Tuesday, October 14, 2014

মন্ত্রিসভায় রদবদল যেকোনো দিন:নয়াদিগন্ত

মন্ত্রিসভায় রদবদল ও সম্প্রসারণ হচ্ছে। যেকোনো দিন এটা হতে পারে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের পর মন্ত্রিসভায় এ রদবদল ও সম্প্রসারণের সম্ভাবনা জোরাল হয়েছে বলে আভাস পাওয়া গেছে। ভোটারবিহীন একতরফা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিসভায় প্রথমবারের মতো সম্প্রসারণ ও পরিবর্তন আনার চিন্তাভাবনা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত
্রিসভা থেকে অপসারণের পর তা আরো জোরাল হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তবে মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাবেন সে ব্যাপারে সূত্রগুলো নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি। কারণ মন্ত্রিসভায় কারা থাকবেন আর কারা বাদ পড়বেনÑ তা প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব এখতিয়ারভুক্ত। তিনি প্রয়োজন মনে করলে দলের নীতিনির্ধারকপর্যায়ে আলোচনা করতেও পারেন, আবার না-ও করতে পারেন বলে সরকার ও দলের গুরুত্বপূর্ণ সূত্রে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতা গতকাল আলাপচারিতায় বলেন, মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ ও পরিবর্তন এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র। এটি যেকোনো দিন হতে পারে। অতিকথনের কারণে বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী নাখোশ বলে জানিয়ে তারা বলেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে খুনখারাবি বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অচিরেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একজন পূর্ণ মন্ত্রী নিয়োগের চিন্তাভাবনা করছেন। বর্তমানে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে একজন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। আর মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত ভদ্র স্বল্পভাষী হিসেবে পরিচিত ও রাজনীতির কূটচালে অনভ্যস্ত আসাদুজ্জামান খান কামাল পরিস্থিতি তেমন একটা সামাল দিতে পারছেন না। এ েেত্র বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং ’৯৬-২০০১ মেয়াদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে আবারো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ দেয়া হতে পারে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীর পদ থেকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী অপসারিত হওয়ায় এই মন্ত্রণালয়েও নতুন মন্ত্রী নিয়োগ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন আভাস পেয়ে এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হতে জোর তদবির শুরু করেছেন অনেকেই। এ েেত্র মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা: দীপু মনি ও সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জোর লবিং করছেন। পিছিয়ে নেই প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসও। তবে এ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় পূর্ণমন্ত্রী নিয়োগ দেয়া না-ও হতে পারে। আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, রাজধানীর পাশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জেলা টাঙ্গাইল থেকেই একজন মন্ত্রী নিয়োগ দেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত লতিফ সিদ্দিকী এই জেলার একমাত্র মন্ত্রী ছিলেন। ফলে বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলা মন্ত্রীশূন্য। সে েেত্র আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী মিডিয়ায় অতিমাত্রায় ভদ্রলোক হিসেবে পরিচিত কৃষিবিদ ড. আব্দুর রাজ্জাকের আবার মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনার ত্রে তৈরি হয়েছে। তার নাম এখন সরকার ও দলের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনায় রয়েছে। কেননা টাঙ্গাইল থেকে আওয়ামী লীগের বিগত দুই সরকারেই দু’জন মন্ত্রী ছিলেন। এবার লতিফ সিদ্দিকী বাদ পড়ায় সেই স্থানে ড. আব্দুর রাজ্জাকের আসার সম্ভাবনাই বেশি। টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) থেকে নির্বাচিত ড. আব্দুর রাজ্জাক বর্তমান দশম সংসদে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া টাঙ্গাইল থেকে আরো দু’জনের নাম শোনা যাচ্ছেÑ তারা হলেন মির্জাপুর আসন থেকে বারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য বিশিষ্ট শিল্পপতি একাব্বর হোসেন ও নাগরপুর থেকে দুইবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, এক সময় জাসদের প্রভাবশালী নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধে বাতেন বাহিনীর কমান্ডার খন্দকার আব্দুল বাতেন। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ১২ জানুয়ারি ৪৮ সদস্যের মন্ত্রিসভা নিয়ে যাত্রা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান মন্ত্রিসভায় ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও দু’জন উপমন্ত্রী রয়েছেন। ৪৮ মন্ত্রীর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৪২ জন, জাতীয় পার্টির তিনজন, জাসদের একজন, ওয়ার্কার্স পার্টির একজন ও জেপির একজন। ৪৮ মন্ত্রীর মধ্যে ২৩ জনই নতুন। এর আগে নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের পর ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, গঠন করেন ৩২ সদস্যের মন্ত্রিসভা। এরপর কয়েক দফায় মন্ত্রিসভার পরিসর বেড়েছে। প্রথম দফায় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়া সৈয়দ আবুল হোসেন ও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়া তানজিম আহমদ (সোহেল তাজ) পদত্যাগ করেন। পরে ২০১১ সালের নভেম্বরে মন্ত্রিসভায় যুক্ত হন ওবায়দুল কাদের ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন আটজন। নবম সংসদের সরকার গঠনের পর তা ছিল মন্ত্রিসভায় চতুর্থ দফা রদবদল।

No comments:

Post a Comment