ভেতরে-বাইরে একের পর এক অঘটনে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে সরকার। এই অস্বস্তি সাময়িকভাবে কাটানো গেলেও দীর্ঘ মেয়াদে কী প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। দেশে বিরোধী দলের জোরদার কোনো আন্দোলন না থাকা সত্ত্বেও অঘটনের কারণে সরকারের ইমেজ পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা ভণ্ডুল হয়ে যেতে বসেছে। আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ইসলাম ধর্মের অবমাননাকর বক্তব্য, এ কে খন্দকারের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা বই বিতর্ক, তাজউ
দ্দীনকন্যা শারমিন আহমদের লেখা বই, চার সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ কেলেঙ্কারি, মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা ক্রেস্ট জালিয়াতি, ইয়াবা সম্রাট সংসদ সদস্য বদির কারাবরণসহ একের পর এক ঘটনা সরকারের জন্য নাজুক অবস্থা সৃষ্টি করেছে। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব বাংলাদেশের রাজনীতি তো বটেই, সরকারের জন্যও গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সরকারের জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে দলের ভেতর থেকেই। গত রোববার রাতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য নিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ােভ প্রকাশ করেন। সেখানে একের পর এক অঘটন নিয়েও আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য যে বা যারা দায়ী তাদের কোনোরকম ছাড় না দেয়ার কথা জানান। তিনি এর পরিণাম সম্পর্কে দলের সবাইকে হুঁশিয়ার করে দেন। আওয়ামী লীগের সিনিয়র এক নেতা আলাপকালে বলেন, যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে তা খুবই বিব্রতকর। আবদুল লতিফ সিদ্দিকী যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ধর্মবিরোধী বক্তব্য কেন রাখলেন তা ভাববার বিষয়। তিনি সরকারের জাতিসঙ্ঘ টিমে ছিলেন না। অথচ সেখানে গিয়ে সরকারের জন্য দায় হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এ কে খন্দকারের বক্তব্য যে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগের জন্য তা ভালো হয়নি। এত দিন আমরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির কথা বলে আসছিলাম। তার বক্তব্য সেই বিকৃতিকারীদেরই উসকে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সরকারকে এখন দুই ধরনের সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছে, লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য তার নিজের নয়। এটি পরিকল্পিতভাবে তাকে দিয়ে বলানো হয়ে থাকতে পারে। আবার অনেকেই তার বিরুদ্ধে সরকারের নেয়া পদপে কতদূর হতে পারে তা নিয়ে সতর্ক পর্যবেণে আছেন। প্রাথমিকভাবে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের পর সরকার একটি নিরাপদ বলয় সৃষ্টি করতে সম হলেও পরবর্তী পদপেগুলোর ওপর দলের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। সরকারের সমালোচকেরা বলছেন, ইসলাম ধর্মবিরোধী বক্তব্য মন্ত্রিসভার একজন সদস্যের মুখ থেকে বের হওয়ার পর দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ বিুব্ধ হবেন এটাই স্বাভাবিক। এই বিােভ পরিস্থিতি বাইরে তুলে ধরে সরকার রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে; কিন্তু এই পদেেপ যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, লতিফ সিদ্দিকীকে সরকার দেশে ফেরার অনুমতি দেবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। লতিফ সিদ্দিকী যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডা যাওয়ার মনস্থির করেছিলেন। পরে তিনি লন্ডন হয়ে দিল্লি এবং সর্বশেষ কলকাতায় ওঠেন। নিকটজনদের বলেছেন তিনি দেশে ফিরবেন। সে প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। দেশে ইসলামপন্থী বিভিন্ন সংগঠন ইতোমধ্যে তাকে গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। এমনকি তারা হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনেরও ঘোষণা দিয়েছেন। লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যে স্পষ্টত আওয়ামী লীগ তার প নেয়নি; কিন্তু মন্ত্রিসভা থেকে তাকে অপসারণের পরবর্তী পদপেগুলো নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ফলে আপাতত ঘটনার পরিসমাপ্তি ঘটেছে বলে কেউ মনে করতে পারছে না। মুক্তিযুদ্ধের সনদ কেলেঙ্কারি ও ক্রেস্ট জালিয়াতি নিয়ে সরকারের পদপেকে সন্তোষজনক বলে মনে করছেন না কেউই। এ জালিয়াতির ঘটনাও ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের জন্য সঙ্কট সৃষ্টি করতে পারে। আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী এ কে খন্দকারের লেখা বই নিয়ে সরকার খানিকটা বিপাকে পড়লেও তাকে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও বয়স প্রতিবন্ধী আখ্যায়িত করে পরিস্থিতি ধামাচাপা দেয়া হয়। তার পরও মুক্তিযুদ্ধের এ উপপ্রধান সেনাপতির লেখা বইটি যখন ইতিহাস হিসেবে কথা বলবে তখন তা আওয়ামী লীগের জন্যই অস্বস্তিকর হবে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। তাই কোনো মন্ত্রী-এমপি গণমানুষের বিপে কোনো কর্মকাণ্ডে জড়ালে, তা সরকারের জন্যও বিব্রতকর। মন্ত্রী, এমপি বা দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এসব বক্তব্য একান্তই তাদের ব্যক্তিগত, সরকারের নয়। তবে এসব নেতাকর্মীকে কখনোই আওয়ামী লীগ প্রশ্রয় দেয় না। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কঠোর হুঁশিয়ারি রয়েছে। আর আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর মতো সিনিয়র ও প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা অন্য নেতাকর্মীদেরও সতর্ক করে দিয়েছেন।
No comments:
Post a Comment