Sunday, September 21, 2014

তিস্তা চুক্তিতে ঐকমত্য:কালের কন্ঠ

তিস্তা ও ফেনী নদীর পানিবণ্টনে অন্তর্বর্তী চুক্তি দ্রুত চূড়ান্ত করার বিষয়ে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। গতকাল শনিবার নয়াদিল্লিতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) তৃতীয় বৈঠক শেষে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে ঝুলে থাকা স্থলসীমান্ত চুক্তি ও এর প্রটোকল বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে বিশ
েষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। ভারতের ৮০ কোটি ডলার ঋণের আওতায় বাংলাদেশের নেওয়া প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়েছে গতকালের বৈঠকে। বাংলাদেশ ভারতের কাছে আবারও অনুরূপ ঋণ সুবিধা চেয়েছে। গত জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতে দুই দেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে মামলার রায়কেও বাংলাদেশ-ভারত স্বাগত জানায়। গতকালের বৈঠকে ঢাকা-শিলং পরীক্ষামূলক বাসসেবা চালু, মৈত্রী এক্সপ্রেসের চলাচল ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচের সংখ্যা বৃদ্ধি, দুই দেশের সীমান্তবর্তী সব জেলার জেলা প্রশাসকদের নিয়ে নয়াদিল্লিতে বৈঠক, নৌসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠান, দুই দেশের উপকূলে পরীক্ষামূলক জাহাজ চলাচলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া আন্তরাষ্ট্রীয় সংযোগকে (কানেক্টিভিটি) সামনে রেখে আশুগঞ্জ নৌবন্দর নির্মাণ, আখাউড়া-আগরতলা সড়কের আধুনিকায়ন, পাবনার ঈশ্বরদীতে রেল কনটেইনার ডিপো, স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনগুলোর অবকাঠামো আধুনিকায়ন, বিসিআইএম-অর্থনৈতিক করিডরের মতো বিষয় যৌথ বিবৃতিতে স্থান পেয়েছে। বিবৃতিতে বাংলাদেশের মাটি ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে ব্যবহার হতে না দেওয়ার অঙ্গীকার রয়েছে। তবে ভারতের এমন অঙ্গীকার ওই বিবৃতিতে স্থান পায়নি। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক এ করিমসহ আটজন সচিব ছিলেন। ভারতের পক্ষে দেশটির উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। পরে উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবরা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগিতাবিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। যৌথ বিবৃতির প্রথম দফায় জেসিসির তৃতীয় বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের নেতৃত্বে ওই দেশটির প্রতিনিধিদলের অংশ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বহুমুখী সম্পর্ক : যৌথ বিবৃতির দ্বিতীয় দফায় বলা হয়েছে, উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত বছর ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জেসিসি বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে উভয় দেশের উদ্যোগ ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব দিক পর্যালোচনা করেছে। এটি দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা ও সম্পর্ক আরো জোরদারের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, আন্তরাষ্ট্রীয় সংযোগ (কানেক্টিভিটি), সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, পানি, বিদ্যুৎ, জাহাজ চলাচল, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, উন্নয়ন সহযোগিতা, শিল্পকলা ও সংস্কৃতি, মানুষে মানুষে বিনিময়, মানবসম্পদ উন্নয়নসহ সব বিষয়ে সম্পর্ক বিস্তৃত হয়ে তা সত্যিই বহুমুখী হয়েছে। সফর বিনিময়ের তাগিদ : যৌথ বিবৃতির তৃতীয় দফায় বলা হয়েছে, গত জুনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ও আগস্টে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সফর দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলোকে সামনে এগিয়ে আনতে সহায়ক হয়েছে বলে উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করেন। গত মে মাসে ভারতে নতুন সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রী হিসেবে মাহমুদ আলীর নয়াদিল্লি সফরের গুরুত্বের বিষয়েও তাঁরা একমত হয়েছেন। জেসিসি বৈঠকে উভয় পক্ষের প্রতিনিধিদলে সচিবদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিরও প্রশংসা করেছেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।  যৌথ বিবৃতির চতুর্থ দফায় বলা হয়েছে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গতি ও টেকসই নতুন মাত্রা আনতে উচ্চপর্যায়ের সফরের গুরুত্ব স্বীকার করে উভয় পক্ষ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে। যৌথ বিবৃতির পঞ্চম দফায় বলা হয়েছে, উভয় পক্ষ বন্ধুত্বপূর্ণ ও সমন্বিত অংশীদারি বজায় রাখতে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে কর্মকর্তা পর্যায়ে নিয়মিত সফর বিনিময়কে স্বাগত জানায়। জেসিসি বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে গত মার্চে নয়াদিল্লিতে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠক ও আগস্ট মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক/যুগ্ম সচিব পর্যায়ের বৈঠক নিয়ে মন্ত্রীরা সন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁরা একমত হয়েছেন, সম্পর্কে বিশেষ মাত্রা ধরে রাখতে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক হওয়া প্রয়োজন। দুই দেশের বিদ্যুৎ, বাণিজ্য ও নৌপরিবহনসচিব পর্যায়ে দ্রুত বৈঠক অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সমুদ্রসীমা : যৌথ বিবৃতির ষষ্ঠ দফায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমুদ্রসীমার সমাধান হওয়ায় উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এই সমাধান দ্বিপক্ষীয় বোঝাপড়া, শুভেচ্ছা জোরদার করবে। এটি সমুদ্রসীমা ইস্যুর নিষ্পত্তি এবং বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রসম্পদের টেকসই অনুসন্ধানের পথ সুগম করেছে। স্থলসীমান্ত চুক্তি : সপ্তম দফায় বলা হয়েছে, ১৯৭৪ সালের স্থলসীমান্ত চুক্তির প্রটোকল বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে বলে উভয় মন্ত্রী অবগত আছেন। এই প্রটোকল সীমান্ত সম্পর্কিত অনিষ্পন্ন ইস্যুগুলোর সমাধান আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। নিরাপত্তা : যৌথ বিবৃতির অষ্টম দফায় বলা হয়েছে, গত আগস্টে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিএসএফ-বিজিবি মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক, সেপ্টেম্বরে ঢাকায় নিরাপত্তাবিষয়ক যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির ১৪তম বৈঠক এবং স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের ১৫তম বৈঠকে গঠনমূলক আলোচনায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। ভারতের মন্ত্রী নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের সহযোগিতায় তাঁর দেশের পক্ষ থেকে প্রশংসা করেছেন। কোনো দেশ, বিশেষ করে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার হতে দেবে না বলে ঢাকা যে আশ্বাস দিয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। যৌথ বিবৃতির নবম দফায় বলা হয়েছে, আন্তঃসীমান্ত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ, অবৈধ চলাচল, সংঘাত ও প্রাণহানি রোধে বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়মিত সমন্বয় ও সফর বিনিময়সহ যৌথ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (সিবিএমপি) পূর্ণ বাস্তবায়নে উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়েছেন। সীমান্তে মর্মান্তিক প্রাণহানির সংখ্যা কমিয়ে আনতে ভারতের নেওয়া উদ্যোগগুলোর প্রশংসা করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলোতে বেড়া দেওয়ার কাজ দ্রুত শেষ করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়েও তাঁরা সম্মত হন। দশম দফায় বলা হয়েছে, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ডেপুটি কমিশনার (ডিসি)/ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট (ডিএম) পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠানের নতুন ব্যবস্থাকে উভয় মন্ত্রী স্বাগত জানান। এই বৈঠক ভারত ও বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে এবং আগামী মাস থেকেই তা শুরু হবে। আগামী বছরের শুরুর দিকে ভারতে উভয় দেশের সীমান্ত এলাকার সবগুলো জেলার ডিসি/ডিএম পর্যায়ে সম্মেলন অনুষ্ঠানে একযোগে কাজ করার বিষয়েও তাঁরা সম্মত হন। যৌথ বিবৃতির একাদশ দফায় বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের পনেরোতম বৈঠকে সিবিএমপি অনুযায়ী সীমান্ত এলাকায় বেসামরিক উন্নয়নকাজের অনুমতি দেওয়ার দায়ভার বিজিবি-বিএসএফের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে দেওয়ার এবং এ ক্ষেত্রে অনিষ্পন্ন ইস্যুগুলো সংশ্লিষ্ট ডিসি/ডিএম বৈঠকে পাঠানোর যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে স্বাগত জানিয়েছেন। যৌথ বিবৃতির দ্বাদশ দফায় বলা হয়েছে, বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ীতে অবিলম্বে অভিবাসন সুবিধা চালু করতে বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় পক্ষ জানায়, ফুলবাড়ীতে কাজ শুরু হয়েছে এবং অভিবাসন চৌকির কার্যক্রম শিগগির শুরু হবে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ : যৌথ বিবৃতির ত্রয়োদশ দফায় বলা হয়েছে, উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ জোরদারে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য বাধাগুলো দূর করার বিষয়ে তাঁরা একমত হয়েছেন। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ভারসাম্যকে উৎসাহিত করতে এবং অশুল্ক ও আধাশুল্ক বাধা দূর করার বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতে রপ্তানি বাণিজ্যে বাধাগুলোর একটি তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে। ভারত তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে রাজি হয়েছে। এ উদ্যোগ শুধু বাণিজ্য ঘাটতিই কমাবে না, তৃতীয় কোনো দেশে বাংলাদেশের রপ্তানিও বাড়াবে। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (স্পেশাল ইকোনমিক জোন) জন্য জমি বরাদ্দ ও সেখানে বিনিয়োগে আগ্রহী ভারতীয় উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে ভারতীয় পক্ষ স্বাগত জানিয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির মেয়াদ আগামী ৩১ মার্চ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এটি নবায়নের বিষয়ে আলোচনা শুরু করতেও উভয় মন্ত্রী সম্মত হয়েছেন। যৌথ বিবৃতির চতুর্দশ দফায় বলা হয়েছে, উভয় পক্ষ সমন্বিত উপায়ে স্থল কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস) বা স্থলবন্দর এবং সমন্বিত চেকপোস্টগুলোর (আইসিপি) অবকাঠামো দ্রুত আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। ২০১৩ সালের নভেম্বরে আখাউড়া-আগরতলায় আইসিপি কার্যক্রম শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে সেখানে বিদ্যমান আধুনিক সুবিধাগুলোর সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই যাতে পেট্রাপোলে আইসিপি চালু করা যায়, সে লক্ষ্যে অবকাঠামো নির্মাণ এবং দুপাশে সংযোগ সড়কগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করার বিষয়েও উভয় মন্ত্রী রাজি হয়েছেন। পঞ্চদশ দফায় বলা হয়েছে, উভয় পক্ষ থেগামুখ-দেমাগিরি এবং সাব্রুম-রামগড়ের মধ্যে স্থল কাস্টমস স্টেশন চালুর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে রাজি হয়েছে। এলসিএসভিত্তিক নির্দিষ্ট বন্দর বিধিনিষেধবিষয়ক বিদ্যমান ব্যবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়েও সমঝোতা হয়েছে। বাণিজ্য সুবিধা জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দেশের মান ও সনদের পারস্পরিক স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তাঁরা ভারতের ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (বিআইএস) ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি দ্রুত চূড়ান্ত করার আহ্বান জানান। বাণিজ্যবিষয়ক সর্বশেষ যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ‘ন্যাশনাল অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড ফর টেস্টিং অ্যান্ড ক্যালিবারেশন ল্যাবরেটরিস’-এর স্বীকৃতি পাওয়া বিএসটিআই সার্টিফিকেট বা ল্যাবরেটরির তালিকা ভারতের কাছে হস্তান্তর করে। ভারত বিষয়টি আমলে নিয়েছে। সীমান্ত হাট: যৌথ বিবৃতির ষোড়শ দফায় বলা হয়েছে, সীমান্ত হাট চালুর ইতিবাচক অভিজ্ঞতা প্রশংসার সঙ্গে আমলে নিয়েছেন উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁরা বাংলাদেশ-ত্রিপুরা সীমান্ত বরাবর কমলাসাগর-তারাপুকুর, শ্রীনগর-পূর্বমধুগ্রাম, পালবসতি-পশ্চিম বটুলি এবং কামালপুর-কুর্মাঘাট সীমান্ত হাটের নির্মাণকাজের অগ্রগতিকে স্বাগত জানান। বাংলাদেশ-মেঘালয় সীমান্ত বরাবর ভোলাগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ, নালিকোটা-সাইদাবাদ, শিববাড়ি-ভুইয়াপাড়া এবং রিংকু-বাগানবাড়িতে নতুন সীমান্ত হাট চালুর বিষয়ে উভয় দেশের সমঝোতাকেও তাঁরা স্বাগত জানান। ঋণ সুবিধা: যৌথ বিবৃতির সপ্তদশ দফায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে ভারত সরকারের দেওয়া ৮০ কোটি ডলার ঋণ সুবিধার আওতায় নেওয়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যালোচনা করেছেন। তাঁরা দেখেছেন, ৭৫ কোটি ১৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার ব্যয় প্রক্রিয়াধীন এবং প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশ ভারতের ঋণ সুবিধার প্রশংসা করেছে। দ্বিতীয় ঋণ সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করতে বাংলাদেশ ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছে। আশুগঞ্জ নৌবন্দর: অষ্টাদশ দফায় বলা হয়েছে, উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশুগঞ্জে অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের জন্য ‘ডিটেইল প্রজেক্ট রিপোর্টের (ডিপিআর)’ প্রস্তুতির অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন এবং দ্রুত নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেন। ভারত জানিয়েছে, আন্তসরকার রেলওয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈশ্বরদীতে রেল কনটেইনার ডিপোর জন্য ডিপিআর প্রস্তুতের বিষয়ে ভারত সরকার রাজি আছে। আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়ক আধুনিকায়ন বা শক্তিশালীকরণের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এসডিপি: উনিশতম দফায় বলা হয়েছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ক্ষুদ্র উন্নয়ন প্রকল্পবিষয়ক (এসডিপি) সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) কার্যক্রম চালু হওয়ায় উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ওই এমওইউর আওতায় চলতি অর্থবছর রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটে তিনটি বেসামরিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। আন্তরাষ্ট্রীয় সংযোগ: যৌথ বিবৃতির ২০তম দফায় বলা হয়েছে, আন্তরাষ্ট্রীয় সংযোগ (কানেক্টিভিটি) উন্নয়নের গুরুত্বের বিষয়ে উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়েছেন। চলতি বছরই ঢাকা-শিলং পরীক্ষামূলক বাসসেবা চালুর প্রস্তাবকে তাঁরা স্বাগত জানান। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে মৈত্রী এক্সপ্রেসের ভারতীয় রেলওয়ে রেকে অতিরিক্ত শীতাতাপনিয়ন্ত্রিত কোচ সংযোজন ও দুই মাসের মধ্যে সপ্তাহে ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের আসা-যাওয়ার সংখ্যা দুবার থেকে বাড়িয়ে তিনবারে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যৌথ বিবৃতির ২১তম দফায় বলা হয়েছে, ত্রিপুরার জনগণের জন্য সরকারি সরবরাহব্যবস্থার (পিডিএস) চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যশস্য নেওয়ার সুযোগ দেওয়ায় (বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে) ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে কৃতজ্ঞতা জানান। ২২তম দফায় বলা হয়েছে, ‘প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড (পিআইডাব্লিউটিটি)’-এর আওতায় পরিবেশ ও ব্যয়ের দিক দিয়ে কার্যকর নৌপথ ব্যবহারের সুযোগ এবং কার্যকর সদ্ব্যবহারের বিষয়ে উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মত হন। যৌথ বিবৃতির ২৩তম দফায় বলা হয়েছে, আগামী মাসে পরীক্ষামূলকভাবে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চালুর বিষয়ে উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাজি হয়েছেন। এ ছাড়া আগামী মাসেই ঢাকায় নৌসচিব পর্যায়ের পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠান ও দ্রুত উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি স্বাক্ষরে দুই দেশ সম্মত হয়েছে। অভিন্ন নদ-নদী : ২৪তম দফায় বলা হয়েছে, উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্রুত তিস্তা ও ফেনী নদীর পানিবণ্টনে অন্তর্বর্তী চুক্তি চূড়ান্ত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। যৌথ বিবৃতির ২৫তম দফায় বলা হয়েছে, ভারতীয় পক্ষ তাদের আগের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছে, প্রস্তাবিত আন্তনদী সংযোগ প্রকল্পের আওতায় হিমালয় অববাহিকার কোনো নদীকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে ভারত এককভাবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না, যা বাংলাদেশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। উভয় পক্ষ পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে ঢাকায় যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) ৩৮তম বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা বলেছে। উভয় পক্ষ টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পবিষয়ক জেআরসি সাব-গ্রুপের তৃতীয় বৈঠক দ্রুত অনুষ্ঠান ও চলমান সমীক্ষার তথ্য-উপাত্ত আরো বিনিময়ে রাজি হয়েছে। বিদ্যুৎ : যৌথ বিবৃতির ২৬তম দফায় বলা হয়েছে, উভয় পক্ষ বিদ্যুৎ খাতে বিদ্যমান সহযোগিতা ও অর্জনে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। গত অক্টোবরে ভেড়ামারা-বহরমপুরের মধ্যে আন্তসংযোগ গ্রিড প্রতিষ্ঠা এবং দ্বিপক্ষীয় বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির আওতায় ভারত থেকে বাংলাদেশে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রশংসা করেছেন উভয় মন্ত্রী। ত্রিপুরার পালাটানা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আনার প্রক্রিয়াতেও তাঁরা সন্তোষ প্রকাশ করেন। ভেড়ামারা-বহরমপুরের গ্রিড আন্তসংযোগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ ৫০০ মেগাওয়াট থেকে এক হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করতে বিদ্যুৎবিষয়ক যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির সিদ্ধান্তকে তাঁরা স্বাগত জানান। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো থেকে বিদ্যুৎ আমদানির সম্ভাবনা নিয়ে যৌথ কারিগরি কমিটির সুপারিশ গ্রহণের বিষয়ে যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির সিদ্ধান্তেরও প্রশংসা করেন তাঁরা। বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কম্পানির এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার অগ্রগতিতে উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বিদ্যুৎ প্রকল্পে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের বিষয়টিও সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হবে। ২৭তম অনুচ্ছেদে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং বিদ্যুৎ ও কানেক্টিভিটিতে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর উভয় পক্ষের গুরুত্বারোপের কথা বলা হয়েছে। ২৮তম অনুচ্ছেদে দুই দেশের মধ্যে টেলিযোগাযোগে খাতে সহযোগিতা জোরদারে সম্মতির বিষয়টি স্থান পেয়েছে। ২৯তম অনুচ্ছেদে পারমাণবিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, মহাকাশ, স্বাস্থ্য, পাট ও বস্ত্র, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সমুদ্র, সমুদ্রবিজ্ঞান, মৎস্য সম্পদ, আবহাওয়া বিজ্ঞানসহ সাগর অর্থনীতির (ব্লু ইকোনমি) সব খাতে উভয় দেশের সহযোগিতা জোরদারের আগ্রহ স্থান পেয়েছে। ৩০ থেকে ৩৬তম দফাগুলোতে মানুষে-মানুষে যোগাযোগ, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, দুই দেশের পররাষ্ট্রবিষয়ক একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা জোরদার, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ে এমওইউ স্বাক্ষরসহ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নয়াদিল্লি সফরের বিভিন্ন দিক স্থান পেয়েছে। জেসিসির চতুর্থ বৈঠক উভয় দেশের জন্য সুবিধাজনক সময়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে।

No comments:

Post a Comment