Wednesday, October 15, 2014

ইন-সিটো বাতিলে শিক্ষা ক্যাডারে তোলপাড়:নয়াদিগন্ত

শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ইন-সিটো (পদোন্নতির পরও একই পদে কর্মরত) বাতিল করে শূন্যপদে পদায়ন করায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এবার সংযুক্ত হিসেবে কর্মরত (পদ শূন্য না থাকার পরও অতিরিক্ত হিসেবে) পদায়নকৃত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সংযুক্তির আদেশ বাতিল করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র  জানায়, সংযুক্ত শিক্ষকদের তালিকা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট  উচ্চপদের কর্মকর্তারা পর্যালোচনা করেছেন। তাদের ব্যাপারে যে
কোনো দিন সিদ্ধান্ত ঘোষণা হতে যাচ্ছে। এ দিকে, গতকাল রাত সাড়ে ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত  অধ্যাপক পদে ৩৬৭ জন পদোন্নতিপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপকের প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। গতকাল দিনভর শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা ইন-সিটো বাতিল হওয়ার কারণ জানার চেষ্টা করেন। অনেকে নিজের বদলি আদেশ বাতিলের জন্য তদবির করতে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত হাজির হন।  শিক্ষা ক্যাডারের শতাধিক শিক্ষক বদলি ও পদোন্নতির ব্যাপারে জানার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ থেকে এমন কি ঢাকার পাশের জেলাগুলো থেকেও সচিবালয়ে আসেন। মুন্সীগঞ্জের হরগঙ্গা সরকারি কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষিকা (সহকারী অধ্যাপক) বেলা পৌনে ৩টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার কক্ষে জানার চেষ্টা করেন পদোন্নতি কবে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সহকারী অধ্যাপক নয়া দিগন্তকে বলেন, কলেজের কাস শেষ করেই প্রায় ৩ ঘণ্টায়  বাসে ঢাকায় এসেছেন খোঁজ নিতে। গতকাল দিনভর এসব শতাধিক শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষক-কর্মকর্তাকে সচিবালয়ের ২০ তলা ভবনের ১৮ ও ১৭ তলায় অবস্থিত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে ধরনা দিতে দেখা গেছে বদলি বাতিল আর পদোন্নতির খবর জানতে। এ দিকে, মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির (ডিপিসির) সভায় খসড়া যে গ্রেডেশন তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছিল তারই ভিত্তিতে অধ্যাপক পদে ৩৬৭ জন পদোন্নতিপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপকের পদোন্নতি হয়েছে। একইভাবে ওই  গ্রেডেশন তালিকার আলোকেই পরবর্তী পদোন্নতিগুলো হবে। তবে, তা এ সপ্তাহে আর হচ্ছে না। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বর্তমানে নিজ জেলা সিলেট সফরে রয়েছেন। তিনি আগামী শুক্রবার ঢাকায় ফিরবেন এবং রোববার অফিস করবেন। সেদিন পরবর্তী পদোন্নতির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে। পরবর্তী পদোন্নতির জন্য ডিপিসির সদস্যরা গতকালও মন্ত্রণালয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন। এ বৈঠকে সংযুক্ত শিক্ষকদের তালিকা তৈরি  করা হয়েছে। জানা গেছে, শুধু রাজধানীর ১৩টি সরকারি কলেজে প্রায় ৬০০ জনের মতো শিক্ষক সংযুক্ত হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ঢাকা কলেজেই কোনো কোনো বিভাগে ১৬ জনের মতো শিক্ষক অতিরিক্ত হিসেবে সংযুক্ত রয়েছেন। অথচ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে জেলা শহরে অবস্থিত সরকারি কলেজে শিক্ষকের অভাবে নিয়মিত পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। জানা গেছে, ইন-সিটো (পদোন্নতির পরও একই পদে কর্মরত) বাতিলের পর এবার সংযুক্ত শিক্ষকদের আদেশও বাতিল হতে যাচ্ছে। সংযুক্তি বাতিলের পর এসব শিক্ষককে দেশের বিভিন্ন স্থানে পদায়ন করা হবে। এ সংক্রান্ত আদেশ দু-এক দিনের মধ্যে অথবা আগামী সপ্তাহে-ই জারি হতে পারে। তবে, স্বামী বা স্ত্রী ঢাকায় কর্মরত থাকলে ওইসব শিক্ষক-কর্মকর্তার কেউ কেউ প্রমার্জনাও পেতে পারেন। কারণ স্বামী বা স্ত্রী যে কেউ ঢাকায় বা যেকোনো স্টেশনে থাকলে তাদের একসাথে রাখার একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে মন্ত্রণালয়ের। গত ২৮ সেপ্টেম্বরের প্রাক-ডিপিসির সভায় সহকারী অধ্যাপক পদে দুই হাজার ২৩৩ জন, সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে এক হাজার ৫২২ জন এবং সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য ৭০১ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে । গত পরশু অধ্যাপক পদে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে সহযোগী অধ্যাপকদের ক্ষোভ কিছুটা প্রশমন হয়েছে। এ পদোন্নতি নিয়ে তেমন কোনো হতাশা নেই শিক্ষকদের মধ্যে। গত পরশু ৩৬৭ সহযোগী অধ্যাপককে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।  তাদের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারির অপেক্ষায় রয়েছে। মাউশি জানায়, দেশের ৩০৬টি সরকারি কলেজসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ক্যাডারে শিক্ষকের পদ রয়েছে ১৫ হাজার ১১২টি। এর মধ্যে বর্তমানে শূন্য রয়েছে প্রায় তিন হাজার পদ। এর প্রায় সবগুলোই ঢাকার বাইরের উপজেলা ও মফস্বলের কলেজে।

No comments:

Post a Comment