Saturday, October 18, 2014

খেমাররুজ নেতাদের ‘গণহত্যার’ বিচার শুরু চার দশক পর:প্রথম অালো

‘নমপেন ছেড়ে যাওয়ার সেদিনের কথা আজও ভুলতে পারি না। শহর ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হলো আমাদের। খাবার নেই, এক ফোঁটা পানি নেই। হাঁটলাম মাইলের পর মাইল।’  ৭৫ বছরের বৃদ্ধ সুয়ান মম বার্তা সংস্থা এএফপিকে সম্প্রতি এভাবেই জানিয়েছিলেন তাঁর ক্ষোভের কথা। কম্বোডিয়ায় চার বছরের অতি-বাম খেমাররুজ শাসনামলে তাঁর স্বামী আর চার সন্তানকে না খেতে দিয়ে মেরে ফেলা হয়।  সুয়ান মমের মতো লাখো কম্বোডীয়র তীব্র মনোযাতনায় গত ৭
আগস্টই প্রথম দফায় কিছুটা সান্ত্বনার প্রলেপ পড়ে। খেমাররুজ শাসনামলের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দুই শীর্ষ খেমাররুজ নেতা নুয়ান চিয়া (৮৮) ও খিউ সাম্ফানকে (৮৩) ওই দিন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন জাতিসংঘ-সমর্থিত সে দেশের একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। এবার ‘গণহত্যার’ অপরাধে একই আদালতে গতকাল শুক্রবার তাঁদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে বিচার। খেমাররুজের চার বছরের (১৯৭৫-৭৯) শাসনামলে ২০ লাখ মানুষকে ফাঁসি, অনাহার ও নির্যাতন করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ আছে। নিহত ব্যক্তিদের এ সংখ্যা কম্বোডিয়ার তখনকার মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ। ২০ লাখ মানুষকে হত্যার ঘটনায় খেমাররুজ শাসনামলের যেসব নেতা দায়ী ছিলেন, তাঁদের মধ্যে প্রথম দণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ দুজন হলেন নুয়ান চিয়া ও খিউ সাম্ফান। এ দুজনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফায় বিচারকাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল গত জুলাইয়ে। গতকাল মূল বিচারকাজ শুরু হওয়ার পর বিচারক নিল নন এ দুই নেতার বিরুদ্ধে ওঠা গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগগুলো পড়ে শোনান। গতকাল আদালতে খিউ সাম্ফান দাবি করেন, তাঁর সুষ্ঠু বিচারলাভের অধিকার এরই মধ্যে লঙ্ঘন করা হয়েছে। আর নুয়ান চিয়া বলেন, তিনি কোনো প্রশ্নের জবাব দেবেন না। প্রেক্ষাপট: ১৯৭৫ সালের এপ্রিলে পল পটের নেতৃত্বে খেমাররুজ গেরিলারা কম্বোডিয়ার (তখনকার নাম কাম্পুচিয়া) রাজধানী নমপেন দখল করে নেয়। কৃষি সংস্কারের নামে তারা শহরগুলো খালি করে বহু লোককে জোর করে গ্রামে পাঠায় চাষাবাদ করতে। লক্ষ্য কৃষিভিত্তিক সমাজ গঠন। কঠোর পরিশ্রম করতে গিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে অসংখ্য লোক মারা যায়। এ ছাড়া সম্ভাব্য শত্রু মনে করে বুদ্ধিজীবী, সরকারি কর্মকর্তা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতা এবং তাঁদের পরিজনদের হত্যা করা হয়। নুয়ান চিয়াকে এসব কর্মকাণ্ডের আদর্শিক গুরু মনে করা হয়।

No comments:

Post a Comment