জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটি প্রত্যাখ্যান করে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। বিকেলে সিলেটে জেলা ও মহানগর কমিটির পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা নতুন কমিটির নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করে তাঁদের ছয়টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপির নেতা এম ইলিয়াস আলীর ‘নিখোঁ
জ’ হওয়ার ৩০ মাস পূর্তি উপলক্ষে গতকাল বিকেলে সিলেট শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে ‘ইলিয়াস মুক্তি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’। মিছিলে ছাত্রদলের বিবদমান দুটি পক্ষই অংশ নেয়। মিছিল শেষে বিকেল চারটার দিকে চৌহাট্টায় শহীদ মিনারের সামনে দিয়ে জেলা ও নগর কমিটির নেতারা যাচ্ছিলেন। এ সময় ‘ধর ধর’ বলে তাঁদের ধাওয়া করেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। তাঁরা ছাত্রদলের নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মো. লোকমানকে ধাওয়া করে ধরে ফেলেন। এ সময় তাঁকে মারধর করে জামা ছিঁড়ে ফেলা হয়। তাঁকে রক্ষা করতে মোটরসাইকেল নিয়ে তাঁর পক্ষের নেতা-কর্মীরা এগিয়ে এলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার একপর্যায়ে টিকতে না পেরে নতুন কমিটির পক্ষের লোকজন পিছু হটেন। এ সময় তাঁদের ফেলে যাওয়া ছয়টি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এতে দুই পক্ষে চারজন আহত হন। তাঁদের মধ্যে জহিরুল ও আফসার নামের দুজনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। লোকমানসহ অন্য আহত ব্যক্তিরা গ্রেপ্তার এড়াতে গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের একজন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রশিবির থেকে ছাত্রদলে যোগদান করা একাধিক নেতা নতুন কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। গতকাল মিছিল থেকে ফেরার পথে সাধারণ কর্মীরা এসব নেতাকে রাস্তায় দেখে ধাওয়া করেন। এ নিয়ে মৃদু সংঘর্ষ হয়েছে। মোটরসাইকেল পোড়ানো ও ককটেল বিস্ফোরণ প্রসঙ্গে মাহবুবুল হক দাবি করেন, ‘সবই সাধারণ কর্মীদের ক্ষোভ থেকে ঘটেছে। জেলা ও নগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মোটরসাইকেল ব্যবহার করছিলেন। ধাওয়া খেয়ে তাঁরা মোটরসাইকেল রাস্তায় ফেলে গেলে সেগুলো পোড়ানো হয়।’ তবে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সাঈদ আহমদ দাবি করেন, তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রদলের নাম ব্যবহার করে একদল সন্ত্রাসী চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছিল। পরে প্রতিরোধের মুখে তারা পালায়।’ সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পায়নি। কারা এ ঘটনায় জড়িত ছিল, এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের সিলেট জেলা ও মহানগরের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করে পরদিন নতুন জেলা কমিটির সভাপতি সাঈদ আহমদকে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অবরোধ করে রাখেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পরে পুলিশ সাঈদ আহমদসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। অবশ্য ১৫ দিন পর সাঈদ আহমদ জামিনে মুক্তি পান। ঢাকায় বিক্ষোভ: ছাত্রদলের নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। অবশ্য এ বিক্ষোভে নতুন কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া কয়েকজন নেতাও অংশ নিয়েছেন। তাঁদের দাবি, তাঁদের যোগ্যতা অনুযায়ী পদ দেওয়া হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পদবঞ্চিত প্রায় অর্ধশত নেতা তাঁদের অনুসারী কয়েক শ কর্মী-সমর্থক নিয়ে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা ‘ছাত্রদলের নতুন কমিটি মানি না, মানব না’, ‘পকেট কমিটি মানি না, মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত যান। সেখান থেকে ফিরে এসে আবার কিছুক্ষণ বিক্ষোভ করেন। ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান দাবি করেন, নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি সংগঠনের সাবেক দুই সভাপতির পকেট কমিটি। সরকারের এজেন্টদের দিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। যত দিন পর্যন্ত এই কমিটি বাতিল করা না হবে, তত দিন আন্দোলন চলতে থাকবে। এ ব্যাপারে নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য জানতে চেষ্টা করেও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। দুজনের মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে। প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার রাতে ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করে পরদিন বিকেলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ও রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। উভয় স্থানেই ককটেল বিস্ফোরণের ঘঠনা ঘটে। নতুন কমিটির ‘শো ডাউন’: ছাত্রদলের নতুন কমিটি প্রায় ২০০ মোটরসাইকেলসহ রাজধানীতে গতকাল একটি শোভাযাত্রা করেছে। বেলা দুইটার দিকে ছাত্রদলের নতুন কমিটির সভাপতি রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের নেতৃত্বে মোটর শোভাযাত্রাটি হাইকোর্ট, প্রেসক্লাব, বিজয়নগর হয়ে পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
No comments:
Post a Comment