিসির এ সংক্রান্ত কমিটির সভায় এ তিনটি হাট নিয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে সূত্র জানিয়েছে, দ্বিতীয় দফায় দেয়া দরও তেমন বেশি নয়। এর মধ্যে একটির দরে সন্তুষ্ট হওয়ার মতো থাকলেও বাকি দু’টিতে আবারো দরপত্র আহ্বান করতে হতে পারে। এ ব্যাপারে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, এ সংক্রান্ত কমিটি দর যাচাইবাছাই করে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে দর সন্তোষজনক না হলে আবার দরপত্র আহ্বান করতে হবে। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিকভাবে আমরা কাউকে চিনি না, দর দেখে হাট ইজারা দেয়া হচ্ছে।
Headlines from most popular newspapers of Bangladesh. বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকার সংবাদ শিরোনামগুলো এক নজরে দেখে নিন।
Sunday, September 7, 2014
পশুর হাট ইজারায় ভেল্কিবাজি:নয়াদিগন্ত
বার কোরবানির পশুর হাট নিয়ে গভীর চক্রান্তে নেমেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। তারা হাটগুলো পানির দামে বাগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা এঁটেছেন। তাই তৈরি হয়েছে পাতানো ইজারার (টেন্ডার) ছক। প্রথমত, হাট ইজারা নেয়ার ব্যাপারে কেউ তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ইজারাদারদের পরিবর্তে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাই এবার তাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। দেশের নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দেখিয়ে তারা বলছেন, এ বছর বাজারমূল্যে ইজারা নিলে ঘরবাড়ি বিক্রি করে ক্ষতি পোষাতে হবে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তারা কয়েকজন কাগুজে আবেদনকারী ঠিক করে রেখেছেন। ইজা জানা গেছে, গত বছরের চেয়ে ৪০ লাখ থেকে তিন কোটি টাকা পর্যন্ত কমে হাট ইজারা নেয়ার পাঁয়তারা করছেন তারা। এ জন্য গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। নিজেদের কাক্সিত দামে ইজারা পেতে একই ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন নামে-বেনামে নাম মাত্র মূল্য দিয়ে দরপত্র জমা দিচ্ছে। এ কারণে বারবার দরপত্র আহবান করেও কাক্সিত দর পাচ্ছে না সিটি করপোরেশন। তাই এবার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা করছে তারা। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলে ঢাকা দণি সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন ১১টি অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের জন্য গত আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে শিডিউল বিক্রি শুরু হয়। ১২ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দরপত্র জমা নেয়া হয়। ওই দিন বিকেলে দরপত্র বাক্স খোলা হয়। দরপত্র খোলার পর দেখা যায় সিন্ডিকেটের বাইরের কোনো দরপত্র নেই। অভিযোগ উঠেছে, তাদের বাইরে কারো পে শিডিউল সংগ্রহ ও জমা দেয়া সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, এ হাটগুলোর বিপরীতে ১১৩টি শিডিউল বিক্রি হলেও জমা পড়ে মাত্র ৩৯টি। এর মধ্যে ঝিগাতলা হাজারীবাগ মাঠের শিডিউল বিক্রি হয় ১৯টি, সেখানে জমা পড়ে মাত্র একটি। যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ মাসুদ রানা একাই শিডিউল জমা দেন। তিনি এই হাটের জন্য দর প্রস্তাব করেছেন ১১ লাখ ১১ হাজার ১০ টাকা। গত বছর এই হাট ইজারা দেয়া হয় ৫৫ লাখ ৩৪ হাজার ২০ টাকায়। লালবাগ মরহুম হাজী দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ ও বেড়িবাঁধ সংলগ্ন খালি জায়গায় (বিকল্প আরমানিটোলা) তিনটি শিডিউলের মধ্যে জমা হয় তিনটিই। এ শিডিউলে সর্বোচ্চ দরদাতা হলেন শেখ মোহাম্মদ আলমগীর, যার দরপত্রের মূল্য এক কোটি এক লাখ এক হাজার ১০০ টাকা। তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। অথচ গত বছর আরমানিটোলা হাটের সর্বোচ্চ দরদাতা ইলিয়াস রশিদ দেন চার কোটি এক লাখ ১১ হাজার ৫০৭ টাকা। এর আগের বছর সর্বোচ্চ দর ছিল চার কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দণি দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন (নতুন হাট) জায়গা সাতটি শিডিউলের মধ্যে জমা হয় তিনটি, যার সর্বোচ্চ দরদাতা হাজী মোহাম্মদ আবুল হোসেন সরকার দর দিয়েছেন এক লাখ ১০ হাজার টাকা। গোলাপবাগ পশুর হাটের জন্য বিক্রি হওয়া ৯টি শিডিউলের মধ্যে জমা পড়েছে সাতটি। এই হাটের জন্য সর্বোচ্চ ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা দর প্রস্তাব করেছেন মোহাম্মদ হামিদুল্লাহ। গত বছর ছিল ৬১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। উত্তর শাহজাহানপুর হাটের জন্য নুরে নবী ভূঁইয়া রাজু সর্বোচ্চ দর প্রস্তাব করেছেন পাঁচ লাখ ৬০ হাজার টাকা। গত বছর ছিল পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। রহমতগঞ্জ খেলার মাঠের জন্য তিনটি দরপত্র জমা পড়ে। সর্বোচ্চ দরদাতা রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি ছয় লাখ ৬৩ হাজার ২৭৪ টাকা। গত বছর ছিল ৬ লাখ ৩১ হাজার ৬৮৯ টাকা। মেরাদিয়া হাটের জন্য চারটি দরপত্র জমা পড়ে। সর্বোচ্চ দরদাতা সাবা এন্টারপ্রাইজ ৫৬ লাখ টাকা প্রস্তাব করে। গত বছর ছিল ২৬ লাখ এক হাজার টাকা। সাদেক হোসেন খোকা মাঠের জন্য ৩৫টি শিডিউল বিক্রি হলেও জমা পড়ে মাত্র চারটি। এই হাটের জন্য সর্বোচ্চ দরদাতা মোহাম্মদ আলী দর দেন ৫৬ লাখ এক হাজার টাকা। গত বছর ছিল ২৭ লাখ এক হাজার টাকা। ধূপখোলা হাটের জন্য সর্বোচ্চ দরদাতা হাজী মুহাম্মদ শামসুজ্জোহা ১০ লাখ আট হাজার টাকা। গত বছর ছিল নয় লাখ ৪৬ হাজার টাকা। গোপীবাগ হাটের জন্য সর্বোচ্চ দরদাতা সহিদউদ্দিন আহমেদ সেলিম ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা। গত বছর ছিল ২১ লাখ টাকা। পোস্তগোলা হাটের জন্য সর্বোচ্চ দরদাতা হাজী মোহাম্মদ রুবেল ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা। গত বছর ছিল নয় লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ ঘটনায় ডিএসসিসির কোরবানির হাটসংক্রান্ত কমিটি দর যাচাই বাছাই করে হতাশ হয়ে পড়েন। ১১টি হাটের দরের মধ্যে পাঁচটির দর এতই নিচে যে, পুনঃদরপত্র দিতে বাধ্য হয়। পুনঃদরপত্র ডাকা হাটগুলো হলোÑ ঝিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ, গোলাপবাগ মাঠের পাশের সিটি করপোরেশনের আদর্শ স্কুল মাঠ ও আশপাশের ডিসিসির খালি জায়গা, লালবাগ মরহুম হাজী দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ এবং তৎসংলগ্ন বেড়িবাঁধের খালি জায়গা ও আশপাশ এলাকা, আরমানিটোলা মাঠের বিপরীতে কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দণি দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার সংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠের অস্থায়ী পশুর হাট। গত ৩ সেপ্টেম্বর দরপত্র বাক্স খোলা হয়। কিন্তু এবারো হতাশ হন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। দেখা যায়, ২১টি পুনঃদরপত্র শিডিউল বিক্রি হলেও জমা পড়েছে ১৬টি। তা ছাড়া প্রথম দফার ইজারার দর থেকে মাত্র ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ লাখ টাকা বৃদ্ধি করেছে, যা গত বছরের ইজারা দরের তুলনায় প্রায় ৪০ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত কম। এর ফলে পুনঃদরপত্র আহ্বান করেও কাক্সিত দর পায়নি ডিএসসিসি। এর জন্য ইজারাদারদের সিন্ডিকেটই দায়ী করছেন অনেকে। ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় দফায় দেয়া দরে একমাত্র উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারসংলগ্ন হাটের কর্তৃপক্ষ কিছুটা সন্তুষ্ট হলেও বাকি চারটি হাটের দর নিয়ে তারা হতাশ। এ কারণে এ সংক্রান্ত কমিটি আগামীকাল সোমবারের সভার পর তৃতীয় দফা দরপত্র বিক্রি করা হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। নিয়মানুযায়ী, গত বছরের ইজারার দরের চেয়ে কম দর উঠলে সিটি করপোরেশন হাট ইজারা দিতে পারে না। এ কারণেই তাদের পুনঃদরপত্র আহ্বান করতে হচ্ছে। তবে বারবার দেয়ার পরও কাক্সিত দর না উঠলে সিটি করপোরেশন কম দামেই হাট ইজারা দিতে বাধ্য হবে। অনেকে মনে করছেন, ইজারাদার সিন্ডিকেট ঠিক এই সুযোগটারই অপোয় ছিল। তারা গত বছরেরও কম দরে হাট ইজারা নেয়ার পাঁয়তারা করছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদ বলেন, এ সংক্রান্ত কমিটির সভায় দরপত্র যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাক্সিত দর না পেলে আবারো দরপত্র আহবান করা হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও (ডিএনসিসি) একই অবস্থা বিরাজ করছে। প্রথম দফা টেন্ডারে মাত্র ২৩ জন দরপত্র জমা দেন। এর মধ্যে উত্তরা আজমপুর সরকারি প্রাইমারি স্কুল মাঠ ইজারার জন্য আবেদনকারী হলেন তিনজন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হলেন আবসার উদ্দিন খান। তিনি হাট ইজারা দর দিয়েছেন ৫৫ লাখ টাকা। খিলতে বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গার ইজারার জন্য আবেদনকারী হলেন তিনজন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হলেন মেসার্স মিজান এন্টারপ্রাইজ। তিনি হাট ইজারা দর দিয়েছেন ৬২ লাখ টাকা। আগারগাঁও বস্তির খালি জায়গা ইজারার জন্য আবেদনকারী হলেন দু’জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হলেন এ এম জাহিদ। তিনি হাট ইজারা দর দিয়েছেন ২ কোটি ৭৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। মিরপুর সেকশন ওয়ার্ড-৬ ইস্টার্ন হাউজিংযের খালি জায়গা ইজারার জন্য আবেদনকারী হলেন তিনজন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হলেন মোহাম্মদ লুৎফর রহমান। তিনি হাট ইজারা দর দিয়েছেন ৩৩ লাখ টাকা। বারিধারা জে-ব্লকের খালি জায়গা ইজারার জন্য আবেদনকারী হলেন চারজন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হলেন হাজী নজরুল ইসলাম। তিনি হাট ইজারা দর দিয়েছেন ৮১ লাখ ৫০ হাজার ৫৫০ টাকা। উত্তরা ১১ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ সংলগ্ন খালি জায়গা ইজারার জন্য আবেদনকারী হলেন তিনজন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হলেন রাজ্জাক প্যাকেজিং অ্যাসোসিয়েটস। তারা হাট ইজারা দর দিয়েছেন ৭১ লাখ টাকা। বনানী-কাকলী (রেলওয়ে সংলগ্ন খালি জায়গা) ইজারার জন্য আবেদনকারী হলেন পাঁচজন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হলেন মোহাম্মদ ফারুক রাজা। তিনি হাট ইজারা দর দিয়েছেন ৬০ লাখ ১ হাজার ১০০ এক টাকা। অভিযোগ রয়েছে, দরদাতাদের সবাই মতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। গত ১১ আগস্ট প্রথম দফার দরপত্রে মোট আটটি হাটের মধ্যে পাঁচটি বরাদ্দ দিতে পারেন তারা। কাক্সিত দর না পাওয়ায় তিনটিতে আবারো দরপত্র আহ্বান করতে হয়। গত ২ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফার দরপত্র খুলে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। আজ রোববার ডিএনসিসির এ সংক্রান্ত কমিটির সভায় এ তিনটি হাট নিয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে সূত্র জানিয়েছে, দ্বিতীয় দফায় দেয়া দরও তেমন বেশি নয়। এর মধ্যে একটির দরে সন্তুষ্ট হওয়ার মতো থাকলেও বাকি দু’টিতে আবারো দরপত্র আহ্বান করতে হতে পারে। এ ব্যাপারে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, এ সংক্রান্ত কমিটি দর যাচাইবাছাই করে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে দর সন্তোষজনক না হলে আবার দরপত্র আহ্বান করতে হবে। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিকভাবে আমরা কাউকে চিনি না, দর দেখে হাট ইজারা দেয়া হচ্ছে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment