এখন ব্যাংকের শাখায় ঢুকে পড়ছে। সংঘবদ্ধ এ চক্রের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন স্বয়ং ব্যাংক কর্মকর্তারাও। গতকাল কেরানীগঞ্জ থেকে আশরাফ হোসেন নামক এক ব্যবসায়ী দুই হাজার ডলার বিক্রি করতে এসেছিলেন। দিলকুশায় আসতেই বিভিন্ন ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি গ্রুপ ডলার কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করে। আশরাফ হোসেন প্রতি ডলারের মূল্য ৮০ টাকা চাইলে প্রতারকচক্র প্রতি ডলার ৭৯ টাকায় কিনতে চায়। ৭৯ টাকা দরে ডলার বিক্রি করতে সম্মত হলে প্রতারকচক্র আশরাফ হোসেনের কাছে ডলার চায়। প্রথমে ইতস্ত করলেও পরে ডলার ওই চক্রের হাতে তুলে দেন তিনি। ডলার হাতে পাওয়ার পর সমপরিমাণ টাকা দিতে গড়িমসি করে ওই চক্র। প্রথমেই তিন হাজার টাকা কম দিতে চায়। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে তিনি তার ডলার ফেরত চান। প্রতারকচক্র ডলার ফেরত দিয়ে দ্রুত কেটে পড়ে। আশরাফ হোসেন ডলার গুনে দেখেন তারা দুই হাজার ডলারের স্থলে এক হাজার ডলার ফেরত দিয়েছে। এক হাজার ডলার হারিয়ে বিমর্ষ হয়ে পড়েন আশরাফ হোসেন। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, কোনো কিছু বুঝার আগেই প্রতারকচক্র তার কাছ থেকে ডলার হাতিয়ে নিয়ে যায়। অতি প্রয়োজন মেটাতে তিনি ডলার বিনিময় করতে এসেছিলেন। এভাবে প্রতিনিয়ত সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা হাতিয়ে নিচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, সংঘবদ্ধ এ চক্রটি খুবই শক্তিশালী। প্রায়ই সাধারণ গ্রাহকের বৈদেশিক মুদ্রা খোয়া যাওয়ার খবর শোনা যায়। কিন্তু বরাবরই তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। ওই কর্মকর্তা জানান, প্রতারকচক্রটিকে বেশি দেখা যায় মতিঝিল জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস শাখা থেকে অ্যালিকো ভবন পর্যন্ত। এ ছাড়া, বঙ্গভবনের দেয়াল ঘেঁষে সোনালী ব্যাংকের ওয়েজ আর্নার্স শাখা এলাকায় তাদের বিচরণ বেশি। তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করতে আসে। প্রতারকচক্রটি প্রথমে বাজার দরের চেয়ে বেশি মূল্য সেধে বৈদেশিক মুদ্রা নিজেদের দখলে নিয়ে যায়। এরপর নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে টালবাহানা করে। এরই ফাঁকে একটি গ্রুপ ডলার নিয়ে কেটে পড়ে। কখনো সমপরিমাণ টাকা দিলেও তার মধ্যে কয়েক হাজার টাকার জাল নোট ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এভাবেই দীর্ঘ দিন ধরে এ চক্রটি সাধারণের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। অপর এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, এ চক্রটি খুবই শক্তিশালী। কিছু বললে পাছে কোনো ঝামেলা করে এ শঙ্কায় থাকতে হয়। তিনি জানান, এর আগে তারা সাধারণত রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে ডলার কেনাবেচা করতো, এখন হরহামেশাই ব্যাংকের শাখায় ঢুকে পড়ছে। গ্রাহকের সাথে লেনদেন করছে অবৈধভাবে। বৈদেশিক মুদ্রা নীতিমালা অনুযায়ী এভাবে বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ব্যাংকের বাইরে বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক লাইসেন্স দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে একটি গ্রুপ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, এভাবে খোলাখুলি বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেউ ব্যাংকের বাইরে বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স প্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের বাইরে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করলে তা হবে দেশের স্বার্থবিরোধী কাজ। তিনি জনসাধারণকে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করার জন্য পরামর্শ দেন। এতে তুলনামূলক কম মূল্য পেলেও গ্রাহকদের কোনো ঝুঁকি থাকবে না।
Headlines from most popular newspapers of Bangladesh. বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকার সংবাদ শিরোনামগুলো এক নজরে দেখে নিন।
Wednesday, October 15, 2014
ব্যাংকপাড়ায় ডলার প্রতারকচক্র বেপরোয়া:নয়াদিগন্ত
এখন ব্যাংকের শাখায় ঢুকে পড়ছে। সংঘবদ্ধ এ চক্রের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন স্বয়ং ব্যাংক কর্মকর্তারাও। গতকাল কেরানীগঞ্জ থেকে আশরাফ হোসেন নামক এক ব্যবসায়ী দুই হাজার ডলার বিক্রি করতে এসেছিলেন। দিলকুশায় আসতেই বিভিন্ন ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি গ্রুপ ডলার কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করে। আশরাফ হোসেন প্রতি ডলারের মূল্য ৮০ টাকা চাইলে প্রতারকচক্র প্রতি ডলার ৭৯ টাকায় কিনতে চায়। ৭৯ টাকা দরে ডলার বিক্রি করতে সম্মত হলে প্রতারকচক্র আশরাফ হোসেনের কাছে ডলার চায়। প্রথমে ইতস্ত করলেও পরে ডলার ওই চক্রের হাতে তুলে দেন তিনি। ডলার হাতে পাওয়ার পর সমপরিমাণ টাকা দিতে গড়িমসি করে ওই চক্র। প্রথমেই তিন হাজার টাকা কম দিতে চায়। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে তিনি তার ডলার ফেরত চান। প্রতারকচক্র ডলার ফেরত দিয়ে দ্রুত কেটে পড়ে। আশরাফ হোসেন ডলার গুনে দেখেন তারা দুই হাজার ডলারের স্থলে এক হাজার ডলার ফেরত দিয়েছে। এক হাজার ডলার হারিয়ে বিমর্ষ হয়ে পড়েন আশরাফ হোসেন। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, কোনো কিছু বুঝার আগেই প্রতারকচক্র তার কাছ থেকে ডলার হাতিয়ে নিয়ে যায়। অতি প্রয়োজন মেটাতে তিনি ডলার বিনিময় করতে এসেছিলেন। এভাবে প্রতিনিয়ত সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা হাতিয়ে নিচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, সংঘবদ্ধ এ চক্রটি খুবই শক্তিশালী। প্রায়ই সাধারণ গ্রাহকের বৈদেশিক মুদ্রা খোয়া যাওয়ার খবর শোনা যায়। কিন্তু বরাবরই তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। ওই কর্মকর্তা জানান, প্রতারকচক্রটিকে বেশি দেখা যায় মতিঝিল জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস শাখা থেকে অ্যালিকো ভবন পর্যন্ত। এ ছাড়া, বঙ্গভবনের দেয়াল ঘেঁষে সোনালী ব্যাংকের ওয়েজ আর্নার্স শাখা এলাকায় তাদের বিচরণ বেশি। তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করতে আসে। প্রতারকচক্রটি প্রথমে বাজার দরের চেয়ে বেশি মূল্য সেধে বৈদেশিক মুদ্রা নিজেদের দখলে নিয়ে যায়। এরপর নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে টালবাহানা করে। এরই ফাঁকে একটি গ্রুপ ডলার নিয়ে কেটে পড়ে। কখনো সমপরিমাণ টাকা দিলেও তার মধ্যে কয়েক হাজার টাকার জাল নোট ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এভাবেই দীর্ঘ দিন ধরে এ চক্রটি সাধারণের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। অপর এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, এ চক্রটি খুবই শক্তিশালী। কিছু বললে পাছে কোনো ঝামেলা করে এ শঙ্কায় থাকতে হয়। তিনি জানান, এর আগে তারা সাধারণত রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে ডলার কেনাবেচা করতো, এখন হরহামেশাই ব্যাংকের শাখায় ঢুকে পড়ছে। গ্রাহকের সাথে লেনদেন করছে অবৈধভাবে। বৈদেশিক মুদ্রা নীতিমালা অনুযায়ী এভাবে বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ব্যাংকের বাইরে বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক লাইসেন্স দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে একটি গ্রুপ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, এভাবে খোলাখুলি বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেউ ব্যাংকের বাইরে বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স প্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের বাইরে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করলে তা হবে দেশের স্বার্থবিরোধী কাজ। তিনি জনসাধারণকে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করার জন্য পরামর্শ দেন। এতে তুলনামূলক কম মূল্য পেলেও গ্রাহকদের কোনো ঝুঁকি থাকবে না।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment