Saturday, September 20, 2014

শিগগির কাটছে না রাজধানীর সড়কের বেহাল দশা:নয়াদিগন্ত

রাজধানীর গুলশান-১ থেকে মহাখালীগামী সড়কে বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার পানির পাইপ বসানোর কাজ চলছে। এ জন্য রাস্তার উভয় পাশের প্রান্তঘেঁষে খোঁড়াখুঁড়ি করা হচ্ছে। খোঁড়ার পর মাটি ফেলা হচ্ছে রাস্তার পাশে। অনেক স্থানে রাস্তা আড়াআড়ি খোঁড়া হয়েছে। এ ছাড়া সড়কটির আইল্যান্ডেও সংস্কারকাজ চলছে। দীর্ঘ দিন থেকেই এ সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করা হচ্ছে। এ কারণে ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচলে বিঘœ ঘটছে।  গুলশান-১ এর ১৬/এ ও ১
৮ নম্বর সড়কে সম্প্রতি ড্রেন সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু তার ক্ষত এখনো স্পষ্ট। ড্রেন সংস্কার করতে গিয়ে রাস্তার অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। পুরো রাস্তাই গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারীদের দুর্ভোগের অন্ত নেই।  বনানীর ‘বি’ ব্লকের ১৬ নম্বর রোড, ‘এ’ ব্লকের ২৭ নম্বর রোডসহ বনানীর প্রায় প্রতিটি সড়কের অবস্থা খুবই করুণ।  গুলশান-২ এর ৩৬, ৩৭, ৩৮সহ বেশির ভাগ সড়কেই ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত রয়েছে। বারিধারার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ইটের খোয়া ফেলে কোনোমতে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে এসব সড়ক।  মিরপুরের কালশী সড়ক যেন এক মৃত্যুফাঁদ। দীর্ঘ দিন ধরেই এ সড়কের সংস্কারকাজ চলছে। ড্রেন নির্মাণ, রাস্তা বর্ধিতকরণ, ফুটপাথ নির্মাণ, কালভার্ট নির্মাণ এর মধ্যে অন্যতম। সড়কটির অবস্থা এখন এতই করুণ যে, উঁচুনিচু আর ভাঙাপথে চলতে গিয়ে বুকের পাঁজর খুলে যেতে চায় যাত্রীদের।  ওই এলাকার আকিদুল ইসলাম জানান, তিন মাস ধরে এ রাস্তা দিয়ে গাড়ি তো দূরের কথা হেঁটেই যাওয়া যায় না। রাস্তার কোথাও দুই থেকে তিন ফুট গর্ত হয়েছে। মাঝে মধ্যেই গাড়ি উল্টে যাওয়ার দৃশ্যও চোখে পড়ে। গাড়ি বিকল হলে অসহনীয় যানজট সৃষ্টি হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাবতলী-মিরপুর হয়ে বনানী, কাকলী, উত্তরা, আবদুল্লাহপুর রুটে ছোট-বড় ছয়টি পরিবহনের পাঁচ শতাধিক বাস চলাচল করে। সাথে হাজারও প্রাইভেট কার তো আছেই। সন্ধ্যার পর পুরো রাস্তা চলে যায় ট্রাকের দখলে। রাস্তাটির কাজ শেষ হলে মিরপুর থেকে আবদুল্লাহপুরের পথ হবে মাত্র ৩০ মিনিটের। এখন দুই  ঘণ্টায়ও যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অঞ্চল-২ এর এক কর্মকর্তা জানান, আগে ওই অঞ্চলে আটজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর সেবা দিতেন। আর এখন একজনকেই আটজনের কাজ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্ষায় মিরপুর ও পল্লবী এলাকায় সড়ক, অলিগলি তলিয়ে যায়। কালশী সড়কের প্রায় এক কিলোমিটারে শতাধিক গর্ত ও খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। রূপনগর সড়কেরও একই অবস্থা। মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ঝুটপট্টি থেকে প্যারিস রোডমুখী সড়কের চিত্রও ভালো না। সেগুনবাগিচায় বারডেম জেনারেল হাসপাতাল-২ এর সামনে থেকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিগামী সড়কের দীর্ঘ দিন থেকেই ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। মাঝে মধ্যে পিচ ঢালাই করা হলেও কিছু দিন না যেতেই আবারো একই অবস্থা হয়। রমনায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামনের সড়কে সারা বছরই ছোট-বড় গর্ত দেখা যায়।  মগবাজার-মৌচাক সড়কের অবস্থা তো বর্ণনাতীত। বর্তমানে মৌচাক থেকে ওয়ারলেস মোড় অংশের পাইলিংয়ের কাজ চলছে। আবহাওয়া শুষ্ক থাকলেও এখানে এসে তা বোঝার উপায় নেই। কাদাপানিতে একাকার অবস্থা। রাস্তার কিছু কাদা ফুটপাথে তুলে রাখা হয়েছে। কিন্তু তাতে রাস্তার করুণ অবস্থা একটুও কমেনি। বরং মৌচাক মোড় থেকে মগবাজারে যেতে গণপরিবহনকে একটি পথ ব্যবহারে বাধ্য করায় পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করেছে।  ওয়ারলেস মোড় থেকে মধুবাগগামী সড়কে বহু ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে জনগণের ভোগান্তির শেষ নেই।  শুধু এ কয়েকটি সড়কই নয়, রাজধানীতে থাকা দুই হাজার ২৯০ কিলোমিটার রাস্তার বেশির ভাগেরই এখন দুরবস্থা। এক দিকে সারা বছর বিভিন্ন সেবামূলক সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ি অন্য দিকে বৃষ্টির কারণে এসব রাস্তার প্রায় প্রতিটিই কম-বেশি ক্ষতি হয়েছে। অলিগলির প্রায় সব রাস্তাই ভেঙেচুরে একাকার অবস্থা। ছোট-বড় গর্ত হয়ে যান ও জনসাধারণের চলাচলে অসুবিধার সৃষ্টি করছে। বৃষ্টির কারণে মূল সড়কগুলোতেও কোথাও ফেটে চৌচির হয়ে গেছে আবার কোথাও ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।  পল্টন থেকে মতিঝিল, শাহবাগ থেকে ফার্মগেট কিংবা অভিজাত উত্তরার মূল সড়ক দেখে মনে হতে পারে এগুলো তো ভালোই আছে। কিন্তু একটু পর্যবেক্ষণ করলেই দেখা যায়, এসব সড়কের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। কোথাও রাস্তা ডেবে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে আবার কোথাও ড্রেন নির্মাণ করে ঠিকমতো রাস্তা মেরামত না করায় ছোট-বড় গর্ত রয়েছে। তবে যেসব রাস্তায় ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে তার চেয়ে এসব সড়কের দুর্ভোগ কিছুটা কম।  অভিযোগ রয়েছে, সিটি করপোরেশন প্রতি বছর রাস্তা সংস্কার করে থাকে। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই আবারো তা নষ্ট হয়ে যায়। নিম্নমানের কাজ করার ফলেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয় বলে সচেতন নগরবাসীর অভিযোগ।  শান্তিনগরের বাসিন্দা হাফিজ উদ্দিন ক্ষোভের সাথে বলেন, সারা বছরই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। এক সংস্থা খুঁড়ে কাজ শেষ না করতেই রাস্তার অন্য পাশে খুঁড়তে শুরু করে আরেকটি সংস্থা। এ কারণে বছরের সব সময়ই জনগণের ভোগান্তি পোহাতে হয়।  মুগদার অধিবাসী শফিকুর রহমান তীব্র ােভ প্রকাশ করে বলেন, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ে এমন কষ্ট আর কখনো হয়নি। পরিবারসহ রিকশায় যাওয়ার সময় এক দিন গর্তে পড়ে আহত হতে হয়েছে। প্রায়ই রাস্তায় রিকশা-অটোরিকশা উল্টে যেতে দেখেছেন তিনি। এ দিকে রাজধানীর বেশির ভাগ সড়কের এ অবস্থা বিরাজ করলেও তা নিয়ে সিটি করপোরেশনের তেমন মাথাব্যথা নেই। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান প্রকৌশলী মো: জাহাঙ্গীর আলম বৃষ্টিতে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ইট-বালু দিয়ে সাময়িকভাবে মেরামত করা হচ্ছে। এর বেশি এখন কিছু করা হবে না। তবে আগামী গ্রীষ্মকালে চূড়ান্তভাবে রাস্তা মেরামত করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার কোনো পরিসংখ্যান সিটি করপোরেশনের কাছে নেই বলেও জানান তিনি। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাজেটে আর্থিক বরাদ্দ থাকে। কিন্তু সেটিই শেষ কথা নয়। টাকা হাতে পাওয়াসাপেক্ষে ব্যয় করা হবে।  এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গাজী ফিরোজ রহমান নয়া দিগন্তকে জানান, ডিএনসিসির আওতায় এক হাজার ৭১ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। বৃষ্টিতে অনেক রাস্তাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে সাময়িকভাবে ইট-বালু দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করা হচ্ছে। বর্ষা মওসুম শেষে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা চূড়ান্তভাবে মেরামত করা হবে।

No comments:

Post a Comment